Ajker Patrika

মাল্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন তাঁদের

টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি
Thumbnail image

মাল্টা চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বেকার যুবকেরা। উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের ব্যবসায়ী আনিসুল হক বাদল পতিত জমিতে মাল্টা বাগান করে সফল হয়েছেন। তাঁকে দেখে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ২৫ বেকার যুবক ছোট-বড় মাল্টা বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছেন। লাভজনক মাল্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

মাল্টাচাষি আনিসুল হক বাদল বলেন, `আমি ব্যবসা করি। বাড়ির পাশের পতিত ৫২ শতাংশ জমিতে তিন বছর আগে উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় একটি মাল্টা বাগান করি। এই বাগানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ করেছি। আমার বাগানে ৩৫০টি মাল্টাগাছ আছে।

বাগানের পেছনে আমার তিন বছরে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এই বছর মাল্টা বাগানে বাম্পার ফলন পেয়েছি। এই মাল্টা গোপালগঞ্জ ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছি। আশা করছি এই বছর ১০-১২ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারব। প্রতিদিন টুঙ্গিপাড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ আমার মাল্টা বাগান পরিদর্শনে আসছেন। অনেকে মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। টুঙ্গিপাড়ার অনেকে আমার দেখাদেখি মাল্টা বাগান করেছেন।’

পাটগাতী গ্রামের রমজান সরদার বলেন, `গিমাডাঙ্গা গ্রামের আনিসুল হক বাদল মাল্টা চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তাই ভবিষ্যতে লাভজনক মাল্টা বাগান করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমি এক একর জমিতে মাল্টার চাষ করব। সে ব্যাপারে আমি ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়েছি।’

গোপালপুর গ্রামের সমীর বিশ্বাস বলেন, `মাল্টা উচ্চমূল্যের ফসল। বাজারে এক কেজি মাল্টা ৭০-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কিন্তু ঢ্যাঁড়স, পটোল, শসা কিংবা অন্য সবজি উৎপাদন করে গড়ে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হয়। মাল্টা পাইকারি ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। ওইসব সবজির চেয়ে প্রতিকেজি মাল্টা আড়াই থেকে তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি করা যায়। তাই আমরা মাল্টা চাষে ঝুঁকেছি।’

মিত্রডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রাহুল কীর্ত্তণীয়া বলেন, `কৃষিকাজ করে আমরা লাভের টাকা ঘরে তুলতে চাই। আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাব। সেই সঙ্গে দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করব। এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই আমরা মাল্টাসহ উচ্চমূল্যের ফসল চাষাবাদ করে যাচ্ছি। এতে আমাদের ভালো আয় হচ্ছে। সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।’

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, `কৃষি বিভাগের গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আমরা আনিসুল হক বাদলকে মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করি। এই প্রকল্প থেকে আমরা বাদলকে মাল্টার চারা, জৈব সার, ডিএপি সার, এমওপি সার, জিপসাম ও জিংক সার বিনা মূল্যে দিয়েছি।

আমাদের সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শে তিনি মাল্টা বাগান করেন। তিন বছর পর তাঁর মাল্টা বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি এখন এলাকার সফল মাল্টাচাষি। তাঁর দেখাদেখি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ২৫ বেকার যুবক ছোট-বড় মাল্টা বাগান করেছেন। লাভজনক মাল্টা চাষের মাধ্যমে বেকার যুবকেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছেন। এখানে সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান।’

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ভবিষ্যতে টুঙ্গিপাড়ায় উৎপাদিত মাল্টা দিয়েই এই উপজেলার মাল্টার চাহিদা পূরণ করা হবে। বাড়তি মাল্টা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত