Ajker Patrika

উচ্চ রক্তচাপের রোগী বাড়ছে গ্রামাঞ্চলেও

আজাদুল আদনান, ঢাকা
আপডেট : ১৭ মে ২০২২, ১০: ০৪
উচ্চ রক্তচাপের রোগী  বাড়ছে গ্রামাঞ্চলেও

তিন বছরের বেশি সময় ধরে প্রচণ্ড মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরানোর সমস্যায় ভুগছেন মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার গোয়ালখালীর বাসিন্দা রেজাউল করিম। এ সমস্যার পর থেকে অল্পতেই রেগে অস্থির হয়ে ওঠেন তিনি। সম্প্রতি হঠাৎ করেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হলে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আনা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব এই ব্যক্তিকে। ভর্তির পর চিকিৎসক জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন।

শুধু রেজাউল করিম নন, দেশের অসংখ্য মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তাঁদের বড় অংশই, তা জানেন না। উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত না হওয়ায় নীরবে অসংক্রামক রোগ বাসা বাঁধছে তাঁদের শরীরে। আর যখন জানতে পারেন, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।

চিকিৎসকেরা বলছেন, অন্যান্য রোগের নানা উপসর্গ থাকলেও উচ্চ রক্তচাপের সাধারণ কোনো লক্ষণ নেই। এমনকি রোগীর কোনো শারীরিক কষ্টও থাকে না। তাই এ জন্য এই রোগে কেউ ভুগছেন কি না, সেটি নিজে থেকে বোঝা অনেক কঠিন।

হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালেক বলেন, উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে অন্যান্য অনেক অসংক্রামক রোগের সম্পর্ক রয়েছে। বড় বড় হাসপাতাল করে কিডনি ও হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা যতই বাড়ানো হোক না কেন, যদি প্রতিরোধ ব্যবস্থায় জোর দেওয়া না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে সামনে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য বলছে, দেশে প্রতি চারজনে একজন মানুষ উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে ভুগছেন। সেই হিসাবে বাংলাদেশে এ রোগের ভুক্তভোগী ৩ কোটি ২ লাখের মতো। এসব রোগীর ৬৮ দশমিক ১০ শতাংশের কোনো উপসর্গ নেই। বাকিদের মধ্যে একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়ে কিংবা অন্য কোনো রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের বেশির ভাগের বয়স চল্লিশের ঊর্ধ্বে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য—‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন।’

নগরায়ণের ফলে আগে শহরাঞ্চলে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ বেশি থাকলেও এখন গ্রামাঞ্চলে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে তা। শহরে স্ক্রিনিংয়ের (শনাক্তকরণ) সহজ ব্যবস্থা থাকলেও প্রান্তিক পর্যায়ে সেটির তীব্র অভাব। প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ইউনিয়ন সাব সেন্টার ও কমিউনিটি ক্লিনিক হলেও সিংহভাগেই নেই কোনো রক্তচাপের মেশিন। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিংবা জেলা সদর হাসপাতালই ভরসা গ্রামের মানুষের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলছেন, ‘আমরা স্থানীয় পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্তকরণের পর্যায়ে যাইনি। আমরা চেষ্টা করছি, সারা দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্ক্রিনিং করার। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় রক্তচাপ মেশিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা প্রাথমিকভাবে দেখছেন এবং উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে সুগার পেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনসিডি কর্নারে পাঠাচ্ছেন। সেখানে পুনরায় পরীক্ষা করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, চলতি বছরের বিগত ৪ মাসে ৮৮ হাজার ২৬৯ জন উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে নিবন্ধন করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু এপ্রিলে প্রায় ৪ হাজার। এসব রোগীর মধ্যে ৫৭ শতাংশের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, মাদক ও ধূমপান থেকে বিরত থাকা, অতিরিক্ত লবণের ব্যবহার পরিহারের পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, আগামী দশকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে প্রয়োজন সুস্থ ও দক্ষ জনশক্তি। আর সেটি করতে হলে অসংক্রামক রোগ থামাতে হবে। একজন উচ্চ রক্তচাপের রোগীর পেছনে বাজেটের বড় একটি অংশ চলে যায়। কাজেই বাজেট বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষের সচেতনতাও জরুরি। কেননা, যত বেশি নগরায়ণ হবে এ রোগের প্রকোপ ততটাই বাড়বে।

বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার এক আলোচনা সভার আয়োজন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেখানে হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তফা জামান বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থায় নানা সীমাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে। সবখানে একই চিকিৎসা দিতে হবে। সরকার তিনটি ওষুধ বিনামূল্যে দিচ্ছে। এটি আরও বাড়িয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে ওষুধ সরবরাহ করতে হবে। দেশের হাসপাতালগুলোয় উচ্চ রক্তচাপের যে মেশিনগুলো রয়েছে বেশির ভাগই কাজ করে না। উপসর্গ না থাকলেও ওষুধ খাচ্ছে রোগীরা, এতে করে জটিলতা বাড়ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত