Ajker Patrika

দুর্নীতি প্রমাণ হলেও তিরস্কারেই পার

মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা
Thumbnail image

২০১৭ সালে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কার্যালয়ের ফটক ও ওয়েটিং রুম বা বিশ্রামকক্ষ নির্মাণ করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। পরবর্তী সময়ে সেই প্রকল্পে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আলাদাভাবে তদন্ত করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বেবিচক। তদন্তে অনিয়ম-দুর্নীতি এবং সরকারি অর্থ অপচয়ের প্রমাণ পাওয়ায় বিভাগীয় মামলা করা হয় বেবিচকের পাঁচ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। তবে শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত প্রকৌশলীদের একজনের বেতনকাঠামো নিম্নস্তরে নামানো আর অন্যদের তিরস্কার-সতর্কতার মতো লঘুদণ্ড দিয়েই মামলাটি নিষ্পত্তি করল বেবিচক।

এ প্রসঙ্গে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন,  প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বেবিচক আলাদাভাবে তদন্ত করেছে। পরবর্তীতে চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বেবিচকের পাঁচ প্রকৌশলীকে ওই লঘুদণ্ড দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হয়। সংস্থার চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমানের সই করা আদেশে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে থাকা এ এইচ এম ডি নুরউদ্দিন চৌধুরীকে ‘তিরস্কার’সূচক লঘুদণ্ড দিয়ে বিভাগীয় মামলায় আনা অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। যদিও প্রাথমিক তদন্তে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর্থিক অনিয়ম, অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে সরকারি অর্থের অপচয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে নুরউদ্দিন চৌধুরীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। পরে বেবিচকের চাকরি প্রবিধানমালা ২০২১-এর ৪৯(ক) ও (ঙ) প্রবিধি মোতাবেক যথাক্রমে দুর্নীতিপরায়ণতা ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ এনে বিভাগীয় মামলা করা হয়। একই সঙ্গে কেন তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না অথবা অন্য কোনো দণ্ড দেওয়া হবে না, সেটি জানতে চাওয়া হয়েছিল। প্রকল্পটি চলাকালীন তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর (কিউএস) দায়িত্বে ছিলেন।
একইভাবে অভিযুক্ত সহকারী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামান, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) জহিরুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম ও নির্বাহী প্রকৌশলী নাসিম আল ইসলামের বিরুদ্ধেও প্রাথমিক তদন্তে প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক অনিয়ম, অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে সরকারি অর্থ অপচয়ে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতিপরায়ণতা ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেককে লঘুদণ্ড দিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করে বেবিচক।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বেবিচক চেয়ারম্যানের আদেশে বলা হয়, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. শহীদুজ্জামানকে তাঁর বেতনকাঠামো নিম্নস্তরে অবনমিতকরণ তথা নবম গ্রেডের প্রারম্ভিক ধাপে অবনমিতকরণসূচক লঘুদণ্ড দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করা হলো। এ ছাড়া সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) জহিরুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম ও নির্বাহী প্রকৌশলী নাসিম আল ইসলামকে কেবল সতর্ক করে মামলা নিষ্পত্তি করা হয়।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ২০২১ সালের নভেম্বরে জমা দেওয়া মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচ করে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ের গেট ও বিশ্রামকক্ষ নির্মাণে মোট ৫৭টি আইটেম ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিটিই বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে কেনা হয়। গেটের নামফলকে এসএস শিট থেকে নেওয়া প্রতিটি ইংরেজি-বাংলা অক্ষরের জন্য ৫ হাজার ৯৭৭ টাকা ধরে মোট ২০৩টি অক্ষর বসাতে ব্যয় দেখানো হয়েছিল ১২ লাখ ১৩ হাজার টাকা। বাজারদর যাচাই করে তদন্ত কমিটি দেখেছিল কেবল নামফলকেই ১০ লাখ ৩৯ হাজার টাকা আর্থিক অপচয় করা হয়েছে।

বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর (অব.) ইকবাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত লঘুদণ্ড দিয়ে কেন বিভাগীয় মামলাটির নিষ্পত্তি করা হলো, সেটির পেছনে কোনো কারণ আছে কি না, সেটি বিবেচনায় নিতে হবে। তদন্ত প্রভাবিত হয়েছে কি না, সেটি দেখতে হবে। কারণ, দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পর লঘুদণ্ডের মাধ্যমে পার পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে অন্যরাও এমন কাজে উৎসাহী হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত