Ajker Patrika

আসিফ মাহতাবকে পুনর্বহালের দাবিতে ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আসিফ মাহতাবকে পুনর্বহালের দাবিতে ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রাজধানীতে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে ‘চাকরিতে পুনর্বহাল’ এবং ‘সমকামিতাকে উৎসাহিত করে’ এমন কার্যক্রম থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে সরে আসার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন কিছু শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক আটকে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর আন্দোলন করেন তাঁরা। বিষয়টি জাতীয় ইস্যু দাবি করে সবাইকে প্রতিবাদ করার আহ্বানও জানিয়েছেন।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। গতকাল সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষক আসিফ মাহতাবের পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা ছেঁড়ার ঘটনায় কেন প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে। একটি গল্পের কারণে যদি প্রতিক্রিয়া হয়, তা কেন হচ্ছে, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। শরীফার গল্পের উপস্থাপনা পরিবর্তন করা যায় কি না, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

সবকিছু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সঙ্গে আলোচনা করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি গোষ্ঠী নানা বিষয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে।

নানা সময়ে অরাজকতা করা বা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার প্রবণতা তাদের আছে।’

১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে এক সেমিনারে বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করা হচ্ছে। একপর্যায়ে তিনি ওই বইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ে ‘শরীফার গল্প’ অংশের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এর মধ্যে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আসিফ মাহতাব অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরিচ্যুত করেছে। যদিও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, এই অভিযোগ সত্য নয়। কেননা, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষকই নন।

এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে আন্দোলন শুরু করেন কিছু শিক্ষার্থী। প্রধান ফটক বন্ধ করে তাঁরা সেখানে অবস্থান নেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চলে অবস্থান কর্মসূচি।

একপর্যায়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ছাড়াও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ আশপাশের অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা নানা স্লোগান দেন। দুপুরে এই আন্দোলনে সংহতি জানাতে আসে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন।

সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের একটি গল্পের প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় সমালোচনার মুখে চাকরিচ্যুত হন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। তাঁকে পুনর্বহালের দাবিতে একদল শিক্ষার্থীর বিক্ষোভ। গতকাল রাজধানীর বাড্ডায় ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে। ছবি: আজকের পত্রিকাবিকেলে আন্দোলনে সমন্বয়কারীদের একজন আহনাফ মারুফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশে সমকামিতাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডার ধারণাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

আন্দোলনের একপর্যায়ে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। দীর্ঘ আলোচনার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শিক্ষার্থীরা ফটক ছাড়েন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ফরিদ বলেন, ‘বিষয়টি জাতীয় ইস্যু। তাই জাতীয়ভাবেই প্রতিবাদ করা উচিত। দেশের সব জায়গা থেকে এখন এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।’

সন্ধ্যায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অফিস অব কমিউনিকেশনসের ডেপুটি ম্যানেজার ফাতিউস ফাহমিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া শুনে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন।

যানজটে ভুগল নগরবাসী
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনকারীরা অবস্থান করায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ভোগান্তিতে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে গাড়ি চলাচলও ছিল খুবই ধীরগতিতে। এতে রামপুরা-বাড্ডায় সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন এসব রুটের চলাচল করা যাত্রী ও চালকেরা। যানজটের কারণে গণপরিবহন থেকে নেমে যাত্রীদের হেঁটে গন্তব্য যেতে দেখা যায়।

বাড্ডায় এক পাঠাও চালক আল আমিন বলেন, সকাল থেকেই এই পথে যানজট শুরু হয়। এক ভাড়াতেই ঘণ্টা পার হয়ে গেছে।

যানজটের বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগের সহকারী কমিশনার অমিত কুমার দাস বলেন, সকাল থেকে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে যান চলাচলে ধীরগতি হয়। এতে কিছুটা যানজট হয় সড়কটিতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত