Ajker Patrika

সম্পদ আহরণের জাদু-বাস্তবতা

সম্পাদকীয়
সম্পদ আহরণের জাদু-বাস্তবতা

আজিজ-বেনজীরের চাপে অপরাধের অন্য খবরগুলো সব তুচ্ছ হয়ে পড়েছে; বিশেষ করে বেনজীর আহমেদের ‘জমিপ্রীতি’র এত খবর আসছে যে অন্যদিকে চোখ ফেরানোই দায়। এ যেন এক জাদু-বাস্তবতা। অভিযোগগুলো যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে নির্ভয়ে বলে দেওয়া যায়, ক্ষমতায় থাকলে তার অপব্যবহার করে কী না করা যায়, তার সবচেয়ে ‘নির্ভরযোগ্য’ নজির হচ্ছেন বেনজীর আহমেদ। আফসোস, ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁদের এই সব অপকর্ম কারও চোখে পড়ে না। প্রশাসনিক ব্যবস্থার মধ্যে যে ঘাপলা রয়েছে, এ তারই প্রমাণ।

স্ত্রী চাকরি করেন না, তাঁর নিজস্ব আয়ের কোনো পথ নেই, তবু তাঁর নামে যখন সম্পদ যুক্ত হয়, তখন বুঝতে হবে, এ-ও এক জাদু-বাস্তবতা। জীবন-ঘনিষ্ঠ এই উপন্যাস লেখার জন্য গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের প্রয়োজন হয়নি। এই উপন্যাস লিখেছেন বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক উপব্যবস্থাপক আব্দুল হাই ভূঁইয়া ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান। পাঠক, খেয়াল করে দেখবেন, তাঁদের দুজনই ‘সাবেক’। ‘সাবেক’ হওয়ার আগপর্যন্ত কেন তাঁদের কর্মকাণ্ড কর্তৃপক্ষ বা দুদকের নজরে আসে না, সেটাও রহস্যময়। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো হয় অবসরে যাওয়ার পরে!

আমাদের নৈতিক জায়গাগুলো যে ধসে যাচ্ছে বা গেছে, তা বোঝা যায়, এই দুই সাবেক সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রীদের কথা ভাবলে।

কোত্থেকে এই কোটি টাকা এল এবং তাঁর নামে জমা হলো, সেটা কি তিনি বুঝতেও পারেননি? এই বিপুল পরিমাণ টাকার সম্পদ যে অবৈধ আয়ে গড়া, সে কথা কি স্ত্রী হিসেবে তিনি ধারণাও করতে পারেননি? আরও একটা প্রশ্ন জাগে মনে—একজন স্বামী কী করে তাঁর স্ত্রীকে নিজের অবৈধ সম্পদ অর্জনের পথ বাতলে দেন? তিনি যে একজন অপরাধী, সেটা যে স্ত্রীও জেনে যাচ্ছেন, এ বিষয়টিও কি তাঁকে বিন্দুমাত্র বিচলিত করে না?

কেন এমন হয়? বেনজীরের মতো বড় দাগে হয়তো তাঁরা সম্পদ লুট করতে পারেন না, কিন্তু এই প্রবণতা সরকারি চাকরির স্পর্শ পেলেই মনের মধ্যে গড়ে ওঠে কি না, সে প্রশ্নটি নিয়েও ভাবা দরকার। চুরি-ডাকাতি করেও সম্পদ অর্জন করা যায় এবং সেই সম্পদ রক্ষাও করা যায়—এমন কোনো বার্তা যদি সরকারি চাকরির অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়ায়, তাহলে সেখানে সৎ উপার্জনের চেয়ে উপরির ওপর নির্ভরতা বাড়বে, কিংবা যেকোনোভাবে টাকা কামানোর দিকে মন যাবেই। সরকারি অফিসের একজন পিয়ন কিংবা একজন গাড়িচালকের যখন এক বা একাধিক প্রাসাদসম বাড়ি গড়ে ওঠে, তখন বুঝতে হয়, ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’। পিয়ন বা গাড়িচালককেই কেউ অবৈধ সম্পদ অর্জনে বাধা দিতে পারে না, সে ক্ষেত্রে একজন কর্মকর্তাকে বাধা দেবে কে?

সরকারি চাকরিতে সামগ্রিকভাবে অবৈধ সম্পদ আহরণের ব্যাপারে কঠোর না হলে একের পর এক এই জাদু-বাস্তব গল্পগুলোর জন্ম হতেই থাকবে এবং একসময় আমরা সবাই ভাবব, এটার মধ্যে জাদু-টাদু কিছু নেই, এটাই বাস্তব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত