Ajker Patrika

ব্যবসায়ীদের দুঃখ ওজন স্কেল

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১১: ০৮
ব্যবসায়ীদের দুঃখ ওজন স্কেল

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড বড় দারোগার হাট ওজন স্কেল তাঁদের দুঃখ বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। এ ওজন স্কেল তাঁদের গলার কাঁটা। চট্টগ্রামের চেম্বারসহ ব্যবসায়িক বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, এ স্কেলের প্রভাবে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চট্টগ্রামে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড বড় দারোগার হাট ওজন স্কেল ২০১২ সালে স্থাপন করে। ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর ওজন স্কেলে ২ এক্সেল (৬ চাকা) মোটরযানের ১৩ টন ওজন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে ১৮ মে পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও সহকারীরা চাঁদাবাজির প্রতিবাদে এ ওজন স্কেলে ভাঙচুর চালান।

চট্টগ্রামের চেম্বার সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সীতাকুণ্ড বড় দারোগার হাট ওজন স্কেলের বিষয়ে আমরা সরকারকে নানাভাবে বহুবার বলেছি। দেশের সব মহাসড়কে না বসিয়ে চট্টগ্রামের একটা অংশে স্কেল বসিয়ে পণ্যবাহী পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক ছৈয়দ ছগির আহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ২২টি মহাসড়কের কোথাও এ রকম স্কেল নাই। একমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড বড় দারোগার হাট ওজন স্কেলেই ১৩ টনের অধিক পণ্য পরিবহন করা যায় না। চাপাই নবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ থেকে ১৮ /২০ টন পণ্য নিয়ে মহাসড়কে চলাচল করছে। দিনাজপুরের বাংলা হিলি স্থল বন্দর থেকেও ১৮ /২০ টনের পণ্য নিয়ে মহাসড়কে চলাচল করছে। একইভাবে মোংলা বন্দর থেকে কোনো প্রকার বাধা ছাড়া ভারী পণ্য নিয়ে মহাসড়কে চলাচল করছে। এই ওজন স্কেলের নামে পরিকল্পিতভাবে চট্টগ্রামকে নিগৃহীত করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সাইয়েদ মো. আরিফও একই ধরনের মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ওজন স্কেল বসলে দেশের সব মহাসড়কে বসবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির নেতা মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘সরকারের দ্বৈতনীতির কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মহাসড়কে ভারী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য স্কেল বসাতে হলে, একযোগে সব মহাসড়কে বসাতে হবে।’

চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি মো. সুলাইমান বাদশা জানান, ‘এ ওজন স্কেল প্রত্যাহারের জন্য আমরা মানববন্ধন করেছি। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অবেদন করেছি। এক দেশে দুই আইন হতে পারে না। এ স্কেল লোডের নামে দেশের চট্টগ্রাম অংশ থেকে পণ্য পরিবহনে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ওজন নিয়ন্ত্রণের নামে সেখানে চাঁদাবাজির স্টেশন বানানো হয়েছে।’

ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড বড় দারোগার হাট ওজন স্কেল প্রত্যাহার করতে ২০১৮ সালের জুন মাসে চট্টগ্রামের ১১টি ব্যবসায়িক সংগঠনের পক্ষ থেকে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রী ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে পত্র দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়। ব্যবসায়িক নেতারা চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও জিয়া উদ্দিন আহামদ বাবলুর (প্রয়াত) কাছে ওজন স্কেলটি বাতিলের অনুরোধ করে দরখাস্ত করেন।

দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দেওয়া পত্রে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের প্রধান সমস্যাগুলোর শীর্ষে রয়েছে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ। এ পত্রে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন এবং এক্সেল লোডের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে দুই পৃষ্ঠার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেল বসানো হচ্ছে তা ঠিক নয়। দেশের অপরাপর মহাসড়কেও ওজন স্কেল বসছে। ইতিমধ্যে ২৮টি স্কেল বসানোর দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত