Ajker Patrika

হজ মুসলিম ভ্রাতৃত্বের মহাসম্মেলন

মুফতি আবু দারদা
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২২, ১০: ৫৭
হজ মুসলিম ভ্রাতৃত্বের মহাসম্মেলন

হজ মুসলিম উম্মাহর বিশ্ব সম্মেলন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা এই সময়ে পবিত্র মক্কায় সমবেত হন। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে এক জোড়া সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে হজের বিধানগুলো পালন করেন। ভোগ-বিলাসের সব উপকরণ পরিত্যাগ করে অতিসাধারণভাবে তাঁরা মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনে ব্রতী হন। এখানে ধনী-দরিদ্র, সাদা-কালো কিংবা উঁচু-নিচুর কোনো ভেদাভেদ নেই। সব মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর করে তোলেন মক্কার অলিগলি-প্রান্তর। দিকে দিকে ছড়িয়ে দেন ভ্রাতৃত্বের অমোঘ বার্তা।

মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক পবিত্র কাবা ঘরের চারপাশে এক আল্লাহর জয়গান করেন হাজিরা। জান্নাতি পাথর হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন। ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতিধন্য মাকামে ইবরাহিমের কাছে নামাজ পড়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেন। হজরত হাজেরা (আ.)-এর অপূর্ব ত্যাগের কথা স্মরণ করতে সাফা-মারওয়া পর্বতে সায়ি করেন। সম্মিলিত লাব্বাইক ধ্বনি তুলতে তুলতে ছুটে যান মিনা প্রান্তরে। সেখানে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত অপেক্ষা করে ছুটে যান আরাফাতের প্রান্তরে। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের প্রধান কাজ। লাখ লাখ হাজি আরাফাতের ময়দানে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত-বন্দেগি করতে থাকেন। জোহরের সময় ময়দানের মসজিদে নামিরা থেকে সমবেত হাজিদের উদ্দেশে খুতবা পেশ করেন ইমাম। মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও বিশ্বশান্তি কামনায় আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন। এরপর মুজদালিফা ও কোরবানিপর্ব সেরে আবার কাবাঘরের উদ্দেশে যাত্রা করেন হাজিরা। মাঝখানে শয়তানের ওপর প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করে গুনাহমুক্তির শপথ নেন।

হজের অতিসাধারণ এই আনুষ্ঠানিকতা আমাদের বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার শিক্ষা দেয়। গোত্র-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে সরল জীবনযাপনের সবক দেয়। এই আরাফাতের ময়দানেই, জীবনসায়াহ্নে এক লাখ সাহাবির সামনে দাঁড়িয়ে মহানবী (সা.) মানবতার জয়গান গেয়েছিলেন। ইসলামের পূর্ণতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সমাজের সব ধরনের অনাচার নিষিদ্ধ করেছিলেন। খুনোখুনি, বৈষম্য, সুদ-ঘুষ ও জাহিলি যুগের সব মন্দ প্রথা বন্ধ করে একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। নারীর অধিকার বাস্তবায়নেও জোর দিয়েছিলেন। বিশেষ করে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের ডাক দিয়ে তিনি বলেছিলেন—‘হে লোকসকল, জেনে রেখো, তোমাদের রব একজন এবং তোমাদের পিতাও একজন। জেনে রেখো, অনারবের ওপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই এবং আরবের ওপরও অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কালোর ওপর সাদার এবং সাদার ওপর কালোরও শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র মাপকাঠি তাকওয়া ও আল্লাহভীতি।’ (মুসনাদে আহমদ)

অতএব, পার্থিব সব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে মহান আল্লাহর পবিত্র ঘরের ছায়ায় একত্র হয়ে সারা বিশ্বের মানুষকে এক ও নেক হওয়ার সবক দেয় ইসলাম। এর মাধ্যমে ভৌগোলিকভাবে শত মতভিন্নতা ও সংস্কৃতির পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও মুসলমানরা এক দেহ এক আত্মায় পরিণত হন। পৃথিবীর সব ভূখণ্ডের মানুষের সাক্ষাতে তৈরি হয় যুগপৎ সম্প্রীতির সেতুবন্ধন। সবার গন্তব্য একই—আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জীবন রাঙানোর শপথ গ্রহণ।

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত