Ajker Patrika

হিজলের কোমল রেশমি পরশ

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ২৬ মে ২০২২, ০৯: ৪৭
হিজলের কোমল রেশমি পরশ

রাত যত গভীর হয়, আরও সৌন্দর্য উজাড় করে দেয় হিজল। হালকা মিষ্টি গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে চারপাশ। জোনাকিরা নেচে বেড়ায় শাখা-পল্লবে। কালচে সবুজ ডাল-পাতার ফাঁকে অপলক নয়নে চেয়ে থাকে যেন। গোলাপি-লাল রঙের রেশমি কোমল ফুল সকালে ঝরে যায়। হাতে নিলে পাওয়া যায় কোমল রেশমি পরশ। গাছতলা দেখলে মনে হয় ফুলের বিছানা। মনোরম এ দৃশ্য দেখেই হয়তো কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, ‘হিজল-বিছানো বন-পথ দিয়া/রাঙায়ে চরণ আসিবে গো পিয়া।’

হিজলগাছ চেনেন না বা নাম শোনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বাংলার প্রকৃতিতে অনন্য সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটায় হিজল ফুল। প্রকৃতিগত কারণে গাছপালা আর ফুল-ফলের অপার সৌন্দর্যের জেলা মানিকগঞ্জের সুখ্যাতি বেশ প্রাচীন। অন্যান্য ঋতুর মতো গ্রীষ্মেও ফল-ফুলে-বৃক্ষে সাজানো থাকে প্রকৃতির কোল। ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী, কেল্লাই, রামদিয়া নালী, বুতনী, পয়লা, বালিয়াখোড়া, বড়টিয়া, সিংজুরীসহ কালীগঙ্গায় পুরোনো ধলেশ্বরী নদীর পাড়, বাঁধের ধার, অসংখ্য পুকুর পাড়, ছোট-বড় খালের পাড়, বিলের ধার ও বিভিন্ন জলজ স্থানে এবারও চোখে পড়ছে হিজলগাছ।

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে ফুলে ফুলে ভরে যায় গাছ। সদরের গুলটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কবি তানিয়া আফরোজ বলেন, হিজলতলায় সকালে গেলে মনে হবে গোলাপি বিছানার ওপর ফুলগুলো ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। কুড়িয়ে কেউ কেউ হিজলের মালা গাঁথে। পানির ওপর পড়া হিজল ফুলের রূপ দেখে মুগ্ধ না হওয়ার উপায় নেই।

বাংলাদেশ প্ল্যান্ট ট্যাক্সোনোমিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, হিজল মাঝারি আকারের চিরহরিৎ গাছ। আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়া হলেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বিস্তৃতি ব্যাপক। হালকা গোলাপি রঙের ১০-১২ সেন্টিমিটার লম্বা পুষ্পদণ্ডের মাঝে অসংখ্য ফুল ঝুলন্ত অবস্থায় ফোটে। কচি পাতা প্রথমে লালচে রঙের হলেও দিনে দিনে উজ্জ্বল সবুজ রং ধারণ করে। ফুলের মঞ্জুরি প্রায় এক থেকে দেড় ফুট লম্বা।

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মতিন দেওয়ান বলেন, ‘সৌন্দর্যে ভরা এই হিজলগাছ এখন গ্রামগঞ্জে তেমন একটা দেখা যায় না। কারণ, মানুষ মনে করে এর কাঠ কম দামি এবং অপ্রয়োজনীয়।’

কিন্তু সৌন্দর্য আর মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এর রয়েছে ঔষধি গুণও। মানিকগঞ্জ সাধনা ঔষধালয়ের চিকিৎসক হেকিম উত্তম বলেন, হিজলগাছের বাকল থেকে ট্যানিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া হিজলের বাকল ও ফল বিরোচক এবং ডায়রিয়া ও নাকের ক্ষতে উপকারী।

পরিবেশ ও প্রকৃতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে ফলদ ও কাঠগাছের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ রোপণের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। নাহলে যান্ত্রিকতা আর ব্যস্ততার ভিড়ে একসময় হারাবে প্রকৃতির সৌন্দর্যের ভারসাম্য।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, হিজল অযত্ন-অবহেলায় টিকে থাকতে সক্ষম। বন্যার পানি কিংবা তীব্র খরায়ও টিকে থাকে। এমনকি পানির নিচে কয়েক মাস ডুবে থাকলেও হিজলগাছ বেঁচে থাকে। নদী নালাবেষ্টিত মানিকগঞ্জ অঞ্চলে তাই এ গাছের অস্তিত্ব বেশ পুরোনো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিএনসিসির পদ ছাড়লেন এস্তোনিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা, চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশ

এনআইডির নাম ও জন্মতারিখ সংশোধনের দায়িত্বে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা

পদত্যাগ করব না, আলোচনা করে সমাধান করব: কুয়েট উপাচার্য

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত