Ajker Patrika

দালালের আনাগোনা নেই

বদরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ১৫: ০৬
দালালের আনাগোনা নেই

বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দূর হয়েছে দালালের আনাগোনা। সেই সঙ্গে হাসপাতালের ভেতরে ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এতে করে হাসপাতালে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে এসেছে। সেবা নিতে আসা রোগীরা আর প্রতারিত হচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বদরগঞ্জ পৌর শহরের ১০ থেকে ১২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। প্রায় প্রতিটি সেন্টার থেকে পাঁচ থেকে সাতজন দালাল নিয়োগ করা হয়। তাঁরা সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রবেশ করতেন এবং কোনো রোগী হাসপাতালে এলেই তাঁর ও স্বজনদের পিছু নিতেন। চিকিৎসকদের কাছ থেকে রোগীরা সেবা নিয়ে বের হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ওই দালালেরা তাঁদের নিজেদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিতে টানাটানি করতেন।

এ ছাড়া বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির অর্ধশতাধিক বিক্রয় প্রতিনিধি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগের সামনে অবস্থান নিতেন। তাঁরা চিকিৎসকদের সেবা শেষে রোগীরা বের হলে মোবাইল ফোনে ছবি তোলার জন্য ব্যবস্থাপত্র নিয়ে টানাটানি করতেন। এ নিয়ে অনেক রোগী ও স্বজন ক্ষুব্ধ ছিলেন। দীর্ঘদিন চলা এই চিত্র ১৫ মে থেকে পরিবর্তন করা হয়।

গত শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো দালাল নেই। হাসপাতালের বাইরে ওষুধের দোকানগুলোতে অবস্থান করছেন মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ বা বিক্রয় প্রতিনিধিরা।

চিকিৎসা নিতে আসা পৌর শহরের শাহাপুর গ্রামের রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘এক মাস আগে হাসপাতালে রোগীর চেয়ে দালাল ও রিপ্রেজেনটেটিভদের উপস্থিতি ছিল বেশি। এখন তাঁদের দেখছি না।’

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক খাদিমুল ইসলাম জানান, চিকিৎসক যেকোনো রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলে দালালেরা তাঁদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠতেন। বিশেষ করে হাসপাতালের সামনের দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের অত্যাচার ছিল অনেক বেশি। হাসপাতাল এখন দালালমুক্ত করায় রোগীরা প্রতারিত হচ্ছেন না। এটা ধরে রাখার দাবি জানান এই শিক্ষক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক জানান, দালাল ও বিক্রয় প্রতিনিধিদের বেশির ভাগ স্থানীয় বাসিন্দা। তাঁরা হাসপাতালে প্রভাব খাটাতেন। রোগীকে সেবা দেওয়ার সময় কখনো কখনো প্রভাবশালী প্রতিনিধিরা ভেতরে প্রবেশ করে তাঁদের কোম্পানির ওষুধ লেখার জন্য চাপ প্রয়োগ করতেন। এতে রোগীকে সঠিক সেবা দিতে বেগ পেতে হতো। এখন তাঁরা না থাকায় আপাতত সেই চাপ নেই।

আরেক চিকিৎসক বলেন, ‘রোগীর রোগ নির্ণয়ে যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিই, তা কম খরচে সরকারি হাসপাতালে হয়। কিন্তু নানা কৌশলে দালালেরা রোগীকে হাসপাতাল থেকে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেন। সেখানে টাকাও বেশি নিত আবার অনেক পরীক্ষার রিপোর্টও ভুল আসত। এতে প্রতারিত হতেন রোগী ও স্বজনেরা।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে আমরা ওষুধের কিছু নমুনা দিয়ে এবং নাম বলে চলে আসতাম। কিন্তু আমাদের মধ্যে কয়েকজন হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে গিয়ে রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাটানি করতেন। এতে রোগী ও স্বজনেরা বিরক্ত হতেন। এসব দেখে নিজেরও খুব খারাপ লাগত।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাকিল মোবাশ্বির বলেন, ‘হাসপাতালে কম খরচে প্রায় সব ধরনের রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনেরা দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হতেন। রোগীদের স্বার্থেই এবং নিজ দায়িত্ববোধ থেকে হাসপাতালকে দালালমুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হাসপাতালের ভেতরে রিপ্রেজেনটেটিভদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত