Ajker Patrika

বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

নওগাঁ প্রতিনিধি
Thumbnail image

নওগাঁয় ৩০ মিনিটের কালবৈশাখীর তাণ্ডবে বেশ কয়েকটি এলাকায় আমবাগান এবং ধানখেতের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। কিছু এলাকায় পানিতে ডুবে গেছে পাকা বোরো ধান। এ অবস্থায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বদলগাছী আবহাওয়া কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নওগাঁর বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৮০ কিলোমিটার।

কৃষকেরা বলছেন, হঠাৎ কালবৈশাখীর তাণ্ডবে আমবাগানের প্রায় ১০-১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। এ ছাড়া কদিন পর কাটা যাবে এমন ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়ে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, তারা এখনো ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে পারেনি।

গতকাল শনিবার সকালে জেলার পোরশা, পত্নীতলা, সাপাহার, মধইলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাগানে মাটিতে পড়ে আছে ঝরে পড়া আম। ফেটে নষ্ট হয়েছে বেশির ভাগ আম। কোনো কোনো বাগানে আমগাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া জেলার প্রায় বেশির ভাগ মাঠেই পাকা, আধা পাকা বোরো ধান বাতাসের কারণে মাটিতে নুয়ে পড়েছে। নিচু জমিগুলো পানি জমে ধান ডুবে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানা গেছে, জেলায় এ বছর ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। ৫ হাজার ২০০ আম চাষির প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বাগান রয়েছে। এ বছর প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৫ মেট্রিক টন। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ আম উৎপাদন হয় পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলা উপজেলায়।

সারাইগাছী এলাকার আমচাষি সাইফুর রহমান বলেন, ৩০ বিঘা জমির ওপর তাঁর দুটি বাগান রয়েছে। ঝড়ে বাগানের দুই হাজার গাছের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ আম পড়ে গেছে। বেশ কিছু গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে।

এ দিকে ঝড়ে আম ছাড়াও বোরো ধানের খেতের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে ধানগাছ হেলে পড়ায় এবং জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ধান চিটা হয়ে যাওয়া এবং পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। এতে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

কৃষি বিভাগ জানায়, নওগাঁয় এবার ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন।

পোরশার কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, পোরশায় এবার ১০ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। গত রাতে ঝড়-বৃষ্টিতে আমের বেশ ক্ষতি হয়ে গেল। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা যায়নি, তবে কিছু বাগান পরিদর্শন করে ধারণা হচ্ছে, বড় আম গাছের প্রায় ৬ থেকে ৭ শতাংশ আম পড়ে গেছে। আর ছোট গাছের প্রায় ২ থেকে ৩ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, গত রাতের কালবৈশাখীর তাণ্ডবে নওগাঁয় আম ও ধানের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। নওগাঁর ৭০ ভাগই বাগানই আম্রপালি জাতের আম চাষ করা হয়েছে। আম্রপালি গাছ আকারে ছোট হওয়ায় ঝড়ে এসব গাছের আম কম পড়েছে। তবে খিরসাপাতি, ফজলি ও গোপালভোগ আমের গাছ বড় হওয়ায় ওই সব গাছের আম বেশি পড়েছে।  তিনি আরও বলেন, ঝড়ে ধানের গাছ হেলে পড়ায় এবং জমিতে পানি জমে থাকায় ধানের উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হতে পারে। খেতের ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেলেই কৃষকদের ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত