Ajker Patrika

বদলেছে হাওরের স্বাস্থ্যসেবা

রাজন চন্দ, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ১২
বদলেছে হাওরের স্বাস্থ্যসেবা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক। গ্রামীণ পর্যায়ে নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, হাত ধোয়ার উপকারিতা, নারীর শারীরিক সমস্যা ও শিশু পুষ্টি বিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে কমিউনিটি ক্লিনিক। ২০১৭ সাল থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকে বাচ্চা প্রসবের ব্যবস্থা থাকায় খুশি উপজেলাবাসী। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৫১ জন রোগী সেবা নিচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিক বদলে দিয়েছে তাহিরপুরের স্বাস্থ্যসেবার মান।

হাওর অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকের ভূমিকা সম্পর্কে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘তাহিরপুর উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম অত্যন্ত ভালো। এখানে ডেলিভারি (বাচ্চা প্রসব) করা হচ্ছে। এতে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ গ্রামেই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে সরকার আরও লজিস্টিক সাপোর্ট দিলে এলাকার মানুষের আরও উপকার হতো।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তাহিরপুর উপজেলায় ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করে সরকার। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নতুনভাবে চালু হয়। তখন থেকে গরিব, অসহায় মানুষকে দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।

উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের সম্রাট মিয়া জানান, ২০১৬ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইরা, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ-এর অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ওয়াশ ইন হেলথ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রত্যেকটি কমিউনিটি ক্লিনিককে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয় কমিউনিটি গ্রুপ। এই গ্রুপের সদস্যদের দায়িত্ব-কর্তব্য, কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়। তখন থেকে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়তে থাকে। গ্রামীণ জনগণও হাতের নাগালে পেতে থাকে স্বাস্থ্যসেবা।

উপজেলার ভাটি তাহিরপুর গ্রামের নারী সমাজকর্মী সুফিয়া ইসলাম বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত মা সমাবেশ, কমিউনিটি গ্রুপের মাসিক সভা এবং কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপের সভায় আলোচিত কার্যক্রমের ওপর জোর দেওয়া ও নিয়মিত তদারকি করা হয়। পাশাপাশি গ্রাম পর্যায়ে নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, হাত ধোয়ার উপকারিতা, শিশুর মল ব্যবস্থাপনা, নারীদের শারীরিক সমস্যা ও শিশুর পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে।’

উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের চন্দন কুমার দে বলেন, ‘বাড়ির পাশে কমিউনিটি ক্লিনিক হওয়ায় যেকোনো অসুখ-বিসুখে সেবা পাওয়া যায়। এখানে ভালো সেবা পাওয়া যাচ্ছে।’

খলিশাজুরি গ্রামের খুকি বলেন, ‘কোনো প্রসূতিকে (সন্তানসম্ভবা) নিয়ে এখন আর উপজেলায় কিংবা জেলায় যেতে হচ্ছে না। গ্রামের পাশে কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে বাচ্চা প্রসব করানো যাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মী ও ধাত্রীরা অত্যন্ত দক্ষ।’

চিকিৎসার মান ভালো হওয়ায় বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বেড়েছে সেবা নেওয়া রোগীর সংখ্যা।

জানা গেছে, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সংস্কারের আগে প্রতিদিন গড়ে স্বাস্থ্যসেবা নিত ৩৬ জন রোগী। বর্তমানে নিচ্ছেন ৫১ জন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডেলিভারি (বাচ্চা প্রসব) শুরু হয় ক্লিনিকগুলোতে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ২৫৬টি ডেলিভারি হয় এই গ্রামীণ সেবাকেন্দ্রে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত