Ajker Patrika

‘চোখের সামনে ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে গেল সঙ্গীরা’

কৃষ্ণ কান্ত কর্মকার, বাউফল (পটুয়াখালী) 
‘চোখের সামনে ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে গেল সঙ্গীরা’

‘ট্রলারে ছিলাম ১৩ জন। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট)। সকালবেলা আবহাওয়াটা তেমন ভালো না হলেও সাগরে তুফান ছিল না। ট্রলারের সবাই নিজ নিজ কাজ করছিলেন। সকাল ৯টা। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ এক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে উল্টে গেল ট্রলারটি। বাড়তে থাকল উত্তাল সাগরের ঢেউ। যে যার মতো ট্রলারের ভাসমান অংশ আঁকড়ে ধরে রাখলেও দুই দিনে একে একে চোখের সামনেই ভেসে গেল সাতজন সঙ্গী।’

কথাগুলো সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে বেঁচে আসা জেলে হাচোন হাওলাদারের (২৩)। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের মমিনপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। নিখোঁজ ও বেঁচে ফেরা জেলেরা ওই গ্রামের বাসিন্দা। এখনো গ্রামজুড়ে চলছে মাতম।

হাচোন বলেন, ‘রাতে ঘুমাতে পারি না। চোখের সামনে ভেসে ওঠে একসঙ্গে থাকা মানুষগুলোর মুখ। কীভাবে কী হয়ে গেল, ভাবতেই পারছি না। যেন একটা দুঃস্বপ্ন।’ হাচোন আরও বলেন, ‘১৪ আগস্ট ট্রলারের মালিক আলম গাজীর (৫৫) নেতৃত্বে ১৩ জেলে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সাগরে রওনা দেন। টানা দুই দিন ট্রলার চালিয়ে সাগরে পৌঁছালে জাল ফেলে যে যার মতো ছিলেন। ১৮ আগস্ট ভোরবেলা আবহাওয়া কেমন যেন বিরূপ ছিল। ভাবেননি বড় কোনো দুর্যোগের কবলে পড়বেন; কিন্তু সকাল ৯টার দিকে মুহূর্তের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়ে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। উল্টে যায় তাঁদের ট্রলার। সবাই ট্রলারটির ভাসমান অংশ আঁকড়ে ধরে রাখেন। ঢেউয়ের আঘাতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়লেও জীবন বাঁচাতে ট্রলার ছাড়েননি।’

হাচোন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সারা দিন এভাবে ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকি। সন্ধ্যার দিকে উত্তাল এক ঢেউয়ের আঘাতে ভেসে যান মিলন খান, রিপন হাওলাদার ও কালাম খান। ওই রাত এভাবেই কেটে গেলে পরদিন ভোরে ঢেউয়ে ভেসে যান সুলতান মোল্লা। বাকিরা একসঙ্গে রাত পর্যন্ত থাকি। পরদিন সকালে সাগরে তলিয়ে যান বজলু হাওলাদার (৪০), ট্রলার মালিক আলম গাজী ও মোতাহার আকন (৪০)। ভাগ্যক্রমে আমিসহ জলিল শরীফ (৩৫), নুর আলম (৪০), বাবুল মীর (৪৮), সবুজ খান (৩০) ও কাওছার রাড়ী (২৯) বেঁচে ফিরি।’

জেলে হাচোন বলেন, ‘ভাসতে ভাসতে ভারতীয় সীমানায় চলে গেলে দেশটির কোস্টগার্ড সদস্যরা আমাদের উদ্ধার করেন। এক দিন ও এক রাত ভারতীয় কোস্টগার্ডের জাহাজে থাকার পর ২৩ আগস্ট সকালে বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’

ট্রলার মালিকের ভাই হাবিবুর বলেন, ‘মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছয় জেলেকে আমার কাছে হস্তান্তর করেন।’ বাউফলের ইউএনও মো. আল আমিন বলেন, নিখোঁজ ও ফিরে আসা জেলেদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর নিয়ে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত