Ajker Patrika

যোগাযোগের নতুন যুগে দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯: ২৯
যোগাযোগের নতুন যুগে দেশ

সব প্রস্তুতি শেষ; এখন ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে ছুটে মাত্র ১০ মিনিটে রাজধানীর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পৌঁছার অভিজ্ঞতা অর্জনের অপেক্ষা। প্রতিনিয়ত যানজটে নাকাল হওয়া রাজধানীবাসীর কাছে সে এক বিরল অভিজ্ঞতাই হবে। আর সে অভিজ্ঞতা পূরণ করবে দেশবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল। সবুজ পতাকা দুলিয়ে আজ বুধবার সকালে মেট্রোরেলের যাত্রার সংকেত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উত্তরা উত্তর স্টেশনে হবে এই আনুষ্ঠানিকতা।

মেট্রোরেলের উদ্বোধনী যাত্রায় সরকারপ্রধান অবতীর্ণ হবেন রেলওয়ে গার্ডের ভূমিকায়। তিনি নিজে টিকিট কেটে প্রথম যাত্রী হয়ে এ বৈদ্যুতিক ট্রেন উদ্বোধন করবেন।

গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, আজ বেলা ১১টায় উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। ধাপে ধাপে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২০০ জন আমন্ত্রিত অতিথিকে সঙ্গে নিয়ে মেট্রোরেলে চেপে তিনি আগারগাঁও প্রান্তে আসবেন।

অত্যাধুনিক এই গণপরিবহন চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশবাসীর এক বড় স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।  

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি-৬ শেষ হবে।

আপাতত বিরতিহীন: মেট্রোরেল আপাতত চলবে বিরতিহীনভাবে। ফলে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে সরাসরি আগারগাঁও পৌঁছতে সময় লাগবে ১০ মিনিট। পরবর্তী সময়ে পথে বিভিন্ন স্টেশনে থামলে ১৭ মিনিট লাগবে আগারগাঁও পৌঁছাতে। শুরুর দিকে সকাল আটটা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা চলাচল করবে। যাত্রীরা অভ্যস্ত হয়ে উঠলে ট্রেনের সংখ্যা ও ট্রিপের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

ফাইল ছবি

ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন: মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহন করবে। আর দিনে যাতায়াত করবে পাঁচ লাখ যাত্রী। থাকছে ২৪টি রেলকোচ। শুরুতে বগির সংখ্যা ছয়টি হলেও পরে তা আটটি করা হবে। একটি ট্রেনে ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী চলাচল করতে পারবে।

সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা: মেট্রোরেলের প্রতি কিলোমিটার ভাড়া ৫ টাকা। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া ৬০ টাকা। মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা। মেট্রোরেলের ভাড়া অনেক বেশি বলে বিভিন্ন সংগঠন দাবি করছে। এ বিষয়ে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সময়ে চালু হওয়া মেট্রোরেল হিসেবে ভাড়া সর্বনিম্ন নির্ধারণ করা হয়েছে।

টিকিট নগদ টাকায় কাটতে হবে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনলাইন, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা অন্য কোনো উপায়ে টিকিট কাটার সুযোগ শুরুতে থাকছে না। তবে পরবর্তী সময়ে সব ধরনের আধুনিক ব্যবস্থা চালু হবে।

কোনো যাত্রী নির্ধারিত গন্তব্যের অতিরিক্ত ভ্রমণ করলে তাকে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করে টিকিট নিয়ে ট্রেন থেকে নামতে হবে। এ জন্য প্রতিটি স্টেশনে থাকছে ভাড়তি ভাড়ায় আদায় কাউন্টার। দূরত্বের বেশি ভ্রমণ করলে যাত্রীকে জরিমানা গুনতে হবে ভাড়ার ১০ গুণ অথবা জেল খাটতে হবে। 

ভেন্ডিং মেশিন: প্রতিটি স্টেশনের উভয় পাশে ছয়টি ভেন্ডিং মেশিন থাকবে। সে মেশিনের সহায়তায় যেকোনো ব্যক্তি নিজস্ব গন্তব্যের টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। এ ছাড়া টিকিট বিক্রির জন্য স্টেশনের উভয় পাশে একটি করে কাউন্টার থাকবে। বুথের ভেতরে থাকা ব্যক্তির কাছে নাম-পিতার নাম, মোবাইল ফোন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে তাৎক্ষণিক এমআরটি পাস নেওয়া যাবে। সাধারণ যাত্রীরা যাতে সহজেই টিকিট কাটতে পারে, সে জন্য ভেন্ডিং মেশিনের পাশে প্রশিক্ষিত স্কাউট সদস্যরা থাকবেন।

ভাড়া লাগবে না মুক্তিযোদ্ধাদের: কর্মকর্তারা জানান, মেট্রোরেলে কোনো হাফ ভাড়া থাকছে না। তবে তিন ফুট পর্যন্ত উচ্চতার শিশুরা অভিভাবকের সঙ্গে বিনা ভাড়ায় চড়তে পারবে। এর বেশি উচ্চতা হলে পুরো ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধারা পরিচয়পত্র দেখিয়ে বিনা ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারবেন। 

১০ বছর মেয়াদি পাস: মেট্রোরেলে যাতায়াতের জন্য ১০ বছর মেয়াদি এমআরটি পাস দেওয়া হবে। এই পাস নিলে ১০ শতাংশ ছাড় মিলবে। একটি পাস নিতে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ব্যালান্স থাকতে হবে। একটি পাসের বিপরীতে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা রিচার্জ করার সুযোগ থাকছে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীরা ১৫ শতাংশ ছাড়ে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। এমআরটি পাস ছাড়া সিঙ্গেল টিকিট কাটা হলে ট্রেনের আয় বাড়বে বলে কেউ কেউ মনে করেন।

স্টেশনে নানা সুবিধা: মেট্রোরেলে ওঠানামায় থাকছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। প্রতিটি স্টেশনে থাকছে দুটি লিফট, দুটি এস্কেলেটর ও দুটি সিঁড়ি। প্রতিটি স্টেশনে একটি কক্ষে প্রাথমিক চিকিৎসার সব সরঞ্জাম থাকবে।  

প্রতিটি স্টেশনে একাধিক ডিজিটাল মনিটর থাকছে। তাতে ট্রেনের অবস্থান দেখা যাবে। স্টেশন হকার ও কুলিমুক্ত থাকবে।

যাত্রীদের স্টেশনে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিআরটিসি বিশেষ বাস চালু করছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিলের পথে ২০টি দ্বিতল বাস চলবে। হাউজ বিল্ডিং থেকে ১০টি দ্বিতল বাস চলবে উত্তরা উত্তর স্টেশন পর্যন্ত। 

যা করা যাবে না: ধূমপান করা যাবে না। বৃহদাকার ও ভারী মালপত্র, অস্ত্র, কোনো প্রাণী, বিপজ্জনক বস্তু বহন করা যাবে না। পানের পিক, থুতু, ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। প্ল্যাটফর্ম ও ট্রেনে খাবার গ্রহণ করা যাবে না। ফোনের স্পিকার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। 
 
এমআরটি পুলিশ: মেট্রোরেলের উড়াল পথ, স্টেশন, স্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গঠন করা হচ্ছে পুলিশের আলাদা বিশেষায়িত ইউনিট। এই বিশেষ ইউনিটটির নাম হতে যাচ্ছে ‘এমআরটি পুলিশ’। এমআরটি পুলিশ হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সার্বিক নিরাপত্তা দেবে।

জাপান সরকারের সহাতায় উত্তরা উত্তর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল তৈরি করতে ব্যয় হবে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।  

ফার্মগেট পর্যন্ত হলে ভালো হতো: নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মেট্রোরেল ক্ষুদ্র পরিসরে চালু করায় শুধু উত্তরা থেকে আগারগাঁওগামী মানুষের সুবিধা হবে। তবে এটি ফার্মগেট পর্যন্ত চালু করা গেলে বেশি মানুষ উপকৃত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত