Ajker Patrika

মেসিদের কঠিন সময়ে তিনিই প্রেরণা

উপল বড়ুয়া, ঢাকা
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২২, ১৯: ৫৪
মেসিদের কঠিন সময়ে তিনিই প্রেরণা

ছোটবেলায় আর্জেন্টিনার এক বয়সভিত্তিক দলের হয়ে খেলতে উরুগুয়ে গিয়েছিলেন ডিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা। সেবারই তাঁর প্রথম বিদেশসফর আর প্রথমবার কোনো পত্রিকায় নাম আসা। কিন্তু ভুলে তাঁর নাম ছাপা হয় ‘ক্যারাডোনা’। সাংবাদিকদের এমন ভুলই হয়তো তাতিয়ে দিয়েছিল তাঁকে। পরে নিজের নামটা চিরস্থায়ী করে রাখলেন পৃথিবীর বুকে। হয়ে উঠলেন ‘ফুটবল ঈশ্বর’।

বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বৈচিত্র‍্যময় চরিত্র ছিলেন ম্যারাডোনা, এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়। কারও কাছে তিনি মহানায়ক। কারও কাছে আবার খলনায়কও। কিউবার মহান বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তাঁর ছিল অগাঢ় বন্ধুত্ব। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ড্রাগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর নিন্দার ঝড় উঠেছিল ম্যারাডোনাকে ঘিরে। তখন কাস্ত্রোই হয়ে উঠছিলেন তাঁর আশ্রয়। এক জায়গায় দুই বন্ধুর অদ্ভুত মিল। ২০১৬ সালের ২৫ নভেম্বর শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন কাস্ত্রো। চার বছর পর একই তারিখে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬০ বছর বয়সে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান ম্যারাডোনা। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুতে থমকে গিয়েছিল পুরো বিশ্ব। শুধু ফুটবলে সীমাবদ্ধ ছিল না তাঁর শোকগাথা, বরং তা ছুঁয়ে গিয়েছিল প্রতিটি অঙ্গন। ফুটবল ঈশ্বরের দৈহিক প্রস্থান বলে কথা!

ম্যারাডোনা চলে গেছেন, সেটির দুই বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও তিনি এখনো সমান প্রাসঙ্গিক। এই কাতার বিশ্বকাপেও যেমন ঘুরে-ফিরে আসছে ছিয়াশির মহানায়কের কথা।

আজ বেশি স্মরণ করা হবে তাঁর প্রস্থানের দুই বছর পূরণে। আজ তাঁকে বেশি মনে পড়বে আরও একটি কারণে। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৮৬ বিশ্বকাপে শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপর পেরিয়েছে ৩৬ বছর। প্রায় ভুলে যাওয়া শিরোপার স্বাদ পেতে আরেকটি বিশ্ব আসরে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসির নেতৃত্বে লা আলবিসেলেস্তেরা স্বপ্ন দেখছে সেই অপেক্ষার অবসানের। কিন্তু গ্রপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের বিপক্ষে বড় ধাক্কা খেয়ে স্তব্ধ তারা। মেসি অবশ্য তাঁর সাবেক গুরু থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্রে উজ্জীবিত করতে পারেন সতীর্থদের। ক্যামেরুনের বিপক্ষে হেরে ১৯৯০ বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল আর্জেন্টিনার। তবু ম্যারাডোনা ভেঙে পড়েননি। ঘুরে দাঁড়িয়ে দলকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো নিয়ে যান ফাইনালে। বিতর্কিত রেফারিংয়ের ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ১-০ গোলে না হারলে আরেকবার শিরোপায় চুমুও খেতে পারতেন। শেষ বিশ্বকাপ খেলতে আসা মেসিও কি তেমন কিছু করে দেখাতে পারবেন?

মিকেল অ্যাঞ্জেলোর বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘দ্য ক্রিয়েশন অব অ্যাডাম’ অনুরূপে আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা সৌদি আরব ম্যাচের আগে এভাবেই মিলন ঘটান ম্যারাডোনা-মেসির।২০১৪ বিশ্বকাপে মারাকানায় সেই জার্মানদের বিপক্ষে একই ব্যবধানে না হারলে মেসির অতৃপ্তি থাকত না। তবে গত বছর মারাকানাতেই কোপা আমেরিকায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছর পর আর্জেন্টাইনদের এনে দিয়েছিলেন প্রধান কোনো শিরোপা। তবে এখন বিদায় বিলম্বিত করতে হলে গ্রুপ পর্বে পরের দুই ম্যাচে তাদের জিততেই হবে। সৌদি ম্যাচের আগে অবশ্য সমর্থকেরা ঈশ্বর ও দেবতার দারুণ এক মিলনও ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। জগদ্বিখ্যাত ইতালিয়ান ভাস্কর মিকেল অ্যাঞ্জেলোর ‘দ্য ক্রিয়েশন অব অ্যাডামে’র অনুরূপে ব্যানারে এঁকে এনেছিলেন ম্যারাডোনা ও মেসির ছবি। যেখানে ঈশ্বর ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে এবং অ্যাডামের মতো কোপাজয়ী মেসি দুজন দুই দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন তর্জনি। এ যেন স্বর্গ আর মর্ত্যের মিলন!

মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচের আগে স্বর্গে  ম্যারাডোনাও হয়তো বসে যাবেন আর্জেন্টিনার জয় প্রার্থনায়। বেঁচে থাকলে হয়তো কাতারের স্টেডিয়ামে বসে ম্যারাডোনা গলা ফাটাতেন আর্জেন্টিনার জন্য। মেসিকে দিতেন শত বাধার মুখে ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্র। কখনো কখনো চুরুট ঠোঁটে ঘুমিয়ে পড়তেন। আর আকস্মিক জেগে উঠে চিৎকার দিয়ে সবাইকে থতমত করে দিতেন। রাশিয়া বিশ্বকাপে যেমন দেখা গিয়েছিল। প্রতিভাবানদের পাগলামি দেখাও যে ভীষণ সুখের। সেই ‘সুখ’ এবার মিস করছে কাতার বিশ্বকাপ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে’। ম্যারাডোনা নেই চোখের সামনে। তবু তাঁর প্রবল উপস্থিতি নয়নেরই সামনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত