Ajker Patrika

‘য্যাতে য্যাতেই চাউল-আটা শেষ হয়্যে যায়’

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
‘য্যাতে য্যাতেই চাউল-আটা শেষ হয়্যে যায়’

‘কম দামের চাল আর আটা কিনতে সকাল ছয়টারও আগে আইচি। আন্নাবান্না করিছি গতকাল (বুধবার) দুপুরে। ওল্যাই খায়্যা আইচি। আবার এ্যাত্তে য্যায়ে ভাত আন্দ্যা লাগবে। কতক্ষণে চাল প্যামো জানি না। ডিলারের দোকানে অ্যাসে ম্যালাদিন ফিরে গেচি। চাউল পাইনি। চাউলডা খ্যায়ে তো বাঁচপো হামরা। দোকানের গ্যাটত য্যাতে য্যাতেই চাউল-আটা শেষ হয়্যে যায়। হামরাই চাউল না প্যালে, ভাত আন্দ্যে না খ্যালে, কী করে বাঁচপ।’

ওএমএসের চাল কিনতে এসে গত বৃহস্পতিবার সকালে আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলেন জয়পুরহাট সদরের বুলুপাড়া গুচ্ছগ্রামের মিনা বেগম। কেবল মিনা বেগমই নন, জয়পুরহাট সদরের দুর্গাদহ গ্রামের জবা রানী কর্মকার, গুলশান মোড় মহল্লার আসমাসহ অনেকেরই মন্তব্য অনুরূপ।

ওএমএসের ডিলাররা জানাচ্ছেন, চাহিদার তুলনায় চাল ও আটার বরাদ্দ অনেক কম। সে জন্য দুপুরের মধ্যেই চাল ও আটা বিক্রি শেষ হয়ে যায়। তাই বরাদ্দ দ্বিগুণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

জানা গেছে, সদরসহ জেলার সব পৌরসভার ২০ জন ওএমএস ডিলার প্রতিদিন ১ টন করে চাল ও গম বিক্রি করছেন। সপ্তাহে পাঁচ দিন (শুক্র ও শনিবার ছাড়া) সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ওএমএস ডিলাররা এই চালগুলো বিক্রি করেন। ওএমএস ডিলাররা প্রতি কেজি চাল ৩০, গম ১৮ টাকা দরে সাধারণ ক্রেতা এবং টিসিবি কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেন। তবে আজ রোববার থেকে প্রতি কেজি গম ৬ টাকা বেশি দামে ২৪ টাকা দরে কিনতে হবে।

সরেজমিনে জানা গেছে, বাজারে চাল, আটা, চিনি, ভোজ্যতেল, মাছ, মাংস, ডিম, শাকসবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বেশি। তাই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি রাখা অনেকের পক্ষেই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ওএমএসের দোকানে চাল, আটা কিনতে এখন নারীরাই বেশি ভিড় করছেন। কারণ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তাই বেশির ভাগ পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা রোজগারের জন্য মজুরি করতে যান আর নারীরা আসেন চাল-আটা কিনতে।

জয়পুরহাট সদরের গরিয়াকান্ত এলাকার নয়ননেছা বলেন, ‘ছলের রোজগার করা ট্যাকায় চাউল কিনরার আইচি। হামার স্বামী জীবিত নাই। চারটা ছোল আছে। বড় বেটার বয়স ২২ বছর। রডের মিস্তিরির সাথে জোগারির কাজ করে। সবদিন কাজ হয় না। কাজ হলে সেদিন ৩০০-৪০০ টাকা রোজগার হয়।’

সদর উপজেলার মোহাম্মেদাবাদ ইউনিয়নের মুহুরুল গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, ‘কম দামে চাল কিনবার জন্যে অ্যাত তিনটার দিকে আইচি। এ্যাটে অ্যাসে ফজরের নামাজ পড়িচি। এখন সকাল ১০টা। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। তা-ও চাউল পাইনি। বেলাইনেই চাউল দ্যাওচে।খ্যাটে খাওয়া মানুষ হামরাই। এ্যাটে অ্যাসে চাউল-আটা না প্যালে সেদিন সময়ও লষ্ট হয়, কামাইও লষ্ট হয়।’

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক জ্ঞানপ্রিয় বিদূর্শী চাকমা বলেন, বর্তমানে প্রতিটি ডিলারকে শুক্র ও শনিবার ছাড়া প্রতিদিন ১ টন করে চাল ও আটা দেওয়া হচ্ছে। এই বরাদ্দ বাড়ার সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত বর্তমানে নেই। এতদিন প্রতি কেজি ওএমএসের চাল ৩০ টাকায় এবং আটা ১৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে আজ থেকে প্রতি কেজি আটা ৬ টাকা বেশিতে, অর্থাৎ ২৪ টাকা কেজি দরে কিনতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত