Ajker Patrika

মহাকবি কায়কোবাদ

সম্পাদকীয়
মহাকবি কায়কোবাদ

১৯০৪ সালে প্রকাশিত ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্য রচনা করেই কায়কোবাদ পেয়েছেন মহাকবির খ্যাতি। তিনি কায়কোবাদ বা মুন্সী কায়কোবাদ নামে লিখলেও তাঁর প্রকৃত নাম কাজেম আল কোরায়শী। উনিশ শতকের কবিদের মধ্যে তিনিই প্রথম মুসলিম কবি, যিনি মহাকাব্য রচনা করেছিলেন এবং তিনিই প্রথম বাঙালি মুসলমান সনেট রচয়িতা। বলা হয়, তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি।

১৮৫৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কায়কোবাদ। পড়াশোনা করছিলেন সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে। কিন্তু ঢাকা জেলা জজকোর্টের আইনজীবী বাবার অকাল মৃত্যুর পর তিনি ভর্তি হন ঢাকা মাদ্রাসায় (বর্তমানে কবি নজরুল সরকারি কলেজ)। সেখানে প্রবেশিকা পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও পরীক্ষা দেননি। পোস্টমাস্টারের চাকরি নিয়ে ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। অবসর নেওয়ার আগপর্যন্ত এই চাকরিই তিনি করেছেন। পাশাপাশি নিজ প্রতিভা ছড়িয়ে গেছেন।

মহাকবি কায়কোবাদ সাহিত্যের প্রতি অনুরক্ত হন খুব অল্প বয়সেই। বাবা-মাকে হারিয়ে ১৩ বছর বয়সে প্রকাশ করেন প্রথম কাব্য ‘বিরহ বিলাপ’। সব মহলের প্রশংসা তাঁকে সাহিত্যে বিভোর হতে সাহায্য করে। তাঁর কবিতায় ফুটে ওঠে স্বদেশপ্রেম, সত্যনিষ্ঠা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যপ্রীতি।

তিনি শুধু কবিতাই লিখতেন না, গানও লিখেছেন। কায়কোবাদ তাঁর সাহিত্যের মাধ্যমে পশ্চাৎপদ বাঙালি মুসলমানদের তাদের অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন এবং তা পুনরুদ্ধারে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। মুসলমানরা সেই সময় সাহিত্যকে অনেকটা ঘৃণার নজরে দেখত, মুসলিম কবি-সাহিত্যিকও ছিলেন কম। কায়কোবাদ তখন হিন্দু-মুসলিম সবার দৃষ্টি কাড়েন তাঁর সাহিত্যের মাধ্যমে।

তাঁর ধর্মীয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন রচনায়। মহাশ্মশান ছাড়াও মহাকবির প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে—কুসুম কানন, অশ্রু-মালা, শিবমন্দির, অমিয়ধারা, শ্মশান ভস্ম, মহররম শরীফ, প্রেমের ফুল, প্রেমের বাণী, প্রেম-পরিজাত, মন্দাকিনী-ধারা ও গওছ পাকের প্রেমের কুঞ্জ।

বাংলা কাব্য সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯২৫ সালে নিখিল ভারত সাহিত্য সংঘ মহাকবিকে কাব্যভূষণ, বিদ্যাভূষণ ও সাহিত্যরত্ন উপাধিতে ভূষিত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত