Ajker Patrika

দুর্নীতি আর দুর্নীতি

সম্পাদকীয়
দুর্নীতি আর দুর্নীতি

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে ঘটা দুর্নীতি নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে আজকের পত্রিকায়। এ ধরনের খবর পড়ার পর প্রথমেই যে আক্ষেপটা মন ছেয়ে যায় তা হলো, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ বিরানায়।’ শামসুর রাহমান এর পরেই লিখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ, হায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়, বৃথা যায়।’

বহুভাবেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বৃথা যায়। মুক্তিযুদ্ধের মূল যে শক্তি, তাকেই তো নষ্ট করা হয়েছে প্রতিনিয়ত। মূল্যবোধ, সততা, দক্ষতাকে মূল্যায়ন করা হয়নি; বরং অর্থলিপ্সু, অসৎ ও অদক্ষ মানুষেরা ভিড় করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় এবং তারাই লুটেপুটে খাওয়ার পথ তৈরি করেছে। প্রশাসনে এই অস্থিরতা এক দিনের সৃষ্টি নয়। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নিজ স্বার্থরক্ষা এবং লোভের কাছে নিজেকে সমর্পিত করার মধ্যেই এই কর্মতৎপরতার উৎস খুঁজে পাওয়া যাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের যে পরিকল্পনা করেছেন, তাতে আন্তরিকতার কমতি নেই। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা-ও অপ্রতুল নয়। পরিকল্পিত পথে এগোলে অর্থের সাশ্রয় যেমন হবে, তেমনি ডিজিটাল দক্ষ কর্মীও গড়ে উঠবে। তাতে সরকারি কাজকর্মে আসবে গতিশীলতা, ঘুষ-দুর্নীতি কমবে। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আর বাস্তব অবস্থা দুই রকম। মাউশির এই চুরি-বাটপারির ঘটনা দিয়েই তা বোঝা যায়।

কী করেছে মাউশি? আইটিসির প্রশিক্ষণই এখানে মোদ্দাকথা। ‘আইসিটির মাধ্যমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার প্রচলন’ হচ্ছে প্রকল্পটির নাম। বোঝাই যাচ্ছে, কম্পিউটার যুগে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যেন আধুনিক মাধ্যম ব্যবহার করে শিক্ষা লাভ করতে পারে, তারই পথ সুগম করতে শিক্ষকদের জন্য এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য ১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। দেশপ্রেমী মানুষ এ রকম একটি বাজেট পেলে সাশ্রয়ী হওয়ার চেষ্টা করে। জাপানের প্রকল্পগুলো নিয়ে এ রকম খবর আমরা শুনতে পাই। প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে কম টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাকি টাকা ফেরত দেয় তারা। আর আমাদের দেশে বহু ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয় না, ব্যয় বাড়িয়ে দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি করা হয়।

মাউশিতে যাঁরা এই প্রকল্পের নামে টাকাপয়সা আত্মসাৎ করেছেন, তাঁরা ‘ভুলে’ কাজটা করেননি। রীতিমতো বুঝে-শুনে নিজের পকেট ভরার জন্য পরস্পর যোগসাজশেই করেছেন। একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কক্ষকে এক একটি আলাদা ভেন্যু হিসেবে দেখানো, অনুপস্থিত ব্যক্তির সম্মানী লাভ, ইন্টারনেট-সংযোগ নেই, অথচ ইন্টারনেটের জন্য বিল আদায়—এগুলো অনিয়মের কয়েকটি উদাহরণমাত্র। এই অসৎ কর্মকর্তারা কঠোর সাজার সম্মুখীন হন না বলেই পরবর্তীজন এসেও টাকার পাহাড় বানাতে পারেন। এই তো দেখতে হচ্ছে দিনের পর দিন! একটা নৈতিক পরিবর্তন না এলে এই ‘ঐতিহ্য’ থেকে বের হওয়া যাবে না। প্রশ্ন হলো, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত