Ajker Patrika

বাড়ছে সরকারি ঋণ, কমছে তারল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০১: ০৫
বাড়ছে সরকারি ঋণ, কমছে তারল্য

অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যমূল্য বেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে মানুষ ব্যাংকে আমানত রাখার চেয়ে নগদ টাকা হাতে রাখার দিকে ঝুঁকছেন। অনেকে সঞ্চয়ের অর্থ ভাঙিয়ে বাড়তি ব্যয়ের চাহিদা মেটাচ্ছেন। পাশাপাশি জ্বালানিসহ অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের আমদানি ব্যয় পরিশোধে সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্র ও ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে অর্থ তুলে নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত তিন মাসে ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য কমেছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আগস্ট মাস শেষে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। গত জুলাইয়ে তা ছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। তার আগের মাসে উদ্বৃত্ত ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকের তারল্য কমেছে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। একইভাবে গত বছরের আগস্ট শেষে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে তারল্য কমেছে ৫৬ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘গত জুলাই মাসে আমানতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ শতাংশ। ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ শতাংশেরও বেশি। ঋণের সুদহার কম হওয়ায় অনেকেই সহজে ঋণ নিচ্ছেন। এ ছাড়া ডলার বিক্রির মাধ্যমে বাজার থেকে প্রচুর টাকা তুলে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার সরকারি ঋণও বেড়েছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত তারল্য কমেছে।’

বাংলাদেশের ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের আগস্টে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর চলতি বছরের জুলাই মাসে মোট চাহিদা আমানতের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে আগস্ট শেষে চাহিদা আমানতের পরিমাণ কমে ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানায়, বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৪০০ কোটি ডলারের বেশি বিক্রি করে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে গত আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গত ১২ বছরে সর্বোচ্চ। গত আগস্টের প্রথম সপ্তাহে পেট্রল, অকটেন, ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানি তেলের দাম সাড়ে ৪২ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের ব্যাংক খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। এর এক মাসে আগে অর্থাৎ গত আগস্ট পর্যন্ত এ ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৭ হাজার ৫২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাত থেকে ১৫ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পরিচালক নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, আয়ের তুলনায় ব্যয় বাড়লে মানুষের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা কমে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক মূল্যস্ফীতির চাপে আশানুরূপ হারে আমানত বাড়ছে না। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির সময়ে ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের কথা ভেবে মানুষ এখন ব্যাংকে টাকা না রেখে হাতে নগদ অর্থ রাখতে চাইছেন। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেঁধে দেওয়ায় ব্যাংকগুলোও বেশি সুদের হারে আমানত রাখতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত