Ajker Patrika

অস্তিত্ব সংকটে শতবর্ষী হাট

মো. রিয়াদ হোসাইন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
অস্তিত্ব সংকটে শতবর্ষী হাট

হাটের নাম সাধুর হাট! গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বাঙাল হাওলা গ্রামের একটি বটগাছের নিচে শত বছর আগে শুরু হয়েছিল এ হাট। ১৯৯৮ সালে ভয়াবহ এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যার পানিতে চারদিক তলিয়ে গেলে হাটটিকে মূল জায়গা থেকে সরিয়ে তুমলিয়া মোড় এলাকার রেলগেটে বসানো হয়। এরপর এর নাম দেওয়া হয় সাদ্দামের হাট।

বাঙাল হাওলা গ্রামে যে বটগাছের নিচে হাটটি বসেছিল, সেখানে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের প্রাধান্য। ধারণা করা হয়, সে এলাকায় হিন্দু সাধুদের বিচরণ বেশি থাকায় হাটের নাম রাখা হয়েছিল সাধুর হাট।

সাধুর হাট কিংবা সাদ্দামের হাটের এক কিলোমিটারের মধ্যে নয়া বাজার নামে ছিল ছোট্ট আরেকটি বাজার। ১৯৯৮ সালে সাধুর হাটের জায়গা পরিবর্তন হলে বাজারটি চাঙা হয়ে ওঠে এবং সাধুর হাটের জৌলুশ কমে যেতে থাকে। একসময় এ হাট বসত সপ্তাহে দুই দিন—শনি ও মঙ্গলবার বিকেলে। এখন হাটটি বসে সপ্তাহে তিন দিন। তারপরেও হাটে মানুষের সংখ্যা কম।

জায়গা বা নাম যা-ই বদলে যাক না কেন, এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে হাটের স্মৃতি এখনো জেগে আছে। বাঙাল হাওলা গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বাদল বেঞ্জামিন রোজারিও জানান, তিনি তাঁর জন্মের পর হাটটি দেখেছেন। এ অঞ্চলের মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহের জায়গা ছিল এ হাট। বাদল বলেন, ‘এই হাটের সঙ্গে আমাদের শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বর্তমানে হাটটি রেলসড়কের ওপরে বসে। তাই সেখানে প্রাণের ঝুঁকি থাকায় আমরা অনেকটা এড়িয়েই চলি। বিশেষ প্রয়োজন না হলে সাধারণত এখন আর সেখানে যাওয়া হয় না।’

জানা গেছে, হাটের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সরু খালটি ছিল বাইরে থেকে বাণিজ্য করতে আসা বণিকদের একমাত্র যোগাযোগব্যবস্থা।

একই এলাকার মো. সোহেল মিয়া জানান, তাঁর বাড়ি একেবারে হাটসংলগ্ন। বয়সে ছোট হওয়ায় হাটে যেতেন বাবার হাত ধরে। প্রচুর মানুষ হওয়ায় হারিয়ে যাওয়ার ভয়ও থাকত। হাটে সেই সময় গুড়ের তৈরি গাট্টা, ঝালমুড়িসহ মজাদার বাহারি নানান রকম খাবার পাওয়া যেত, যেগুলো এখন আর পাওয়া যায় না। বটতলা থেকে হাটটি চলে যাওয়ার পর বাজার করতে কালীগঞ্জ বাজারে যান বলে জানান সোহেল মিয়া।

বান্দাখোলা এলাকার মো. আবদুর রশিদ বলেন, ‘সাধুর হাট প্রসিদ্ধ হওয়ায় বহু দূরের মানুষও একনামে চিনত। হাটের মূল জায়গার বটগাছটি এখনো আছে। কিন্তু হাটের জায়গায় ২০১৩ সালে গড়ে উঠেছে প্রাইমারি স্কুল। এখন হাটে আর আগের মতো মানুষের সমাগম হয় না বললেই চলে। এই পথে গেলে এখনো সেই ছোটবেলার কথা মনে পড়ে।’

মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ মোমেন নামের একজন বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে হাটটির জায়গা পরিবর্তন হলেও ক্রেতাকে আকর্ষণ করতে পারেনি। আশপাশে আরও বড় বাজার গড়ে ওঠায় ভাটা পড়েছে এর যৌবনে। মানুষ যেহেতু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে, তাই সময় বাঁচাতে এখন কাছের হাটবাজার থেকেই নিজেদের দৈনন্দিন বাজার করে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত