Ajker Patrika

বেড়িবাঁধ মেরামতে অনিয়ম

কামাল হোসেন, কয়রা
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২১, ১৯: ৪৮
বেড়িবাঁধ মেরামতে অনিয়ম

খুলনার কয়রায় বাঁধ মেরামতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মূল ঠিকাদার তার প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন করতে অন্যের কাছে দেড় কোটি টাকায় হাতবদল করেছেন। এর ফলে প্রায় ২ কোটি টাকা মেরামত কাজের বাইরে চলে যাচ্ছে। ঠিকাদারের এ হাতবদলের ফলে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। ওমর ফারুক নামে স্থানীয় একজন শ্রমিক সরদার এ কাজটি কিনে নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৪ / ১ নম্বর পোল্ডারে কয়রা উপজেলার খাসিটানা ও গাতিরঘেরি এলাকার ২ হাজার ১০০ মিটার বাঁধ মেরামতের জন্য সোয়া ৪ কোটি টাকা বরাদ্দে দরপত্র আহ্বান করা হয়। চলতি বছরের ১৩ জুন শতকরা ২০ ভাগ কমমূল্যে ৩ কোটি ৩০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে মেসার্স আরাধনা এন্টারপ্রাইজ নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার পর তারা প্রথমে সাতক্ষীরার আব্দুস সবুর নামে একজন প্রভাবশালী ঠিকাদারের কাছে ৩ কোটি টাকায় কাজটি বিক্রি করেন।

ঠিকাদার আব্দুস সবুর বিল্লাল হোসেন নামে এক শ্রমিক সরদারকে ২ কোটি টাকা চুক্তিতে কাজের দায়িত্ব দেন। তিনি বাঁধের দুই পাশে গর্ত করে মাঝখানে বালু ভরাট করার চেষ্টা করলে স্থানীয়দের বাঁধার মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে ওমর ফারুক নামে স্থানীয় এক শ্রমিক সরদারের কাছে দেড় কোটি টাকায় কাজ বিক্রি করেন বিল্লাল। বর্তমানে ওমর ফারুক সেখানে শ্রমিক দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, প্রকল্পের গাতিরঘেরি এলাকার ভাঙনের পাশের শাকবাড়িয়া নদী থেকে খননযন্ত্রের মাধ্যমে বালু তুলে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে শ্রমিকেরা বস্তা ভরে দু’পাশ থেকে তা ভাঙনে ফেলছেন। এর একটু দুরে স্কেভেটরের মাধ্যমে বাঁধের কাছে মাটি কেটে উঁচু করার চেষ্টা চলছে। ভাঙনের কাছাকাছি নদী থেকে বালু তোলায় একদিকে যেমন ঝুঁকি বাড়ছে তেমনি বাঁধের ঢালের মাটি কেটে উচ্চতা বাড়ানোর চেষ্টায় স্থায়িত্ব সংকট দেখা দিয়েছে।

সেখানে উপস্থিত শ্রমিক সরদার ওমর ফারুকের কাছে কাজের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ করেন। পরে মুঠোফোনে বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘কন্ট্রাক্টর সবুর সাহেব কাজটি আমাকে দিয়েছেন। তার সঙ্গে আমার দুই কোটি টাকায় চুক্তি হয়েছিল। এ মুহূর্তে বিশেষ অসুবিধার কারণে কাজটি ওমর ফারুকের দায়িত্বে দিয়েছি।’

এদিকে কাজের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরাধনা এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহবুবুল হক রিপন বলেন, ‘কাজটি আমার লাইসেন্সে হলেও সাতক্ষীরার সবুর সাহেব কাজটি করছেন।’ জানতে চাইলে ঠিকাদার আব্দুস সবুর বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আমাকে কাজটি করার জন্য অনুরোধ করা হয়। তাদের অনুরোধ রক্ষায় লোকজন দিয়ে কাজটি করিয়ে নিচ্ছি।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, এভাবে প্রকল্প হাত বদল হলে কাজের মান কখনো ভাল হতে পারে না। যতটুকু জানি মূল ঠিকাদারের হাত ঘুরে চতুর্থ ব্যক্তি কাজটি করছেন। কাজ বিক্রির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পাউবোর লোক রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের বরাদ্দ লুটপাটে তারা যোগসাজশে নিম্নমানের কাজ করছেন।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রকল্পটি মূলত জাইকার, আমরা তদারকির দায়িত্বে আছি মাত্র। তবে কাজ খারাপ হলে আমরা ঠিকাদারের বিল আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত