সুলতানা কামাল, মানবাধিকারকর্মী
একবিংশ শতাব্দীরও বাইশটা বছর চলে গেল। বাংলাদেশও তার জন্মের অর্ধশতাব্দী পেছনে ফেলে এসেছে। একটা বছর শেষে স্বাভাবিকভাবেই বিগত বছরগুলোতে কী অর্জন হলো আর কী বাকি রইল, তার সঙ্গে সামনের সময়ে কী আশা করতে পারি, প্রসঙ্গক্রমে সে প্রশ্নগুলো আলোচনায় উঠে আসে।
অর্জনের কথা বললে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তরিত হওয়া। বিশ্বের নানা টানাপোড়েন, বিশেষত কোভিডের কারণে যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, বেশ কিছু বিশ্লেষণ অনুযায়ী বাংলাদেশের চিত্র যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়েও গর্ব করার মতো অনেক কিছু ঘটেছে। সর্বশেষ মেট্রোরেলের চলা শুরু হওয়া কম বড় কথা নয়! সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতে বেশ ভালো।
কিন্তু হোঁচট খেতে হয় মানবাধিকার বোধসম্পন্ন এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ-সংস্কৃতি গঠনে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া দেখে। একটি দেশের সাধারণ নাগরিক কতটা স্বাধীন, শান্তিপূর্ণ, নিঃশঙ্ক জীবন যাপন করতে পারে এবং তার অধিকার লঙ্ঘিত হলে ভুক্তভোগী ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করে কি না, মানবাধিকারের মান নির্ণয়ে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হয়।
আজকের বাংলাদেশে কতজন নিশ্চিত করে এই প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর দিতে সক্ষম? বিশেষ করে নারী,ধর্মীয় বা নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায় কিংবা ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষের এ ব্যাপারে কী অভিজ্ঞতা, তা একেবারে চোখ-কান বন্ধ করে না রাখলে না জানার কথা নয়। মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রাষ্ট্র এ সমস্ত পরিস্থিতিতে কী ভূমিকা রাখছে। রাষ্ট্রের যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে নিয়োজিত, সেই সব প্রতিষ্ঠান কি প্রকৃতপক্ষে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে? বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ—কোন প্রতিষ্ঠানটিকে সাধারণ মানুষ তার অধিকারের রক্ষক বলে ভাবতে পারছে? বরং পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, ‘ক্রসফায়ার’-এর নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমের মতো ভয়ানক ঘটনা যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের দায়দায়িত্ব নেওয়ার অস্বীকৃতির মনোভঙ্গি বিষয়গুলিকে আরও বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাজ করার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন নেতা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের অভিযোগ খণ্ডন করতে গিয়ে কোনো কোনো দেশে বিদ্যালয় বা ধর্মীয় স্থাপনায় দুষ্কৃতকারীদের গোলাগুলির দৃষ্টান্ত টানেন। তাঁর নিশ্চয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আচরণ আর রাষ্ট্র দ্বারা সংঘটিত সন্ত্রাসের মধ্যে পার্থক্য জানা আছে! সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো এ সমস্ত বিষয়ে কথা বলে এখন আইনি-বেআইনি যেকোনো ধরনের আক্রমণের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় থাকতে হয়।
রাজনীতিতে ভিন্নমত পোষণ করা বাংলাদেশে এখন যেন অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। বিশেষ করে গত বছরে যে হারে ভিন্নমতের ব্যক্তি ও দলের ওপর হামলা হয়েছে, তা গণতন্ত্রের জন্য অশুভ বার্তা বয়ে আনে। গায়েবি মামলা, প্রায়ই গণগ্রেপ্তার, জামিন না দেওয়া, সরকারি দলের সমর্থকদের রোষানল—সবকিছু মিলে এক বিপর্যস্ত অবস্থা।
বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী সাংবাদিকদের অবস্থাও খুব ভালো বলা যায় না। বাক্স্বাধীনতা আর সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতা প্রকটভাবে লঙ্ঘিত। বেসরকারি সংগঠনের ওপর বাধানিষেধ বেড়েই চলেছে। ফলে নাগরিক সমাজের মতপ্রকাশের পরিসর ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। একই সঙ্গে স্থানীয় নির্বাচনে যে সহিংসতা ঘটেছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কতটা অবাধ ও মুক্ত হবে তা নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আমরা এখনো সর্বজনের অধিকার ও মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি। শিক্ষাব্যবস্থার এদিক থেকে কতটা অবনতি ঘটেছে এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বাংলা প্রশ্নপত্রে তার পরিচয় আমরা পেয়েছি। সাম্প্রদায়িকতা, নারীবিদ্বেষ, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর বিষোদ্গার, ধর্মান্ধ অবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার প্রসার—প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এসবের বিরুদ্ধে সরকারকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বরং কোথায় যেন একটা তোষণের ভাব অনুভূত হয়েছে। আমরা চাই সামনের সময়টাতে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও উত্তরণের ছোঁয়া লাগুক। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণার আলোকে, সংবিধানের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে একটি সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক।
একবিংশ শতাব্দীরও বাইশটা বছর চলে গেল। বাংলাদেশও তার জন্মের অর্ধশতাব্দী পেছনে ফেলে এসেছে। একটা বছর শেষে স্বাভাবিকভাবেই বিগত বছরগুলোতে কী অর্জন হলো আর কী বাকি রইল, তার সঙ্গে সামনের সময়ে কী আশা করতে পারি, প্রসঙ্গক্রমে সে প্রশ্নগুলো আলোচনায় উঠে আসে।
অর্জনের কথা বললে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তরিত হওয়া। বিশ্বের নানা টানাপোড়েন, বিশেষত কোভিডের কারণে যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, বেশ কিছু বিশ্লেষণ অনুযায়ী বাংলাদেশের চিত্র যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়েও গর্ব করার মতো অনেক কিছু ঘটেছে। সর্বশেষ মেট্রোরেলের চলা শুরু হওয়া কম বড় কথা নয়! সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতে বেশ ভালো।
কিন্তু হোঁচট খেতে হয় মানবাধিকার বোধসম্পন্ন এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ-সংস্কৃতি গঠনে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া দেখে। একটি দেশের সাধারণ নাগরিক কতটা স্বাধীন, শান্তিপূর্ণ, নিঃশঙ্ক জীবন যাপন করতে পারে এবং তার অধিকার লঙ্ঘিত হলে ভুক্তভোগী ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করে কি না, মানবাধিকারের মান নির্ণয়ে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হয়।
আজকের বাংলাদেশে কতজন নিশ্চিত করে এই প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর দিতে সক্ষম? বিশেষ করে নারী,ধর্মীয় বা নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায় কিংবা ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষের এ ব্যাপারে কী অভিজ্ঞতা, তা একেবারে চোখ-কান বন্ধ করে না রাখলে না জানার কথা নয়। মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রাষ্ট্র এ সমস্ত পরিস্থিতিতে কী ভূমিকা রাখছে। রাষ্ট্রের যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে নিয়োজিত, সেই সব প্রতিষ্ঠান কি প্রকৃতপক্ষে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে? বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ—কোন প্রতিষ্ঠানটিকে সাধারণ মানুষ তার অধিকারের রক্ষক বলে ভাবতে পারছে? বরং পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু, ‘ক্রসফায়ার’-এর নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমের মতো ভয়ানক ঘটনা যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের দায়দায়িত্ব নেওয়ার অস্বীকৃতির মনোভঙ্গি বিষয়গুলিকে আরও বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাজ করার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন নেতা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের অভিযোগ খণ্ডন করতে গিয়ে কোনো কোনো দেশে বিদ্যালয় বা ধর্মীয় স্থাপনায় দুষ্কৃতকারীদের গোলাগুলির দৃষ্টান্ত টানেন। তাঁর নিশ্চয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী আচরণ আর রাষ্ট্র দ্বারা সংঘটিত সন্ত্রাসের মধ্যে পার্থক্য জানা আছে! সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো এ সমস্ত বিষয়ে কথা বলে এখন আইনি-বেআইনি যেকোনো ধরনের আক্রমণের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় থাকতে হয়।
রাজনীতিতে ভিন্নমত পোষণ করা বাংলাদেশে এখন যেন অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। বিশেষ করে গত বছরে যে হারে ভিন্নমতের ব্যক্তি ও দলের ওপর হামলা হয়েছে, তা গণতন্ত্রের জন্য অশুভ বার্তা বয়ে আনে। গায়েবি মামলা, প্রায়ই গণগ্রেপ্তার, জামিন না দেওয়া, সরকারি দলের সমর্থকদের রোষানল—সবকিছু মিলে এক বিপর্যস্ত অবস্থা।
বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী সাংবাদিকদের অবস্থাও খুব ভালো বলা যায় না। বাক্স্বাধীনতা আর সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতা প্রকটভাবে লঙ্ঘিত। বেসরকারি সংগঠনের ওপর বাধানিষেধ বেড়েই চলেছে। ফলে নাগরিক সমাজের মতপ্রকাশের পরিসর ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। একই সঙ্গে স্থানীয় নির্বাচনে যে সহিংসতা ঘটেছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কতটা অবাধ ও মুক্ত হবে তা নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আমরা এখনো সর্বজনের অধিকার ও মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি। শিক্ষাব্যবস্থার এদিক থেকে কতটা অবনতি ঘটেছে এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বাংলা প্রশ্নপত্রে তার পরিচয় আমরা পেয়েছি। সাম্প্রদায়িকতা, নারীবিদ্বেষ, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর বিষোদ্গার, ধর্মান্ধ অবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার প্রসার—প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এসবের বিরুদ্ধে সরকারকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বরং কোথায় যেন একটা তোষণের ভাব অনুভূত হয়েছে। আমরা চাই সামনের সময়টাতে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও উত্তরণের ছোঁয়া লাগুক। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণার আলোকে, সংবিধানের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে একটি সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হোক।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫