Ajker Patrika

আশ্রয়ণের ঘরে কুকুর-শিয়াল

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ৩১
আশ্রয়ণের ঘরে কুকুর-শিয়াল

কেউবা বরাদ্দ নিয়ে অন্যের কাছে ভাড়া কিংবা বিক্রি করেছেন। আবার বরাদ্দপ্রাপ্ত অনেকেই না থাকায় ঘরগুলো এখন কুকুর-শিয়ালের আবাসস্থল। এমন চিত্র নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের খোর্দ্দ বোতলাগাড়ী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৈরি করা ঘরের।

অভিযোগ রয়েছে, যাঁরা সচ্ছল ও জমি আছে, তাঁদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নিয়ে না থাকা, ভাড়া কিংবা বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ এমনটি করে থাকেন, তবে অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, ২০১৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ আওতায় বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে খোর্দ্দ বোতলাগাড়ীতে আবাসনের ঘর তৈরি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মাধ্যমে প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের জন্য নির্মাণ করা হয় ১০৯টি আধা পাকা ও টিনশেড বাড়ি। একই বছর ইউনিয়নের ভূমিহীন ও দুস্থদের মধ্যে ঘরগুলো বরাদ্দ দেয় স্থানীয় প্রশাসন। তবে যাঁদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই বরাদ্দ পাওয়ার পর আশ্রয়ণের বাড়িতে ওঠেননি। এর মধ্যে আধা পাকা বাড়ির ১/৫ নম্বর নাসিমা বেগম, ৮/৩ নম্বর মো. বাবু, ১৫/২ নম্বর বুলবুল, ১১/১ নম্বর আব্বাছ আলী, ১১/৪ নম্বর ছকিনা বেগম। ২১ নম্বর টিনশেড বাড়ির হোসনে আরা ঢেপো, ৬ নম্বর আছিউল, ৭ নম্বর হাকিম, ১৯ নম্বর সেকেন্দার আলী ও ২৩ নম্বর মঞ্জু আরার নামে বরাদ্দ হয়। কিন্তু তাঁরা নিজেরা না থেকে ওই ঘরগুলো ভাড়া দিয়েছেন। অন্যদিকে যেসব বাড়ি বিক্রি হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে নূর ইসলামের বাড়ি নম্বর ৭/৩, আকলিমা নম্বর ১২/৫, জাহিদুল ইসলাম নম্বর ৩/৫ ও খলিল নম্বর ৯/২।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়ণের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আশ্রয়ণের ২১ নম্বর বাড়িটি বরাদ্দ পেয়েছিলেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হোসনে আরা ঢেপো নামের পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী। তবে তিনি সচ্ছল ও নিজস্ব জমি-বসতবাড়ি থাকায় আশ্রয়ণের বাড়িটিতে কখনো থাকেননি। বরাদ্দের দিন থেকে এটি পরিত্যক্ত থাকায় এর বিভিন্ন অংশে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে এখন শিয়াল-কুকুর বাস।’ প্রকল্পের আরও কয়েকটি বাড়ির অবস্থা প্রায় একই। বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে কেউ কেউ একদিনের জন্যও বাড়ির তালা খোলেননি। ফলে দীর্ঘদিন বাড়িগুলো পরিত্যক্ত থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ছরদ্দি মামুদ নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, এই ইউনিয়নে এখনো শতাধিক ভূমিহীন পরিবার বাড়ি না পেয়ে বিভিন্ন জনের জমিতে ঘর তুলে বা অন্যের বড়িতে আশ্রিত থাকছেন। অথচ অনেকেই আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ নিয়ে বাস না করে ভাড়া বা বিক্রি করেন। বরাদ্দকৃত এসব ঘর বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীন ও অসচ্ছলদের নামে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

প্রকল্পের ভাড়া বাড়িতে বসবাসকারী মোবারক হোসেন (৪২) জানান, তাঁর বাড়ি দিনাজপুরের রানীবন্দরে। গভীর রাত পর্যন্ত সৈয়দপুর শহরে তিনি রিকশা চালান। প্রতিদিন বাড়িতে যাতায়াতে তাঁর সমস্যা হতো। আশ্রয়ণে স্বল্প টাকায় ঘর ভাড়া পেয়েছেন। তাই স্ত্রী ও দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন সেখানেই থাকছেন।

বোতলাগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুন বলেন, ‘আমার জানামতে ইতিমধ্যে আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ নিয়ে যাঁরা থাকছেন না, ভাড়া কিংবা বিক্রি করেছেন, তাঁদের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। এরপরও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তাঁদের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত