Ajker Patrika

মৃত্যুফাঁদ সেই লঞ্চেই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

তানজিল হাসান, মুন্সিগঞ্জ
মৃত্যুফাঁদ সেই লঞ্চেই  ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

যাত্রীদের জন্য মৃত্যুফাঁদ হিসেবে বিবেচিত সেই সানকেন বা ডুবো ডেকবিশিষ্ট ছোট আকারের লঞ্চগুলো আবার চলাচল করতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট নৌপথে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নতুন করে অনুমোদন দেওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরাও চলাচল করছে ওই 
সব লঞ্চে। নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী ৬০ শতাংশের বেশি লঞ্চকে এরই মধ্যে যাত্রী পরিবহনের অনুমোদন দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

মুন্সিগঞ্জ থেকে নারায়ণগঞ্জ নৌপথে চলাচলকারী কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, ছোট আকারের ঝুঁকিপূর্ণ ওই সব লঞ্চ চলাচলের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি। তাঁদের মতে, মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ রুটে বড় লঞ্চ চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। শুধু লঞ্চ ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করেই পুরোনো আমলের লক্কড় মার্কা লঞ্চ চালুর অনুমোদন দিয়ে যাত্রীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে। নিরাপদ নৌযান সংযোজন করে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তাঁরা।

এ ব্যাপারে মুন্সিগঞ্জ নাগরিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুজন হায়দার জনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সড়ক ও নৌপথে একটি সিন্ডিকেটের কাছে মুন্সিগঞ্জবাসী জিম্মি।

মুনাফালোভী ওই সিন্ডিকেটের কাছে মুন্সিগঞ্জের মানুষের প্রাণের কোনো মূল্য নেই। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে প্রায়ই দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি হয়।

এ যেন খুব মামুলি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ দুর্ঘটনার পর এই নৌপথে চলাচল করা অর্ধশত বছরের পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় মার্কা ছোট লঞ্চগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বড় কিছু লঞ্চ সংযোজন করে ও বিকল্প নৌযানের মাধ্যমে নৌপথটি সচল রাখার কথা ছিল।

কিন্তু ঘুরেফিরে সেই পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চগুলোই আবার নতুন মোড়কে মানুষ মারার ফাঁদ হিসেবে নৌপথে চলাচলের অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই প্রহসন বন্ধ করার জোর দাবি জানাই। নিরাপদ নৌপথ জেলার মানুষের অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপদ নৌযান সংযোজন করে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।’

গত ২০ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ রূপসী-৯-এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন ডুবে ১০ জনের মৃত্যুর পরদিন থেকে নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচটি রুটে চলাচলকারী ৭০টি লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ। লঞ্চগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে গণ্য করে যাত্রীদের প্রাণহানি এড়াতে ওই পদক্ষেপ নওয়া হয়েছিল। কিন্তু ধাপে ধাপে আবার সেই লঞ্চগুলোকেই নীরবে অনুমোদন দিচ্ছে সংস্থাটি।

নিষেধাজ্ঞার এক মাস পর প্রথম দফায় নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে পাঁচ রুটে ১৮টি লঞ্চ চলাচল আবার শুরু করার অনুমোদন দেয় বিআইডব্লিউটিএ।তখন বলা হয়েছিল, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রী ও লঞ্চশ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরে আরও কয়েক দফায় মোট ৪৩টি লঞ্চ চলাচলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌরুটের ৯টি লঞ্চ চলাচলের অনুমোদন পেয়েছে। এমনকি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে দুর্ঘটনাকবলিত সেই এমএল আফসার উদ্দিন। সার্ভে রিপোর্ট পেলেই সেটিকে অনুমোদন দেওয়া হবে বলে বিআইডব্লিউটিএর একটি সূত্রে জানা গেছে।

বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের উপপরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য জানান, নারায়ণগঞ্জে ৪৩টি লঞ্চ চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ রুটে অনুমোদন পেয়েছে ৯টি লঞ্চ। ৫৫ ফুট দৈর্ঘ্যের লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ডুবে যাওয়া লঞ্চ এমএল আফসার উদ্দিন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এদিকে, এই রুটে মাঝারি আকারের লঞ্চ চালুর যে সম্ভাবনার কথা বিআইডব্লিউটিএ থেকে বলা হয়েছিল তার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে।
বাবু লাল বৈদ্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, সানকেন ডেক লঞ্চগুলোকে ২০২৩ সালের মধ্যে আপার-ডেক লঞ্চে রূপান্তর করতে বলা হয়েছে।

মালিক সমিতির সদস্য ও এমএল আফসার উদ্দিন লঞ্চের মালিক দিল মোহাম্মদ কোম্পানি জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি মেরামত করতে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লঞ্চ ব্যবসায় এখন আর লাভ নেই। আমরা এই ব্যবসায় আগে থেকে রয়েছি বিধায় এখন চাইলেও এর থেকে বের হতে পারি না।’  

সানকেন ডেকবিশিষ্ট লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞার পর থেকে ওই সব লঞ্চ চালুর অনুমোদন দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন নৌ-শ্রমিক ও কর্মচারীরা। ছোট আকারের ৭০টি লঞ্চের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৮টি অনুমতি পায় চলাচলের জন্য। বাকি ৫২টি লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। তবে সব লঞ্চ চলাচলের অনুমতি না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থা। এরপর জুন-জুলাই মাসে আরও ২৫টি লঞ্চ চলাচলের অনুমোদন পায়।
গত ২০ মার্চের আগেও ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লাঘাট এলাকায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছে ডুবে গিয়েছিল এমএল সাবিত আল হাসান লঞ্চ। এসকেএল-৩ কার্গো জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দিলে যাত্রীবাহী লঞ্চটি ডুবে ৩৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাড়ি কেনার টাকা না দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

মুক্তি পেয়ে আ.লীগ নেতার ভিডিও বার্তা, বেআইনি বলল বিএনপি

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কাও ঢাকায় এসিসির সভা বর্জন করল

যুদ্ধবিমানের ২৫০ ইঞ্জিন কিনছে ভারত, ফ্রান্সের সঙ্গে ৬১ হাজার কোটি রুপির চুক্তি

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে বিষোদ্‌গার: চকরিয়ায় এনসিপির পথসভার মঞ্চে বিএনপির হামলা-ভাঙচুর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত