অরুণ কর্মকার
আজকের পত্রিকার এই উপসম্পাদকীয় কলামে ‘বাংলাদেশে ভূমিকম্প-বিতর্ক বনাম গবেষণার ভুল-শুদ্ধ’ শিরোনামে আমার একটি নিবন্ধ ১৫ মে প্রকাশিত হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘এবি নিউজ ২৪ বিডি ডট কম’-এ কিছুটা সংশোধিত আকারে একই শিরোনামে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। এরপরের কয়েক দিনে দেশের এবং প্রবাসের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন ভূ-বিজ্ঞানী ও গবেষকের কাছ থেকে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মন্তব্য আমার কাছে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সম্পর্কে আরও কিছু কথা বলার প্রয়োজনবোধ থেকে আজকের নিবন্ধের অবতারণা।
প্রকাশিত সেই নিবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক মাইকেল স্টেকলার এবং তাঁর গবেষক দলের এক গবেষণা প্রতিবেদনে একটি বিশেষ আবিষ্কারের কথা উল্লেখ করেছিলাম। ২০১৬ সালে তাঁদের প্রকাশিত সেই গবেষণা প্রতিবেদনে ঢাকার তলদেশ দিয়ে প্রায় মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত একটি অভিন্ন ভূ-চ্যুতিরেখা (মেগা থ্রাস্ট) টেনে বলা হয়, এটি ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার একটি প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের উৎস হবে। সেই ভূমিকম্প বাংলাদেশের বিস্তৃত এলাকায় প্রলয় ঘটাবে। ঢাকার ভূস্তর কাদামাটিতে পরিণত হবে। ঢাকায় কোনো স্থাপনা কিংবা মানুষজনের অস্তিত্ব থাকবে না।
মাইকেল স্টেকলার ও তাঁর গবেষক দলের এই আবিষ্কার এ দেশের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়। ফলে মানুষ যারপরনাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এটি এমন একসময় প্রকাশিত হয় যার কাছাকাছি সময়ে ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলন (বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পলিসি সামিট) অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল দেশি-বিদেশি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আকর্ষণ। যেখানে এত বড় বিপর্যয়কর ভূমিকম্পের আশঙ্কা, সেখানে বিনিয়োগকারীরা যে শিগগিরই আসতে চাইবেন না, তা প্রায় নিশ্চিত। আর আসতে চাইলেও যেসব ক্ষেত্রে বা প্রকল্পে তাঁরা বিনিয়োগ করবেন তার ব্যয় হবে অনেক বেশি।
অনেকেই ধারণা করছেন, অত্যন্ত সীমিতসংখ্যক তথ্য-উপাত্তের (ডেটা) ভিত্তিতে মাইকেল স্টেকলার ও তাঁর গবেষক দল অনেকটা তড়িঘড়ি করে এত বড় একটা প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের যে আশঙ্কা প্রকাশক করেছে, তার পেছনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের দিক থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে দেশে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনাটি ঠিকই ঘটে গেছে। এখন প্রকৌশলীরা কোনো বড় স্থাপনা করার ক্ষেত্রে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীলতার কম আর ভাবেন না। তাতে প্রকল্পের ব্যয় অনেকটাই বৃদ্ধি পায়।
আমাদের দেশের এবং প্রবাসের অগ্রগণ্য ভূ-বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা মাইকেল স্টেকলারের ওই আবিষ্কারকে (মেগা থ্রাস্ট) শুরু থেকেই অলীক বলে উল্লেখ করে এসেছেন। কিন্তু গণমাধ্যম ঢাকার ভূস্তর ভূমিকম্পের ফলে কাদামাটিতে পরিণত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে এতটাই আলোড়িত ছিল যে অন্য কোনো ব্যাখ্যা বা বক্তব্য আর সেখানে স্থান করে নেওয়ার তেমন সুযোগই পায়নি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা নিজেদের মধ্যে এবং মাইকেল স্টেকলারের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা, মতবিনিময় চালিয়ে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ স্টেকলারের গবেষণার বিষয়ে একটি সেমিনারও করেছিল। কোনো পর্যায়েই স্টেকলারের আবিষ্কৃত মেগা থ্রাস্টের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়নি। এসব খবরাখবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে খুবই কম।
ইতিমধ্যে মাইকেল স্টেকলার ও তাঁর গবেষক দল তাঁদের গবেষণার ফলাফলে কিছুটা সংশোধনী এনেছেন। তাতে তাঁদের চিত্রিত মেগা থ্রাস্ট থেকে সৃষ্ট ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ মাত্রা রিখটার স্কেলে ৯-এর পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ২ করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে আজকের পত্রিকার এই কলাম এবং এবি নিউজে নিবন্ধ প্রকাশের পর ভূ-বিজ্ঞানীরা আবারও কিছু মন্তব্য করেছেন, যা এখানে উল্লেখযোগ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেছেন, অধিকাংশ ভূ-বিজ্ঞানী মনে করেন বাংলাদেশের সমভূমির (বেঙ্গল প্লেইন) তলদেশে মেগা থ্রাস্ট্রের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ রকম একটি মেগা থ্রাস্টের কল্পিত ও অনুমাননির্ভর তত্ত্ব গণমাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত নয়। এ ধরনের বিষয়ের প্রকাশ কেবল আতঙ্ক ছড়াবে এবং উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করবে।
দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদদের একজন হচ্ছেন আবিদ লোদী। বর্তমানে কনসালট্যান্ট পেট্রোলিয়াম ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত। বিতর্কিত মেগা থ্রাস্ট-সম্পর্কে তাঁর একটি বক্তব্য অধ্যাপক বদরূল ইমামের মাধ্যমে আমার হাতে এসেছে। পাঠকদের জন্য সেটি এখানে হুবহু উল্লেখ করছি। আবিদ লোদী বলেন, ‘...জেনে থাকবেন যে ভূ-ত্বকের শিলা স্তরের ফল্ট (fault) থেকেই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। আলোচিত মেগা থ্রাস্ট ফল্ট (megathrust fault), যা বাংলাদেশের উত্তরে শিলং পাহাড় থেকে সুনামগঞ্জ বা কিশোরগঞ্জের হাওর হয়ে মেঘনা নদী বরাবর ঢাকার নিচ দিয়ে চট্টগ্রামের উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত বলে দাবি করা হচ্ছে। গত প্রায় ৩০ বছরের কর্মজীবনে, যার সিংহভাগই বেঙ্গল বেসিনের শিলা বিন্ন্যাস ও গঠন নিয়ে অতিবাহিত, এমন একটি দাবিকৃত বিশালকায় ফল্টের অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি। এমনকি অপরাপর কোনো ভূতত্ত্ববিদ বাংলাদেশের ভেতরে এরূপ একটি বিশালকায় ফল্টের উপস্থিতির প্রমাণ দেননি। বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত ডাউকি ফল্ট (Dauki Fault) এবং দক্ষিণের সমুদ্রপ্রান্তিক ফল্টের (Coastal Fault) উপস্থিতি নিয়ে ভূবিজ্ঞানীদের মধ্যে তেমন কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু কল্পিত ও অপ্রমাণিত এবং অনেকটা সন্দেহমূলক এই বিস্তৃত মেগা থ্রাস্ট ফল্ট, যা ঢাকার নিচ দিয়ে চলে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা নিয়েই যত বিভ্রান্তি। কল্পিত এই মেগা থ্রাস্ট ফল্ট বেঙ্গল বেসিনের প্রতিষ্ঠিত ভূতাত্ত্বিক গঠনের ও ক্রমবিকাশের সঙ্গেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়। আমার জানামতে, ভিন্নমতাবলম্বীদের সন্দেহ এই যে কল্পিত ও অপ্রমাণিত এই মেগা থ্রাস্ট ফল্টের ওপর ভিত্তি করে অতি উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করা বিজ্ঞানসম্মত না। গবেষণার পরিমণ্ডলে এই মেগা থ্রাস্ট ও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের তত্ত্ব সীমাবদ্ধ থাকাটাই সমীচীন। কিন্তু একটি কাল্পনিক তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে এভাবে অতি উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের আতঙ্ক ছড়ানো সমীচীন হয়নি বলে অনেকেই মনে করেন।’
‘বিভিন্ন গণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভূমিকম্পের এই অনাকাঙ্ক্ষিত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়ার যে আশঙ্কা আপনি ব্যক্ত করেছেন, তা উদ্বেগজনক। এই ভীতিকর ও হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশের নীতিনির্ধারকেরা বহুল প্রচারিত মেগা থ্রাস্ট তত্ত্বের ভূ-বৈজ্ঞানিক যথার্থতা নিরূপণে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদগণের পরামর্শ নিতে পারেন।’
অধ্যাপক হোসেন মনসুর দেশের আরেকজন প্রবীণ ভূতত্ত্ববিদ। নিজের ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘ভূমিকম্প কখন, কোথায় এবং কী মাত্রায় হবে, সে বিষয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ একটি বিশেষ মহল শিগগিরই ঢাকা মহানগরীতে ৮-৯ মাত্রার ভূমিকম্প হবে বলে সাধারণ জনগণ ও দেশি-বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি ও নিরুৎসাহিত করছেন এবং দেশের উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করছেন। কল্পনাপ্রসূত এমন তথ্য পরিবেশনকারীদের সম্মুখ বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে আমি মনে করি।’
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) সাবেক পরিচালক মীর ফজলুল করিম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত। মাইকেল স্টেকলারের গবেষণালব্ধ ফল সম্পর্কে প্রকাশ্যে এবং সরাসরি তিনিই প্রথম চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে স্টেকলারের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনাও করে চলেছেন। কিছুদিন আগে মেগা থ্রাস্টের বিষয়টি নিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে আয়োজিত একটি সেমিনারে উপস্থাপনা দিয়েছেন। ২২ মে জিএসবিতে আয়োজিত একটি সেমিনারেও তিনি একই বিষয়ে উপস্থাপনা দেবেন।
জিএসবির সাবেক পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান ছাড়াও খুরশীদ আলম, খায়রুল আলমসহ আরও অনেক ভূতত্ত্ববিদ স্টেকলারের গবেষণাকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করেন। তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমার সরাসরি আলোচনা হয়েছে।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
আজকের পত্রিকার এই উপসম্পাদকীয় কলামে ‘বাংলাদেশে ভূমিকম্প-বিতর্ক বনাম গবেষণার ভুল-শুদ্ধ’ শিরোনামে আমার একটি নিবন্ধ ১৫ মে প্রকাশিত হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘এবি নিউজ ২৪ বিডি ডট কম’-এ কিছুটা সংশোধিত আকারে একই শিরোনামে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। এরপরের কয়েক দিনে দেশের এবং প্রবাসের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন ভূ-বিজ্ঞানী ও গবেষকের কাছ থেকে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মন্তব্য আমার কাছে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সম্পর্কে আরও কিছু কথা বলার প্রয়োজনবোধ থেকে আজকের নিবন্ধের অবতারণা।
প্রকাশিত সেই নিবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক মাইকেল স্টেকলার এবং তাঁর গবেষক দলের এক গবেষণা প্রতিবেদনে একটি বিশেষ আবিষ্কারের কথা উল্লেখ করেছিলাম। ২০১৬ সালে তাঁদের প্রকাশিত সেই গবেষণা প্রতিবেদনে ঢাকার তলদেশ দিয়ে প্রায় মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত একটি অভিন্ন ভূ-চ্যুতিরেখা (মেগা থ্রাস্ট) টেনে বলা হয়, এটি ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার একটি প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের উৎস হবে। সেই ভূমিকম্প বাংলাদেশের বিস্তৃত এলাকায় প্রলয় ঘটাবে। ঢাকার ভূস্তর কাদামাটিতে পরিণত হবে। ঢাকায় কোনো স্থাপনা কিংবা মানুষজনের অস্তিত্ব থাকবে না।
মাইকেল স্টেকলার ও তাঁর গবেষক দলের এই আবিষ্কার এ দেশের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়। ফলে মানুষ যারপরনাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এটি এমন একসময় প্রকাশিত হয় যার কাছাকাছি সময়ে ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলন (বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পলিসি সামিট) অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল দেশি-বিদেশি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আকর্ষণ। যেখানে এত বড় বিপর্যয়কর ভূমিকম্পের আশঙ্কা, সেখানে বিনিয়োগকারীরা যে শিগগিরই আসতে চাইবেন না, তা প্রায় নিশ্চিত। আর আসতে চাইলেও যেসব ক্ষেত্রে বা প্রকল্পে তাঁরা বিনিয়োগ করবেন তার ব্যয় হবে অনেক বেশি।
অনেকেই ধারণা করছেন, অত্যন্ত সীমিতসংখ্যক তথ্য-উপাত্তের (ডেটা) ভিত্তিতে মাইকেল স্টেকলার ও তাঁর গবেষক দল অনেকটা তড়িঘড়ি করে এত বড় একটা প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের যে আশঙ্কা প্রকাশক করেছে, তার পেছনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের দিক থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে দেশে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনাটি ঠিকই ঘটে গেছে। এখন প্রকৌশলীরা কোনো বড় স্থাপনা করার ক্ষেত্রে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীলতার কম আর ভাবেন না। তাতে প্রকল্পের ব্যয় অনেকটাই বৃদ্ধি পায়।
আমাদের দেশের এবং প্রবাসের অগ্রগণ্য ভূ-বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা মাইকেল স্টেকলারের ওই আবিষ্কারকে (মেগা থ্রাস্ট) শুরু থেকেই অলীক বলে উল্লেখ করে এসেছেন। কিন্তু গণমাধ্যম ঢাকার ভূস্তর ভূমিকম্পের ফলে কাদামাটিতে পরিণত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে এতটাই আলোড়িত ছিল যে অন্য কোনো ব্যাখ্যা বা বক্তব্য আর সেখানে স্থান করে নেওয়ার তেমন সুযোগই পায়নি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা নিজেদের মধ্যে এবং মাইকেল স্টেকলারের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা, মতবিনিময় চালিয়ে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ স্টেকলারের গবেষণার বিষয়ে একটি সেমিনারও করেছিল। কোনো পর্যায়েই স্টেকলারের আবিষ্কৃত মেগা থ্রাস্টের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়নি। এসব খবরাখবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে খুবই কম।
ইতিমধ্যে মাইকেল স্টেকলার ও তাঁর গবেষক দল তাঁদের গবেষণার ফলাফলে কিছুটা সংশোধনী এনেছেন। তাতে তাঁদের চিত্রিত মেগা থ্রাস্ট থেকে সৃষ্ট ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ মাত্রা রিখটার স্কেলে ৯-এর পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ২ করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে আজকের পত্রিকার এই কলাম এবং এবি নিউজে নিবন্ধ প্রকাশের পর ভূ-বিজ্ঞানীরা আবারও কিছু মন্তব্য করেছেন, যা এখানে উল্লেখযোগ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেছেন, অধিকাংশ ভূ-বিজ্ঞানী মনে করেন বাংলাদেশের সমভূমির (বেঙ্গল প্লেইন) তলদেশে মেগা থ্রাস্ট্রের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ রকম একটি মেগা থ্রাস্টের কল্পিত ও অনুমাননির্ভর তত্ত্ব গণমাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত নয়। এ ধরনের বিষয়ের প্রকাশ কেবল আতঙ্ক ছড়াবে এবং উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করবে।
দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদদের একজন হচ্ছেন আবিদ লোদী। বর্তমানে কনসালট্যান্ট পেট্রোলিয়াম ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত। বিতর্কিত মেগা থ্রাস্ট-সম্পর্কে তাঁর একটি বক্তব্য অধ্যাপক বদরূল ইমামের মাধ্যমে আমার হাতে এসেছে। পাঠকদের জন্য সেটি এখানে হুবহু উল্লেখ করছি। আবিদ লোদী বলেন, ‘...জেনে থাকবেন যে ভূ-ত্বকের শিলা স্তরের ফল্ট (fault) থেকেই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। আলোচিত মেগা থ্রাস্ট ফল্ট (megathrust fault), যা বাংলাদেশের উত্তরে শিলং পাহাড় থেকে সুনামগঞ্জ বা কিশোরগঞ্জের হাওর হয়ে মেঘনা নদী বরাবর ঢাকার নিচ দিয়ে চট্টগ্রামের উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত বলে দাবি করা হচ্ছে। গত প্রায় ৩০ বছরের কর্মজীবনে, যার সিংহভাগই বেঙ্গল বেসিনের শিলা বিন্ন্যাস ও গঠন নিয়ে অতিবাহিত, এমন একটি দাবিকৃত বিশালকায় ফল্টের অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি। এমনকি অপরাপর কোনো ভূতত্ত্ববিদ বাংলাদেশের ভেতরে এরূপ একটি বিশালকায় ফল্টের উপস্থিতির প্রমাণ দেননি। বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত ডাউকি ফল্ট (Dauki Fault) এবং দক্ষিণের সমুদ্রপ্রান্তিক ফল্টের (Coastal Fault) উপস্থিতি নিয়ে ভূবিজ্ঞানীদের মধ্যে তেমন কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু কল্পিত ও অপ্রমাণিত এবং অনেকটা সন্দেহমূলক এই বিস্তৃত মেগা থ্রাস্ট ফল্ট, যা ঢাকার নিচ দিয়ে চলে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা নিয়েই যত বিভ্রান্তি। কল্পিত এই মেগা থ্রাস্ট ফল্ট বেঙ্গল বেসিনের প্রতিষ্ঠিত ভূতাত্ত্বিক গঠনের ও ক্রমবিকাশের সঙ্গেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়। আমার জানামতে, ভিন্নমতাবলম্বীদের সন্দেহ এই যে কল্পিত ও অপ্রমাণিত এই মেগা থ্রাস্ট ফল্টের ওপর ভিত্তি করে অতি উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করা বিজ্ঞানসম্মত না। গবেষণার পরিমণ্ডলে এই মেগা থ্রাস্ট ও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের তত্ত্ব সীমাবদ্ধ থাকাটাই সমীচীন। কিন্তু একটি কাল্পনিক তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে এভাবে অতি উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের আতঙ্ক ছড়ানো সমীচীন হয়নি বলে অনেকেই মনে করেন।’
‘বিভিন্ন গণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভূমিকম্পের এই অনাকাঙ্ক্ষিত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়ার যে আশঙ্কা আপনি ব্যক্ত করেছেন, তা উদ্বেগজনক। এই ভীতিকর ও হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশের নীতিনির্ধারকেরা বহুল প্রচারিত মেগা থ্রাস্ট তত্ত্বের ভূ-বৈজ্ঞানিক যথার্থতা নিরূপণে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদগণের পরামর্শ নিতে পারেন।’
অধ্যাপক হোসেন মনসুর দেশের আরেকজন প্রবীণ ভূতত্ত্ববিদ। নিজের ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘ভূমিকম্প কখন, কোথায় এবং কী মাত্রায় হবে, সে বিষয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ একটি বিশেষ মহল শিগগিরই ঢাকা মহানগরীতে ৮-৯ মাত্রার ভূমিকম্প হবে বলে সাধারণ জনগণ ও দেশি-বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি ও নিরুৎসাহিত করছেন এবং দেশের উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করছেন। কল্পনাপ্রসূত এমন তথ্য পরিবেশনকারীদের সম্মুখ বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে আমি মনে করি।’
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) সাবেক পরিচালক মীর ফজলুল করিম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত। মাইকেল স্টেকলারের গবেষণালব্ধ ফল সম্পর্কে প্রকাশ্যে এবং সরাসরি তিনিই প্রথম চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে স্টেকলারের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনাও করে চলেছেন। কিছুদিন আগে মেগা থ্রাস্টের বিষয়টি নিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে আয়োজিত একটি সেমিনারে উপস্থাপনা দিয়েছেন। ২২ মে জিএসবিতে আয়োজিত একটি সেমিনারেও তিনি একই বিষয়ে উপস্থাপনা দেবেন।
জিএসবির সাবেক পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান ছাড়াও খুরশীদ আলম, খায়রুল আলমসহ আরও অনেক ভূতত্ত্ববিদ স্টেকলারের গবেষণাকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করেন। তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমার সরাসরি আলোচনা হয়েছে।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
অরুণ কর্মকার
আজকের পত্রিকার এই উপসম্পাদকীয় কলামে ‘বাংলাদেশে ভূমিকম্প-বিতর্ক বনাম গবেষণার ভুল-শুদ্ধ’ শিরোনামে আমার একটি নিবন্ধ ১৫ মে প্রকাশিত হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘এবি নিউজ ২৪ বিডি ডট কম’-এ কিছুটা সংশোধিত আকারে একই শিরোনামে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। এরপরের কয়েক দিনে দেশের এবং প্রবাসের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন ভূ-বিজ্ঞানী ও গবেষকের কাছ থেকে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মন্তব্য আমার কাছে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সম্পর্কে আরও কিছু কথা বলার প্রয়োজনবোধ থেকে আজকের নিবন্ধের অবতারণা।
প্রকাশিত সেই নিবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক মাইকেল স্টেকলার এবং তাঁর গবেষক দলের এক গবেষণা প্রতিবেদনে একটি বিশেষ আবিষ্কারের কথা উল্লেখ করেছিলাম। ২০১৬ সালে তাঁদের প্রকাশিত সেই গবেষণা প্রতিবেদনে ঢাকার তলদেশ দিয়ে প্রায় মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত একটি অভিন্ন ভূ-চ্যুতিরেখা (মেগা থ্রাস্ট) টেনে বলা হয়, এটি ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার একটি প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের উৎস হবে। সেই ভূমিকম্প বাংলাদেশের বিস্তৃত এলাকায় প্রলয় ঘটাবে। ঢাকার ভূস্তর কাদামাটিতে পরিণত হবে। ঢাকায় কোনো স্থাপনা কিংবা মানুষজনের অস্তিত্ব থাকবে না।
মাইকেল স্টেকলার ও তাঁর গবেষক দলের এই আবিষ্কার এ দেশের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়। ফলে মানুষ যারপরনাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এটি এমন একসময় প্রকাশিত হয় যার কাছাকাছি সময়ে ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলন (বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পলিসি সামিট) অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল দেশি-বিদেশি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আকর্ষণ। যেখানে এত বড় বিপর্যয়কর ভূমিকম্পের আশঙ্কা, সেখানে বিনিয়োগকারীরা যে শিগগিরই আসতে চাইবেন না, তা প্রায় নিশ্চিত। আর আসতে চাইলেও যেসব ক্ষেত্রে বা প্রকল্পে তাঁরা বিনিয়োগ করবেন তার ব্যয় হবে অনেক বেশি।
অনেকেই ধারণা করছেন, অত্যন্ত সীমিতসংখ্যক তথ্য-উপাত্তের (ডেটা) ভিত্তিতে মাইকেল স্টেকলার ও তাঁর গবেষক দল অনেকটা তড়িঘড়ি করে এত বড় একটা প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের যে আশঙ্কা প্রকাশক করেছে, তার পেছনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের দিক থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে দেশে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনাটি ঠিকই ঘটে গেছে। এখন প্রকৌশলীরা কোনো বড় স্থাপনা করার ক্ষেত্রে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীলতার কম আর ভাবেন না। তাতে প্রকল্পের ব্যয় অনেকটাই বৃদ্ধি পায়।
আমাদের দেশের এবং প্রবাসের অগ্রগণ্য ভূ-বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা মাইকেল স্টেকলারের ওই আবিষ্কারকে (মেগা থ্রাস্ট) শুরু থেকেই অলীক বলে উল্লেখ করে এসেছেন। কিন্তু গণমাধ্যম ঢাকার ভূস্তর ভূমিকম্পের ফলে কাদামাটিতে পরিণত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে এতটাই আলোড়িত ছিল যে অন্য কোনো ব্যাখ্যা বা বক্তব্য আর সেখানে স্থান করে নেওয়ার তেমন সুযোগই পায়নি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা নিজেদের মধ্যে এবং মাইকেল স্টেকলারের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা, মতবিনিময় চালিয়ে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ স্টেকলারের গবেষণার বিষয়ে একটি সেমিনারও করেছিল। কোনো পর্যায়েই স্টেকলারের আবিষ্কৃত মেগা থ্রাস্টের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়নি। এসব খবরাখবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে খুবই কম।
ইতিমধ্যে মাইকেল স্টেকলার ও তাঁর গবেষক দল তাঁদের গবেষণার ফলাফলে কিছুটা সংশোধনী এনেছেন। তাতে তাঁদের চিত্রিত মেগা থ্রাস্ট থেকে সৃষ্ট ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ মাত্রা রিখটার স্কেলে ৯-এর পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ২ করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে আজকের পত্রিকার এই কলাম এবং এবি নিউজে নিবন্ধ প্রকাশের পর ভূ-বিজ্ঞানীরা আবারও কিছু মন্তব্য করেছেন, যা এখানে উল্লেখযোগ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেছেন, অধিকাংশ ভূ-বিজ্ঞানী মনে করেন বাংলাদেশের সমভূমির (বেঙ্গল প্লেইন) তলদেশে মেগা থ্রাস্ট্রের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ রকম একটি মেগা থ্রাস্টের কল্পিত ও অনুমাননির্ভর তত্ত্ব গণমাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত নয়। এ ধরনের বিষয়ের প্রকাশ কেবল আতঙ্ক ছড়াবে এবং উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করবে।
দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদদের একজন হচ্ছেন আবিদ লোদী। বর্তমানে কনসালট্যান্ট পেট্রোলিয়াম ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত। বিতর্কিত মেগা থ্রাস্ট-সম্পর্কে তাঁর একটি বক্তব্য অধ্যাপক বদরূল ইমামের মাধ্যমে আমার হাতে এসেছে। পাঠকদের জন্য সেটি এখানে হুবহু উল্লেখ করছি। আবিদ লোদী বলেন, ‘...জেনে থাকবেন যে ভূ-ত্বকের শিলা স্তরের ফল্ট (fault) থেকেই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। আলোচিত মেগা থ্রাস্ট ফল্ট (megathrust fault), যা বাংলাদেশের উত্তরে শিলং পাহাড় থেকে সুনামগঞ্জ বা কিশোরগঞ্জের হাওর হয়ে মেঘনা নদী বরাবর ঢাকার নিচ দিয়ে চট্টগ্রামের উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত বলে দাবি করা হচ্ছে। গত প্রায় ৩০ বছরের কর্মজীবনে, যার সিংহভাগই বেঙ্গল বেসিনের শিলা বিন্ন্যাস ও গঠন নিয়ে অতিবাহিত, এমন একটি দাবিকৃত বিশালকায় ফল্টের অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি। এমনকি অপরাপর কোনো ভূতত্ত্ববিদ বাংলাদেশের ভেতরে এরূপ একটি বিশালকায় ফল্টের উপস্থিতির প্রমাণ দেননি। বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত ডাউকি ফল্ট (Dauki Fault) এবং দক্ষিণের সমুদ্রপ্রান্তিক ফল্টের (Coastal Fault) উপস্থিতি নিয়ে ভূবিজ্ঞানীদের মধ্যে তেমন কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু কল্পিত ও অপ্রমাণিত এবং অনেকটা সন্দেহমূলক এই বিস্তৃত মেগা থ্রাস্ট ফল্ট, যা ঢাকার নিচ দিয়ে চলে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা নিয়েই যত বিভ্রান্তি। কল্পিত এই মেগা থ্রাস্ট ফল্ট বেঙ্গল বেসিনের প্রতিষ্ঠিত ভূতাত্ত্বিক গঠনের ও ক্রমবিকাশের সঙ্গেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়। আমার জানামতে, ভিন্নমতাবলম্বীদের সন্দেহ এই যে কল্পিত ও অপ্রমাণিত এই মেগা থ্রাস্ট ফল্টের ওপর ভিত্তি করে অতি উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করা বিজ্ঞানসম্মত না। গবেষণার পরিমণ্ডলে এই মেগা থ্রাস্ট ও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের তত্ত্ব সীমাবদ্ধ থাকাটাই সমীচীন। কিন্তু একটি কাল্পনিক তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে এভাবে অতি উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের আতঙ্ক ছড়ানো সমীচীন হয়নি বলে অনেকেই মনে করেন।’
‘বিভিন্ন গণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভূমিকম্পের এই অনাকাঙ্ক্ষিত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়ার যে আশঙ্কা আপনি ব্যক্ত করেছেন, তা উদ্বেগজনক। এই ভীতিকর ও হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশের নীতিনির্ধারকেরা বহুল প্রচারিত মেগা থ্রাস্ট তত্ত্বের ভূ-বৈজ্ঞানিক যথার্থতা নিরূপণে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদগণের পরামর্শ নিতে পারেন।’
অধ্যাপক হোসেন মনসুর দেশের আরেকজন প্রবীণ ভূতত্ত্ববিদ। নিজের ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘ভূমিকম্প কখন, কোথায় এবং কী মাত্রায় হবে, সে বিষয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ একটি বিশেষ মহল শিগগিরই ঢাকা মহানগরীতে ৮-৯ মাত্রার ভূমিকম্প হবে বলে সাধারণ জনগণ ও দেশি-বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি ও নিরুৎসাহিত করছেন এবং দেশের উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করছেন। কল্পনাপ্রসূত এমন তথ্য পরিবেশনকারীদের সম্মুখ বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে আমি মনে করি।’
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) সাবেক পরিচালক মীর ফজলুল করিম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত। মাইকেল স্টেকলারের গবেষণালব্ধ ফল সম্পর্কে প্রকাশ্যে এবং সরাসরি তিনিই প্রথম চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে স্টেকলারের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনাও করে চলেছেন। কিছুদিন আগে মেগা থ্রাস্টের বিষয়টি নিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে আয়োজিত একটি সেমিনারে উপস্থাপনা দিয়েছেন। ২২ মে জিএসবিতে আয়োজিত একটি সেমিনারেও তিনি একই বিষয়ে উপস্থাপনা দেবেন।
জিএসবির সাবেক পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান ছাড়াও খুরশীদ আলম, খায়রুল আলমসহ আরও অনেক ভূতত্ত্ববিদ স্টেকলারের গবেষণাকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করেন। তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমার সরাসরি আলোচনা হয়েছে।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
আজকের পত্রিকার এই উপসম্পাদকীয় কলামে ‘বাংলাদেশে ভূমিকম্প-বিতর্ক বনাম গবেষণার ভুল-শুদ্ধ’ শিরোনামে আমার একটি নিবন্ধ ১৫ মে প্রকাশিত হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘এবি নিউজ ২৪ বিডি ডট কম’-এ কিছুটা সংশোধিত আকারে একই শিরোনামে নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়। এরপরের কয়েক দিনে দেশের এবং প্রবাসের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন ভূ-বিজ্ঞানী ও গবেষকের কাছ থেকে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য মন্তব্য আমার কাছে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সম্পর্কে আরও কিছু কথা বলার প্রয়োজনবোধ থেকে আজকের নিবন্ধের অবতারণা।
প্রকাশিত সেই নিবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক মাইকেল স্টেকলার এবং তাঁর গবেষক দলের এক গবেষণা প্রতিবেদনে একটি বিশেষ আবিষ্কারের কথা উল্লেখ করেছিলাম। ২০১৬ সালে তাঁদের প্রকাশিত সেই গবেষণা প্রতিবেদনে ঢাকার তলদেশ দিয়ে প্রায় মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত একটি অভিন্ন ভূ-চ্যুতিরেখা (মেগা থ্রাস্ট) টেনে বলা হয়, এটি ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার একটি প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের উৎস হবে। সেই ভূমিকম্প বাংলাদেশের বিস্তৃত এলাকায় প্রলয় ঘটাবে। ঢাকার ভূস্তর কাদামাটিতে পরিণত হবে। ঢাকায় কোনো স্থাপনা কিংবা মানুষজনের অস্তিত্ব থাকবে না।
মাইকেল স্টেকলার ও তাঁর গবেষক দলের এই আবিষ্কার এ দেশের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়। ফলে মানুষ যারপরনাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এটি এমন একসময় প্রকাশিত হয় যার কাছাকাছি সময়ে ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলন (বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পলিসি সামিট) অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল দেশি-বিদেশি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আকর্ষণ। যেখানে এত বড় বিপর্যয়কর ভূমিকম্পের আশঙ্কা, সেখানে বিনিয়োগকারীরা যে শিগগিরই আসতে চাইবেন না, তা প্রায় নিশ্চিত। আর আসতে চাইলেও যেসব ক্ষেত্রে বা প্রকল্পে তাঁরা বিনিয়োগ করবেন তার ব্যয় হবে অনেক বেশি।
অনেকেই ধারণা করছেন, অত্যন্ত সীমিতসংখ্যক তথ্য-উপাত্তের (ডেটা) ভিত্তিতে মাইকেল স্টেকলার ও তাঁর গবেষক দল অনেকটা তড়িঘড়ি করে এত বড় একটা প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের যে আশঙ্কা প্রকাশক করেছে, তার পেছনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের দিক থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে দেশে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনাটি ঠিকই ঘটে গেছে। এখন প্রকৌশলীরা কোনো বড় স্থাপনা করার ক্ষেত্রে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীলতার কম আর ভাবেন না। তাতে প্রকল্পের ব্যয় অনেকটাই বৃদ্ধি পায়।
আমাদের দেশের এবং প্রবাসের অগ্রগণ্য ভূ-বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা মাইকেল স্টেকলারের ওই আবিষ্কারকে (মেগা থ্রাস্ট) শুরু থেকেই অলীক বলে উল্লেখ করে এসেছেন। কিন্তু গণমাধ্যম ঢাকার ভূস্তর ভূমিকম্পের ফলে কাদামাটিতে পরিণত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে এতটাই আলোড়িত ছিল যে অন্য কোনো ব্যাখ্যা বা বক্তব্য আর সেখানে স্থান করে নেওয়ার তেমন সুযোগই পায়নি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা নিজেদের মধ্যে এবং মাইকেল স্টেকলারের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা, মতবিনিময় চালিয়ে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ স্টেকলারের গবেষণার বিষয়ে একটি সেমিনারও করেছিল। কোনো পর্যায়েই স্টেকলারের আবিষ্কৃত মেগা থ্রাস্টের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়নি। এসব খবরাখবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে খুবই কম।
ইতিমধ্যে মাইকেল স্টেকলার ও তাঁর গবেষক দল তাঁদের গবেষণার ফলাফলে কিছুটা সংশোধনী এনেছেন। তাতে তাঁদের চিত্রিত মেগা থ্রাস্ট থেকে সৃষ্ট ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ মাত্রা রিখটার স্কেলে ৯-এর পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ২ করা হয়েছে। এরই প্রেক্ষাপটে আজকের পত্রিকার এই কলাম এবং এবি নিউজে নিবন্ধ প্রকাশের পর ভূ-বিজ্ঞানীরা আবারও কিছু মন্তব্য করেছেন, যা এখানে উল্লেখযোগ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেছেন, অধিকাংশ ভূ-বিজ্ঞানী মনে করেন বাংলাদেশের সমভূমির (বেঙ্গল প্লেইন) তলদেশে মেগা থ্রাস্ট্রের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ রকম একটি মেগা থ্রাস্টের কল্পিত ও অনুমাননির্ভর তত্ত্ব গণমাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত নয়। এ ধরনের বিষয়ের প্রকাশ কেবল আতঙ্ক ছড়াবে এবং উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করবে।
দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদদের একজন হচ্ছেন আবিদ লোদী। বর্তমানে কনসালট্যান্ট পেট্রোলিয়াম ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত। বিতর্কিত মেগা থ্রাস্ট-সম্পর্কে তাঁর একটি বক্তব্য অধ্যাপক বদরূল ইমামের মাধ্যমে আমার হাতে এসেছে। পাঠকদের জন্য সেটি এখানে হুবহু উল্লেখ করছি। আবিদ লোদী বলেন, ‘...জেনে থাকবেন যে ভূ-ত্বকের শিলা স্তরের ফল্ট (fault) থেকেই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। আলোচিত মেগা থ্রাস্ট ফল্ট (megathrust fault), যা বাংলাদেশের উত্তরে শিলং পাহাড় থেকে সুনামগঞ্জ বা কিশোরগঞ্জের হাওর হয়ে মেঘনা নদী বরাবর ঢাকার নিচ দিয়ে চট্টগ্রামের উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত বলে দাবি করা হচ্ছে। গত প্রায় ৩০ বছরের কর্মজীবনে, যার সিংহভাগই বেঙ্গল বেসিনের শিলা বিন্ন্যাস ও গঠন নিয়ে অতিবাহিত, এমন একটি দাবিকৃত বিশালকায় ফল্টের অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি। এমনকি অপরাপর কোনো ভূতত্ত্ববিদ বাংলাদেশের ভেতরে এরূপ একটি বিশালকায় ফল্টের উপস্থিতির প্রমাণ দেননি। বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত ডাউকি ফল্ট (Dauki Fault) এবং দক্ষিণের সমুদ্রপ্রান্তিক ফল্টের (Coastal Fault) উপস্থিতি নিয়ে ভূবিজ্ঞানীদের মধ্যে তেমন কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু কল্পিত ও অপ্রমাণিত এবং অনেকটা সন্দেহমূলক এই বিস্তৃত মেগা থ্রাস্ট ফল্ট, যা ঢাকার নিচ দিয়ে চলে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা নিয়েই যত বিভ্রান্তি। কল্পিত এই মেগা থ্রাস্ট ফল্ট বেঙ্গল বেসিনের প্রতিষ্ঠিত ভূতাত্ত্বিক গঠনের ও ক্রমবিকাশের সঙ্গেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়। আমার জানামতে, ভিন্নমতাবলম্বীদের সন্দেহ এই যে কল্পিত ও অপ্রমাণিত এই মেগা থ্রাস্ট ফল্টের ওপর ভিত্তি করে অতি উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করা বিজ্ঞানসম্মত না। গবেষণার পরিমণ্ডলে এই মেগা থ্রাস্ট ও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের তত্ত্ব সীমাবদ্ধ থাকাটাই সমীচীন। কিন্তু একটি কাল্পনিক তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে এভাবে অতি উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পের আতঙ্ক ছড়ানো সমীচীন হয়নি বলে অনেকেই মনে করেন।’
‘বিভিন্ন গণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভূমিকম্পের এই অনাকাঙ্ক্ষিত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়ার যে আশঙ্কা আপনি ব্যক্ত করেছেন, তা উদ্বেগজনক। এই ভীতিকর ও হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশের নীতিনির্ধারকেরা বহুল প্রচারিত মেগা থ্রাস্ট তত্ত্বের ভূ-বৈজ্ঞানিক যথার্থতা নিরূপণে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদগণের পরামর্শ নিতে পারেন।’
অধ্যাপক হোসেন মনসুর দেশের আরেকজন প্রবীণ ভূতত্ত্ববিদ। নিজের ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, ‘ভূমিকম্প কখন, কোথায় এবং কী মাত্রায় হবে, সে বিষয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ একটি বিশেষ মহল শিগগিরই ঢাকা মহানগরীতে ৮-৯ মাত্রার ভূমিকম্প হবে বলে সাধারণ জনগণ ও দেশি-বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি ও নিরুৎসাহিত করছেন এবং দেশের উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করছেন। কল্পনাপ্রসূত এমন তথ্য পরিবেশনকারীদের সম্মুখ বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে আমি মনে করি।’
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) সাবেক পরিচালক মীর ফজলুল করিম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত। মাইকেল স্টেকলারের গবেষণালব্ধ ফল সম্পর্কে প্রকাশ্যে এবং সরাসরি তিনিই প্রথম চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে স্টেকলারের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনাও করে চলেছেন। কিছুদিন আগে মেগা থ্রাস্টের বিষয়টি নিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে আয়োজিত একটি সেমিনারে উপস্থাপনা দিয়েছেন। ২২ মে জিএসবিতে আয়োজিত একটি সেমিনারেও তিনি একই বিষয়ে উপস্থাপনা দেবেন।
জিএসবির সাবেক পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান ছাড়াও খুরশীদ আলম, খায়রুল আলমসহ আরও অনেক ভূতত্ত্ববিদ স্টেকলারের গবেষণাকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করেন। তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে আমার সরাসরি আলোচনা হয়েছে।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৫ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।
আজকের পত্রিকার এই উপসম্পাদকীয় কলামে ‘বাংলাদেশে ভূমিকম্প-বিতর্ক বনাম গবেষণার ভুল-শুদ্ধ’ শিরোনামে আমার একটি নিবন্ধ ১৫ মে প্রকাশিত হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘এবি নিউজ ২৪ বিডি ডট কম’-এ কিছুটা সংশোধিত আকারে
২০ মে ২০২৩‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]
আজকের পত্রিকার এই উপসম্পাদকীয় কলামে ‘বাংলাদেশে ভূমিকম্প-বিতর্ক বনাম গবেষণার ভুল-শুদ্ধ’ শিরোনামে আমার একটি নিবন্ধ ১৫ মে প্রকাশিত হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘এবি নিউজ ২৪ বিডি ডট কম’-এ কিছুটা সংশোধিত আকারে
২০ মে ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৫ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।
আজকের পত্রিকার এই উপসম্পাদকীয় কলামে ‘বাংলাদেশে ভূমিকম্প-বিতর্ক বনাম গবেষণার ভুল-শুদ্ধ’ শিরোনামে আমার একটি নিবন্ধ ১৫ মে প্রকাশিত হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘এবি নিউজ ২৪ বিডি ডট কম’-এ কিছুটা সংশোধিত আকারে
২০ মে ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৫ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।
আজকের পত্রিকার এই উপসম্পাদকীয় কলামে ‘বাংলাদেশে ভূমিকম্প-বিতর্ক বনাম গবেষণার ভুল-শুদ্ধ’ শিরোনামে আমার একটি নিবন্ধ ১৫ মে প্রকাশিত হয়েছে। পরদিন মঙ্গলবার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘এবি নিউজ ২৪ বিডি ডট কম’-এ কিছুটা সংশোধিত আকারে
২০ মে ২০২৩গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৫ দিন আগে‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫