Ajker Patrika

অবকাঠামো ভাঙাচোরা, পার্কে কমছে দর্শনার্থী

তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ৫৮
অবকাঠামো ভাঙাচোরা, পার্কে কমছে দর্শনার্থী

রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইকোপার্কটির বেহাল। দর্শনার্থীদের চলাচলের ১৬টি কাঠের সেতুর ১২টি ব্যবহারের অনুপযোগী। সড়কের হেরিংবোনে ইট, বিশুদ্ধ পানির জন্য স্থাপিত নলকূপ, শৌচাগারের দরজা-জানালা ও বেসিন ভেঙে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে এগুলো এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় দর্শনার্থীদের আগমন কমে গেছে পার্কটিতে।

তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইকো-ট্যুরিজমের সুযোগ বৃদ্ধি শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের পর টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সকিনা বিটে ২০১০-২০১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সোনাকাটা ইকোপার্ক নামে এই পার্কটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৩ হাজার ৬৩৪ একর জমির ওপর উপকূলীয় এই বনাঞ্চল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সংস্কার করা হয়নি।

বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বনের ভেতরে বিভিন্ন প্রাণী সংরক্ষণের জন্য ইটের প্রাচীর ও লোহার গ্রিল দিয়ে সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হয়। প্রাচীরের ভেতরে চিতা বাঘ, হরিণ, শূকর, অজগর, কুমির, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী অবমুক্ত করা হয়। এ ছাড়া পর্যটকদের জন্য বনভোজনের স্থান, চলাচলের জন্য বনের ভেতরে ছোট ছোট খালের ওপর ১৬টি কাঠের সেতু, চারটি গভীর নলকূপ, চারটি শৌচাগার, চারটি বিশ্রামাগারসহ ইটের সাড়ে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক নির্মাণ করা হয়। ইকোপার্কটি নির্মাণের পর এসব অবকাঠামো দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে কিছুদিনের মধ্যেই পার্কটি বেহাল হয়ে পড়ে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বনের ভেতরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য স্থাপিত চারটি গভীর নলকূপগুলো অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া দর্শনার্থীদের ব্যবহারের জন্য নির্মিত তিনটি শৌচাগার ভেঙে গেছে। বনের ভেতরে দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য সকিনা খাল থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হলেও এই সড়কের ইট উঠে গেছে। সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী। বন্য প্রাণীদের থাকার স্থানের চারপাশে নির্মিত লোহার গ্রিলে মরিচা ধরে অনেক জায়গায় তা ভেঙে গেছে। দেয়ালের পলেস্তারাও খসে পড়েছে। ইকোপার্কের কুমির প্রজননকেন্দ্রেরও করুণ অবস্থা।

পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা জানান, ইকোপার্কের অভ্যন্তরীণ অবস্থা খুব নাজুক। দর্শনার্থীদের জন্য নির্মিত সেতু ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ভেতরের রাস্তাও খারাপ। দর্শনার্থীদের ব্যবহারের জন্য নির্মিত নলকূপ, শৌচাগার ভেঙে যাওয়ায় ব্যবহারের জন্য একেবারে অনুপযোগী। সুন্দর পরিবেশে পার্ক নির্মাণ হলেও বেহাল অবস্থার কারণে এখানে কেউ আসতে চাইবে না।

পটুয়াখালীর বাউফল এলাকার শফিকুল ইসলাম বলেন, পার্কটির ভেতরের পরিবেশ খারাপ হয়ে যাওয়ায় এবং সড়কের সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক কমে। এ ছাড়া ইকোপার্কটির অবস্থা খুব বেহাল, এখানে বন্য প্রাণীদের জন্য নির্মিত বেষ্টনী নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই পার্কে আসতে হলে একটি বড় খাল ছোট খেয়া নৌকায় পার হতে হয়। এতে ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণেই এই পার্কে পর্যটকদের সংখ্যা কমছে।

টেংরাগিরি ইকোপার্কের দায়িত্ব থাকা সখিনা বিটের বিট কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, পার্কের হাঁটার সড়কগুলোর সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। শৌচাগার, বিশ্রামাগার নির্মাণের সময় হয়তো লবণাক্ত পানি ব্যবহার করা হয়েছে। যার কারণে এই স্থাপনাগুলো ভেঙে গেছে। আমাদের এখানে বর্তমানে চারটি হরিণ আছে।

জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, পার্কে পর্যটকদের জন্য ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা দরকার তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। আমরা বন বিভাগকে বলেছি তারা যেন এই পার্কের উন্নয়ন করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত