তরুণ চক্রবর্তী

সামনের বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। আর কংগ্রেসের রাজনীতি এখনো গান্ধী পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তাই জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীদের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীকে ঘিরেই ফের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিপরীতে বিজেপির কাছে রাহুল কিছুদিন আগেও ছিলেন ‘পাপ্পু’ বা বাচ্চা ছেলে। কিন্তু ভারত জোড়ো পদযাত্রার পর সেই পাপ্পুই এখন বিজেপির আক্রমণের মূল নিশানায়। তাই রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়েও রাহুলকে পরাস্ত করা তাদের লক্ষ্য।
গুজরাটের সুরাট আদালতের রায়ে আপাতত বিজেপির সেই কৌশল অনেকটাই সফল হয়েছে। কারণ, দুই বছর কারাদণ্ডের সাজা ঘোষিত হতেই রাহুল জাতীয় সংসদের সদস্য পদের পাশাপাশি ছয় বছরের জন্য ভোটে লড়াইয়ের অধিকার হারিয়েছেন। উচ্চ আদালতই একমাত্র তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারেন সেই অধিকার। এই জটিল প্রক্রিয়ায় প্রধান বিরোধী দলকে পেছনে ফেলে সরকারবিরোধী প্রচারের আলোটা বিজেপি সহজেই নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস হলেও বহুকাল আগেই তাঁদের একক শক্তিতে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন অস্তমিত। আঞ্চলিক দলগুলোর জোটই তাদের ভরসা।জোটেও জটিলতা রয়েছে। তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ অনেকেই কংগ্রেসকে মানতে নারাজ। কিন্তু তাঁদের শক্তি অনেক কম। বিজেপিবিরোধী শিবিরে কংগ্রেস ছাড়া আর কারও ক্ষমতাই নেই বিজেপিকে হারানোর। তাই কংগ্রেসকে দুর্বল করাটাই বিজেপির পক্ষে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে আটকাতে মরিয়া বিজেপি।
বিজেপির মুখ নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছেন রাহুল। ফ্রান্স থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা থেকে শুরু করে ফোনে আড়ি পাতা কিংবা শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে হিনডেনবার্গের রিপোর্ট—সবকিছুতেই তিনি মোদির সমালোচনায় সিদ্ধহস্ত। দীর্ঘ ভারত জোড়ো পদযাত্রায়ও মোদির বিরুদ্ধে তিনি প্রচার চালিয়েছেন। মানুষের নিত্যদিনের সমস্যা, বেকারত্ব বৃদ্ধি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতেও রাহুল মোদির বিরোধিতায় সরব। আগে রাহুলের রাজনীতিতে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল প্রকট। মাঠের রাজনীতির বদলে সামাজিক গণমাধ্যমেই বেশি সক্রিয় দেখা গেছে তাঁকে। কিন্তু ইদানীং তিনি অনেক বেশি সক্রিয় হতেই আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়েছে বিজেপি।
রাহুল মুখ খুললেই বিতর্ক খুঁজতে ব্যস্ত বিজেপি। রাজনৈতিকভাবে তাঁর মোকাবিলার পাশাপাশি চলছে পুলিশ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরিকে নাজেহাল করার কৌশল। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে মোদি-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে শাসক দলকে নাজেহাল করার কৌশল নিয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু বিলেতে রাহুলের বক্তৃতাকে অস্ত্র করে বিরোধীদের সব প্রচেষ্টা বিফল করে তোলেন বিজেপির নেতারা। রাহুল লন্ডনে বলেছিলেন, ‘সংসদে বিরোধীদের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ এই মন্তব্য দেশের সম্মানের পক্ষে হানিকর বলে অভিযোগ করে সংসদের অধিবেশনকেই অচল করে দেয় শাসক দল। আদানি নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধীরা কিছু বলারই সুযোগ পায়নি।
ভারতের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় ভাগ খোদ শাসক দলই ভন্ডুল করে চলেছে। গোটা অধিবেশনই হয়ে দাঁড়িয়েছে আদানি বনাম রাহুল। বিরোধীদের সম্মিলিত দাবি, আদানির বিরুদ্ধে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করতে হবে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তা নিয়েও তাঁরা আলোচনার দাবিতে সরব। কিন্তু শাসকপক্ষের পাল্টা দাবি, আগে রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে, তারপর আলোচনা। কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা সরকারপক্ষের সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। তাই বিনা ভোটাভুটিতে পাস হয় অর্থবিল। বিরোধীরা কথা বলারই সুযোগ পাচ্ছেন না সংসদে।
সংসদের অচলাবস্থার মধ্যেই ঘোষিত হয়, গুজরাটের সুরাট আদালতের রায়। ২০১৯ সালে রাহুল বলেছিলেন, ‘সব চোরদের পদবি কি মোদি হয়?’ মোদি গুজরাটের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় বা ওবিসিদের একটি বড় অংশের পদবি। তাই বিজেপির সাংসদ পূর্ণেশ মোদি সুরাট আদালতে মানহানির মামলা করেন এবং সেই মামলায় সম্প্রতি রায় ঘোষিত হয়। এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে রায়কে উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জ করার। কংগ্রেস সেটা করবেও। কিন্তু তার আগেই খারিজ হয় রাহুলের সদস্য পদ। আইনজ্ঞদের একাংশের মতে, নিম্ন আদালতের রায় ধোপে টিকবে না। উচ্চ আদালত থেকে রেহাই পাবেন সাবেক কংগ্রেস সভাপতি। বিজেপি নেতারাও অনেকেই একান্ত আলোচনায় এই মতের সঙ্গে সহমত। আদালতের রায় নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করা বারণ। তাই কেউই মুখ খুলছেন না। তাই রাহুলও আদালতের রায়ের বদলে আদানি ইস্যুতেই ঘায়েল করতে চাইছেন বিজেপিকে।
প্রশ্ন উঠছে, রাহুলের এই সাজাপ্রাপ্তিতে কার লাভ হলো? অনেকেই মনে করেন, একটা সহানুভূতির হাওয়া বইতে শুরু করেছে কংগ্রেসের অনুকূলে। নেতারা রাজনৈতিক বক্তৃতায় অনেক সময়ই বেফাঁস মন্তব্য করে থাকেন। তার জন্য এমন সাজা বিরলতম, বিজেপির বড় অংশও একমত। অনেকেই রাহুলকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছেন রাহুল নিজেই। কংগ্রেস চাইছে মানুষের সহানুভূতি আদায় করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে।
ভারতের বিজেপিবিরোধীরা কমবেশি সবাই বর্তমান শাসক দলের আমলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই বা ইডির তদন্তে নাজেহাল। বিভিন্ন রাজ্যে একাধিক নেতা-মন্ত্রী বিভিন্ন অভিযোগে মন্ত্রিত্ব খুইয়ে এখন জেলবন্দী। আরও অনেকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় সাজাপ্রাপ্তি রাহুলের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে।বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতেও সহায়ক হতে পারে এই শাস্তি। সেদিক থেকে কংগ্রেস কিছুটা লাভবান।
অন্যদিকে, বিজেপি শিবিরের অঙ্কটা অন্য। মোদির কঠোর সমালোচক রাহুলের মুখ বন্ধ করতে চায় বিজেপি। শুধু মোদি পদবি নিয়ে কটাক্ষ বা বিলেতে গিয়ে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে কুমন্তব্যই নয়, বিভিন্ন সময়ে রাহুলের মন্তব্য নিয়ে একাধিক অভিযোগ বিভিন্ন আদালতে নথিভুক্ত রয়েছে। তাই রাজনৈতিক আক্রমণের পাশাপাশি রাহুলকে মামলায়-মামলায় জর্জরিত করাটাও তাদের কৌশল। সেই সঙ্গে রাহুলকে সংসদীয় রাজনীতি থেকে হটাতে পারলে মোদিবিরোধী কোনো মুখই দাঁড় করাতে পারবে না বিরোধীরা। এ ক্ষেত্রে বিরোধী ঐক্যও হয়ে উঠবে কষ্টকল্পিত। কারণ, বিরোধী শিবিরের অনেকেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চান। রাহুল তাঁদের থেকে একটু এগিয়ে। তিনি ছিটকে গেলে আর কোনো প্যান-ইন্ডিয়া মুখ আপাতত নেই।
তাই প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে রাহুল না থাকলে বিজেপির জন্য অনেক সহজ হবে নির্বাচনী জয়লাভ। তাই রাহুলকেই চাঁদমারি করছে বিজেপি। রাহুল অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি ভয় পেতে শেখেননি। লড়াই চালাবেন। মোদির কঠোর সমালোচক হিসেবে তিনি আদালতের রায়ের পরও প্রশ্নবাণ নিক্ষেপে কার্পণ্য দেখাতে রাজি নন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, লড়াইয়ের ময়দান তিনি ছাড়ছেন না। এখন দেখার, সেই লড়াইয়ে কে জেতে। সামনেই কর্ণাটক বিধানসভার ভোট। সেখানে লড়াই কিন্তু হাড্ডাহাড্ডি হবে। কর্ণাটকের ভোটযুদ্ধে জয়লাভ ২০২৪ সালের জন্য মনোবল বাড়াবে জয়ী দলের। তাই এখন লক্ষ্য কর্ণাটক। সেখান থেকেই মিলতে পারে আভাস।
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, আজকের পত্রিকা

সামনের বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। আর কংগ্রেসের রাজনীতি এখনো গান্ধী পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তাই জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীদের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীকে ঘিরেই ফের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিপরীতে বিজেপির কাছে রাহুল কিছুদিন আগেও ছিলেন ‘পাপ্পু’ বা বাচ্চা ছেলে। কিন্তু ভারত জোড়ো পদযাত্রার পর সেই পাপ্পুই এখন বিজেপির আক্রমণের মূল নিশানায়। তাই রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়েও রাহুলকে পরাস্ত করা তাদের লক্ষ্য।
গুজরাটের সুরাট আদালতের রায়ে আপাতত বিজেপির সেই কৌশল অনেকটাই সফল হয়েছে। কারণ, দুই বছর কারাদণ্ডের সাজা ঘোষিত হতেই রাহুল জাতীয় সংসদের সদস্য পদের পাশাপাশি ছয় বছরের জন্য ভোটে লড়াইয়ের অধিকার হারিয়েছেন। উচ্চ আদালতই একমাত্র তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারেন সেই অধিকার। এই জটিল প্রক্রিয়ায় প্রধান বিরোধী দলকে পেছনে ফেলে সরকারবিরোধী প্রচারের আলোটা বিজেপি সহজেই নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস হলেও বহুকাল আগেই তাঁদের একক শক্তিতে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন অস্তমিত। আঞ্চলিক দলগুলোর জোটই তাদের ভরসা।জোটেও জটিলতা রয়েছে। তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ অনেকেই কংগ্রেসকে মানতে নারাজ। কিন্তু তাঁদের শক্তি অনেক কম। বিজেপিবিরোধী শিবিরে কংগ্রেস ছাড়া আর কারও ক্ষমতাই নেই বিজেপিকে হারানোর। তাই কংগ্রেসকে দুর্বল করাটাই বিজেপির পক্ষে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে আটকাতে মরিয়া বিজেপি।
বিজেপির মুখ নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছেন রাহুল। ফ্রান্স থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা থেকে শুরু করে ফোনে আড়ি পাতা কিংবা শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে হিনডেনবার্গের রিপোর্ট—সবকিছুতেই তিনি মোদির সমালোচনায় সিদ্ধহস্ত। দীর্ঘ ভারত জোড়ো পদযাত্রায়ও মোদির বিরুদ্ধে তিনি প্রচার চালিয়েছেন। মানুষের নিত্যদিনের সমস্যা, বেকারত্ব বৃদ্ধি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতেও রাহুল মোদির বিরোধিতায় সরব। আগে রাহুলের রাজনীতিতে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল প্রকট। মাঠের রাজনীতির বদলে সামাজিক গণমাধ্যমেই বেশি সক্রিয় দেখা গেছে তাঁকে। কিন্তু ইদানীং তিনি অনেক বেশি সক্রিয় হতেই আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়েছে বিজেপি।
রাহুল মুখ খুললেই বিতর্ক খুঁজতে ব্যস্ত বিজেপি। রাজনৈতিকভাবে তাঁর মোকাবিলার পাশাপাশি চলছে পুলিশ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরিকে নাজেহাল করার কৌশল। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে মোদি-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে শাসক দলকে নাজেহাল করার কৌশল নিয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু বিলেতে রাহুলের বক্তৃতাকে অস্ত্র করে বিরোধীদের সব প্রচেষ্টা বিফল করে তোলেন বিজেপির নেতারা। রাহুল লন্ডনে বলেছিলেন, ‘সংসদে বিরোধীদের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ এই মন্তব্য দেশের সম্মানের পক্ষে হানিকর বলে অভিযোগ করে সংসদের অধিবেশনকেই অচল করে দেয় শাসক দল। আদানি নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধীরা কিছু বলারই সুযোগ পায়নি।
ভারতের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় ভাগ খোদ শাসক দলই ভন্ডুল করে চলেছে। গোটা অধিবেশনই হয়ে দাঁড়িয়েছে আদানি বনাম রাহুল। বিরোধীদের সম্মিলিত দাবি, আদানির বিরুদ্ধে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করতে হবে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তা নিয়েও তাঁরা আলোচনার দাবিতে সরব। কিন্তু শাসকপক্ষের পাল্টা দাবি, আগে রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে, তারপর আলোচনা। কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা সরকারপক্ষের সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। তাই বিনা ভোটাভুটিতে পাস হয় অর্থবিল। বিরোধীরা কথা বলারই সুযোগ পাচ্ছেন না সংসদে।
সংসদের অচলাবস্থার মধ্যেই ঘোষিত হয়, গুজরাটের সুরাট আদালতের রায়। ২০১৯ সালে রাহুল বলেছিলেন, ‘সব চোরদের পদবি কি মোদি হয়?’ মোদি গুজরাটের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় বা ওবিসিদের একটি বড় অংশের পদবি। তাই বিজেপির সাংসদ পূর্ণেশ মোদি সুরাট আদালতে মানহানির মামলা করেন এবং সেই মামলায় সম্প্রতি রায় ঘোষিত হয়। এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে রায়কে উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জ করার। কংগ্রেস সেটা করবেও। কিন্তু তার আগেই খারিজ হয় রাহুলের সদস্য পদ। আইনজ্ঞদের একাংশের মতে, নিম্ন আদালতের রায় ধোপে টিকবে না। উচ্চ আদালত থেকে রেহাই পাবেন সাবেক কংগ্রেস সভাপতি। বিজেপি নেতারাও অনেকেই একান্ত আলোচনায় এই মতের সঙ্গে সহমত। আদালতের রায় নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করা বারণ। তাই কেউই মুখ খুলছেন না। তাই রাহুলও আদালতের রায়ের বদলে আদানি ইস্যুতেই ঘায়েল করতে চাইছেন বিজেপিকে।
প্রশ্ন উঠছে, রাহুলের এই সাজাপ্রাপ্তিতে কার লাভ হলো? অনেকেই মনে করেন, একটা সহানুভূতির হাওয়া বইতে শুরু করেছে কংগ্রেসের অনুকূলে। নেতারা রাজনৈতিক বক্তৃতায় অনেক সময়ই বেফাঁস মন্তব্য করে থাকেন। তার জন্য এমন সাজা বিরলতম, বিজেপির বড় অংশও একমত। অনেকেই রাহুলকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছেন রাহুল নিজেই। কংগ্রেস চাইছে মানুষের সহানুভূতি আদায় করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে।
ভারতের বিজেপিবিরোধীরা কমবেশি সবাই বর্তমান শাসক দলের আমলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই বা ইডির তদন্তে নাজেহাল। বিভিন্ন রাজ্যে একাধিক নেতা-মন্ত্রী বিভিন্ন অভিযোগে মন্ত্রিত্ব খুইয়ে এখন জেলবন্দী। আরও অনেকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় সাজাপ্রাপ্তি রাহুলের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে।বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতেও সহায়ক হতে পারে এই শাস্তি। সেদিক থেকে কংগ্রেস কিছুটা লাভবান।
অন্যদিকে, বিজেপি শিবিরের অঙ্কটা অন্য। মোদির কঠোর সমালোচক রাহুলের মুখ বন্ধ করতে চায় বিজেপি। শুধু মোদি পদবি নিয়ে কটাক্ষ বা বিলেতে গিয়ে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে কুমন্তব্যই নয়, বিভিন্ন সময়ে রাহুলের মন্তব্য নিয়ে একাধিক অভিযোগ বিভিন্ন আদালতে নথিভুক্ত রয়েছে। তাই রাজনৈতিক আক্রমণের পাশাপাশি রাহুলকে মামলায়-মামলায় জর্জরিত করাটাও তাদের কৌশল। সেই সঙ্গে রাহুলকে সংসদীয় রাজনীতি থেকে হটাতে পারলে মোদিবিরোধী কোনো মুখই দাঁড় করাতে পারবে না বিরোধীরা। এ ক্ষেত্রে বিরোধী ঐক্যও হয়ে উঠবে কষ্টকল্পিত। কারণ, বিরোধী শিবিরের অনেকেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চান। রাহুল তাঁদের থেকে একটু এগিয়ে। তিনি ছিটকে গেলে আর কোনো প্যান-ইন্ডিয়া মুখ আপাতত নেই।
তাই প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে রাহুল না থাকলে বিজেপির জন্য অনেক সহজ হবে নির্বাচনী জয়লাভ। তাই রাহুলকেই চাঁদমারি করছে বিজেপি। রাহুল অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি ভয় পেতে শেখেননি। লড়াই চালাবেন। মোদির কঠোর সমালোচক হিসেবে তিনি আদালতের রায়ের পরও প্রশ্নবাণ নিক্ষেপে কার্পণ্য দেখাতে রাজি নন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, লড়াইয়ের ময়দান তিনি ছাড়ছেন না। এখন দেখার, সেই লড়াইয়ে কে জেতে। সামনেই কর্ণাটক বিধানসভার ভোট। সেখানে লড়াই কিন্তু হাড্ডাহাড্ডি হবে। কর্ণাটকের ভোটযুদ্ধে জয়লাভ ২০২৪ সালের জন্য মনোবল বাড়াবে জয়ী দলের। তাই এখন লক্ষ্য কর্ণাটক। সেখান থেকেই মিলতে পারে আভাস।
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, আজকের পত্রিকা
তরুণ চক্রবর্তী

সামনের বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। আর কংগ্রেসের রাজনীতি এখনো গান্ধী পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তাই জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীদের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীকে ঘিরেই ফের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিপরীতে বিজেপির কাছে রাহুল কিছুদিন আগেও ছিলেন ‘পাপ্পু’ বা বাচ্চা ছেলে। কিন্তু ভারত জোড়ো পদযাত্রার পর সেই পাপ্পুই এখন বিজেপির আক্রমণের মূল নিশানায়। তাই রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়েও রাহুলকে পরাস্ত করা তাদের লক্ষ্য।
গুজরাটের সুরাট আদালতের রায়ে আপাতত বিজেপির সেই কৌশল অনেকটাই সফল হয়েছে। কারণ, দুই বছর কারাদণ্ডের সাজা ঘোষিত হতেই রাহুল জাতীয় সংসদের সদস্য পদের পাশাপাশি ছয় বছরের জন্য ভোটে লড়াইয়ের অধিকার হারিয়েছেন। উচ্চ আদালতই একমাত্র তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারেন সেই অধিকার। এই জটিল প্রক্রিয়ায় প্রধান বিরোধী দলকে পেছনে ফেলে সরকারবিরোধী প্রচারের আলোটা বিজেপি সহজেই নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস হলেও বহুকাল আগেই তাঁদের একক শক্তিতে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন অস্তমিত। আঞ্চলিক দলগুলোর জোটই তাদের ভরসা।জোটেও জটিলতা রয়েছে। তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ অনেকেই কংগ্রেসকে মানতে নারাজ। কিন্তু তাঁদের শক্তি অনেক কম। বিজেপিবিরোধী শিবিরে কংগ্রেস ছাড়া আর কারও ক্ষমতাই নেই বিজেপিকে হারানোর। তাই কংগ্রেসকে দুর্বল করাটাই বিজেপির পক্ষে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে আটকাতে মরিয়া বিজেপি।
বিজেপির মুখ নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছেন রাহুল। ফ্রান্স থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা থেকে শুরু করে ফোনে আড়ি পাতা কিংবা শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে হিনডেনবার্গের রিপোর্ট—সবকিছুতেই তিনি মোদির সমালোচনায় সিদ্ধহস্ত। দীর্ঘ ভারত জোড়ো পদযাত্রায়ও মোদির বিরুদ্ধে তিনি প্রচার চালিয়েছেন। মানুষের নিত্যদিনের সমস্যা, বেকারত্ব বৃদ্ধি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতেও রাহুল মোদির বিরোধিতায় সরব। আগে রাহুলের রাজনীতিতে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল প্রকট। মাঠের রাজনীতির বদলে সামাজিক গণমাধ্যমেই বেশি সক্রিয় দেখা গেছে তাঁকে। কিন্তু ইদানীং তিনি অনেক বেশি সক্রিয় হতেই আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়েছে বিজেপি।
রাহুল মুখ খুললেই বিতর্ক খুঁজতে ব্যস্ত বিজেপি। রাজনৈতিকভাবে তাঁর মোকাবিলার পাশাপাশি চলছে পুলিশ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরিকে নাজেহাল করার কৌশল। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে মোদি-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে শাসক দলকে নাজেহাল করার কৌশল নিয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু বিলেতে রাহুলের বক্তৃতাকে অস্ত্র করে বিরোধীদের সব প্রচেষ্টা বিফল করে তোলেন বিজেপির নেতারা। রাহুল লন্ডনে বলেছিলেন, ‘সংসদে বিরোধীদের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ এই মন্তব্য দেশের সম্মানের পক্ষে হানিকর বলে অভিযোগ করে সংসদের অধিবেশনকেই অচল করে দেয় শাসক দল। আদানি নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধীরা কিছু বলারই সুযোগ পায়নি।
ভারতের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় ভাগ খোদ শাসক দলই ভন্ডুল করে চলেছে। গোটা অধিবেশনই হয়ে দাঁড়িয়েছে আদানি বনাম রাহুল। বিরোধীদের সম্মিলিত দাবি, আদানির বিরুদ্ধে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করতে হবে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তা নিয়েও তাঁরা আলোচনার দাবিতে সরব। কিন্তু শাসকপক্ষের পাল্টা দাবি, আগে রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে, তারপর আলোচনা। কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা সরকারপক্ষের সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। তাই বিনা ভোটাভুটিতে পাস হয় অর্থবিল। বিরোধীরা কথা বলারই সুযোগ পাচ্ছেন না সংসদে।
সংসদের অচলাবস্থার মধ্যেই ঘোষিত হয়, গুজরাটের সুরাট আদালতের রায়। ২০১৯ সালে রাহুল বলেছিলেন, ‘সব চোরদের পদবি কি মোদি হয়?’ মোদি গুজরাটের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় বা ওবিসিদের একটি বড় অংশের পদবি। তাই বিজেপির সাংসদ পূর্ণেশ মোদি সুরাট আদালতে মানহানির মামলা করেন এবং সেই মামলায় সম্প্রতি রায় ঘোষিত হয়। এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে রায়কে উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জ করার। কংগ্রেস সেটা করবেও। কিন্তু তার আগেই খারিজ হয় রাহুলের সদস্য পদ। আইনজ্ঞদের একাংশের মতে, নিম্ন আদালতের রায় ধোপে টিকবে না। উচ্চ আদালত থেকে রেহাই পাবেন সাবেক কংগ্রেস সভাপতি। বিজেপি নেতারাও অনেকেই একান্ত আলোচনায় এই মতের সঙ্গে সহমত। আদালতের রায় নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করা বারণ। তাই কেউই মুখ খুলছেন না। তাই রাহুলও আদালতের রায়ের বদলে আদানি ইস্যুতেই ঘায়েল করতে চাইছেন বিজেপিকে।
প্রশ্ন উঠছে, রাহুলের এই সাজাপ্রাপ্তিতে কার লাভ হলো? অনেকেই মনে করেন, একটা সহানুভূতির হাওয়া বইতে শুরু করেছে কংগ্রেসের অনুকূলে। নেতারা রাজনৈতিক বক্তৃতায় অনেক সময়ই বেফাঁস মন্তব্য করে থাকেন। তার জন্য এমন সাজা বিরলতম, বিজেপির বড় অংশও একমত। অনেকেই রাহুলকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছেন রাহুল নিজেই। কংগ্রেস চাইছে মানুষের সহানুভূতি আদায় করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে।
ভারতের বিজেপিবিরোধীরা কমবেশি সবাই বর্তমান শাসক দলের আমলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই বা ইডির তদন্তে নাজেহাল। বিভিন্ন রাজ্যে একাধিক নেতা-মন্ত্রী বিভিন্ন অভিযোগে মন্ত্রিত্ব খুইয়ে এখন জেলবন্দী। আরও অনেকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় সাজাপ্রাপ্তি রাহুলের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে।বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতেও সহায়ক হতে পারে এই শাস্তি। সেদিক থেকে কংগ্রেস কিছুটা লাভবান।
অন্যদিকে, বিজেপি শিবিরের অঙ্কটা অন্য। মোদির কঠোর সমালোচক রাহুলের মুখ বন্ধ করতে চায় বিজেপি। শুধু মোদি পদবি নিয়ে কটাক্ষ বা বিলেতে গিয়ে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে কুমন্তব্যই নয়, বিভিন্ন সময়ে রাহুলের মন্তব্য নিয়ে একাধিক অভিযোগ বিভিন্ন আদালতে নথিভুক্ত রয়েছে। তাই রাজনৈতিক আক্রমণের পাশাপাশি রাহুলকে মামলায়-মামলায় জর্জরিত করাটাও তাদের কৌশল। সেই সঙ্গে রাহুলকে সংসদীয় রাজনীতি থেকে হটাতে পারলে মোদিবিরোধী কোনো মুখই দাঁড় করাতে পারবে না বিরোধীরা। এ ক্ষেত্রে বিরোধী ঐক্যও হয়ে উঠবে কষ্টকল্পিত। কারণ, বিরোধী শিবিরের অনেকেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চান। রাহুল তাঁদের থেকে একটু এগিয়ে। তিনি ছিটকে গেলে আর কোনো প্যান-ইন্ডিয়া মুখ আপাতত নেই।
তাই প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে রাহুল না থাকলে বিজেপির জন্য অনেক সহজ হবে নির্বাচনী জয়লাভ। তাই রাহুলকেই চাঁদমারি করছে বিজেপি। রাহুল অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি ভয় পেতে শেখেননি। লড়াই চালাবেন। মোদির কঠোর সমালোচক হিসেবে তিনি আদালতের রায়ের পরও প্রশ্নবাণ নিক্ষেপে কার্পণ্য দেখাতে রাজি নন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, লড়াইয়ের ময়দান তিনি ছাড়ছেন না। এখন দেখার, সেই লড়াইয়ে কে জেতে। সামনেই কর্ণাটক বিধানসভার ভোট। সেখানে লড়াই কিন্তু হাড্ডাহাড্ডি হবে। কর্ণাটকের ভোটযুদ্ধে জয়লাভ ২০২৪ সালের জন্য মনোবল বাড়াবে জয়ী দলের। তাই এখন লক্ষ্য কর্ণাটক। সেখান থেকেই মিলতে পারে আভাস।
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, আজকের পত্রিকা

সামনের বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। আর কংগ্রেসের রাজনীতি এখনো গান্ধী পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তাই জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীদের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীকে ঘিরেই ফের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিপরীতে বিজেপির কাছে রাহুল কিছুদিন আগেও ছিলেন ‘পাপ্পু’ বা বাচ্চা ছেলে। কিন্তু ভারত জোড়ো পদযাত্রার পর সেই পাপ্পুই এখন বিজেপির আক্রমণের মূল নিশানায়। তাই রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়েও রাহুলকে পরাস্ত করা তাদের লক্ষ্য।
গুজরাটের সুরাট আদালতের রায়ে আপাতত বিজেপির সেই কৌশল অনেকটাই সফল হয়েছে। কারণ, দুই বছর কারাদণ্ডের সাজা ঘোষিত হতেই রাহুল জাতীয় সংসদের সদস্য পদের পাশাপাশি ছয় বছরের জন্য ভোটে লড়াইয়ের অধিকার হারিয়েছেন। উচ্চ আদালতই একমাত্র তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারেন সেই অধিকার। এই জটিল প্রক্রিয়ায় প্রধান বিরোধী দলকে পেছনে ফেলে সরকারবিরোধী প্রচারের আলোটা বিজেপি সহজেই নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস হলেও বহুকাল আগেই তাঁদের একক শক্তিতে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন অস্তমিত। আঞ্চলিক দলগুলোর জোটই তাদের ভরসা।জোটেও জটিলতা রয়েছে। তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ অনেকেই কংগ্রেসকে মানতে নারাজ। কিন্তু তাঁদের শক্তি অনেক কম। বিজেপিবিরোধী শিবিরে কংগ্রেস ছাড়া আর কারও ক্ষমতাই নেই বিজেপিকে হারানোর। তাই কংগ্রেসকে দুর্বল করাটাই বিজেপির পক্ষে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সাবেক কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে আটকাতে মরিয়া বিজেপি।
বিজেপির মুখ নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছেন রাহুল। ফ্রান্স থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা থেকে শুরু করে ফোনে আড়ি পাতা কিংবা শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে হিনডেনবার্গের রিপোর্ট—সবকিছুতেই তিনি মোদির সমালোচনায় সিদ্ধহস্ত। দীর্ঘ ভারত জোড়ো পদযাত্রায়ও মোদির বিরুদ্ধে তিনি প্রচার চালিয়েছেন। মানুষের নিত্যদিনের সমস্যা, বেকারত্ব বৃদ্ধি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতেও রাহুল মোদির বিরোধিতায় সরব। আগে রাহুলের রাজনীতিতে ধারাবাহিকতার অভাব ছিল প্রকট। মাঠের রাজনীতির বদলে সামাজিক গণমাধ্যমেই বেশি সক্রিয় দেখা গেছে তাঁকে। কিন্তু ইদানীং তিনি অনেক বেশি সক্রিয় হতেই আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়েছে বিজেপি।
রাহুল মুখ খুললেই বিতর্ক খুঁজতে ব্যস্ত বিজেপি। রাজনৈতিকভাবে তাঁর মোকাবিলার পাশাপাশি চলছে পুলিশ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরিকে নাজেহাল করার কৌশল। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে মোদি-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে শাসক দলকে নাজেহাল করার কৌশল নিয়েছিল বিরোধীরা। কিন্তু বিলেতে রাহুলের বক্তৃতাকে অস্ত্র করে বিরোধীদের সব প্রচেষ্টা বিফল করে তোলেন বিজেপির নেতারা। রাহুল লন্ডনে বলেছিলেন, ‘সংসদে বিরোধীদের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ এই মন্তব্য দেশের সম্মানের পক্ষে হানিকর বলে অভিযোগ করে সংসদের অধিবেশনকেই অচল করে দেয় শাসক দল। আদানি নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধীরা কিছু বলারই সুযোগ পায়নি।
ভারতের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় ভাগ খোদ শাসক দলই ভন্ডুল করে চলেছে। গোটা অধিবেশনই হয়ে দাঁড়িয়েছে আদানি বনাম রাহুল। বিরোধীদের সম্মিলিত দাবি, আদানির বিরুদ্ধে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করতে হবে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তা নিয়েও তাঁরা আলোচনার দাবিতে সরব। কিন্তু শাসকপক্ষের পাল্টা দাবি, আগে রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে, তারপর আলোচনা। কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা সরকারপক্ষের সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। তাই বিনা ভোটাভুটিতে পাস হয় অর্থবিল। বিরোধীরা কথা বলারই সুযোগ পাচ্ছেন না সংসদে।
সংসদের অচলাবস্থার মধ্যেই ঘোষিত হয়, গুজরাটের সুরাট আদালতের রায়। ২০১৯ সালে রাহুল বলেছিলেন, ‘সব চোরদের পদবি কি মোদি হয়?’ মোদি গুজরাটের অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় বা ওবিসিদের একটি বড় অংশের পদবি। তাই বিজেপির সাংসদ পূর্ণেশ মোদি সুরাট আদালতে মানহানির মামলা করেন এবং সেই মামলায় সম্প্রতি রায় ঘোষিত হয়। এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে রায়কে উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জ করার। কংগ্রেস সেটা করবেও। কিন্তু তার আগেই খারিজ হয় রাহুলের সদস্য পদ। আইনজ্ঞদের একাংশের মতে, নিম্ন আদালতের রায় ধোপে টিকবে না। উচ্চ আদালত থেকে রেহাই পাবেন সাবেক কংগ্রেস সভাপতি। বিজেপি নেতারাও অনেকেই একান্ত আলোচনায় এই মতের সঙ্গে সহমত। আদালতের রায় নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করা বারণ। তাই কেউই মুখ খুলছেন না। তাই রাহুলও আদালতের রায়ের বদলে আদানি ইস্যুতেই ঘায়েল করতে চাইছেন বিজেপিকে।
প্রশ্ন উঠছে, রাহুলের এই সাজাপ্রাপ্তিতে কার লাভ হলো? অনেকেই মনে করেন, একটা সহানুভূতির হাওয়া বইতে শুরু করেছে কংগ্রেসের অনুকূলে। নেতারা রাজনৈতিক বক্তৃতায় অনেক সময়ই বেফাঁস মন্তব্য করে থাকেন। তার জন্য এমন সাজা বিরলতম, বিজেপির বড় অংশও একমত। অনেকেই রাহুলকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছেন রাহুল নিজেই। কংগ্রেস চাইছে মানুষের সহানুভূতি আদায় করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে।
ভারতের বিজেপিবিরোধীরা কমবেশি সবাই বর্তমান শাসক দলের আমলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই বা ইডির তদন্তে নাজেহাল। বিভিন্ন রাজ্যে একাধিক নেতা-মন্ত্রী বিভিন্ন অভিযোগে মন্ত্রিত্ব খুইয়ে এখন জেলবন্দী। আরও অনেকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ অবস্থায় সাজাপ্রাপ্তি রাহুলের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে।বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতেও সহায়ক হতে পারে এই শাস্তি। সেদিক থেকে কংগ্রেস কিছুটা লাভবান।
অন্যদিকে, বিজেপি শিবিরের অঙ্কটা অন্য। মোদির কঠোর সমালোচক রাহুলের মুখ বন্ধ করতে চায় বিজেপি। শুধু মোদি পদবি নিয়ে কটাক্ষ বা বিলেতে গিয়ে দেশের গণতন্ত্র নিয়ে কুমন্তব্যই নয়, বিভিন্ন সময়ে রাহুলের মন্তব্য নিয়ে একাধিক অভিযোগ বিভিন্ন আদালতে নথিভুক্ত রয়েছে। তাই রাজনৈতিক আক্রমণের পাশাপাশি রাহুলকে মামলায়-মামলায় জর্জরিত করাটাও তাদের কৌশল। সেই সঙ্গে রাহুলকে সংসদীয় রাজনীতি থেকে হটাতে পারলে মোদিবিরোধী কোনো মুখই দাঁড় করাতে পারবে না বিরোধীরা। এ ক্ষেত্রে বিরোধী ঐক্যও হয়ে উঠবে কষ্টকল্পিত। কারণ, বিরোধী শিবিরের অনেকেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চান। রাহুল তাঁদের থেকে একটু এগিয়ে। তিনি ছিটকে গেলে আর কোনো প্যান-ইন্ডিয়া মুখ আপাতত নেই।
তাই প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে রাহুল না থাকলে বিজেপির জন্য অনেক সহজ হবে নির্বাচনী জয়লাভ। তাই রাহুলকেই চাঁদমারি করছে বিজেপি। রাহুল অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি ভয় পেতে শেখেননি। লড়াই চালাবেন। মোদির কঠোর সমালোচক হিসেবে তিনি আদালতের রায়ের পরও প্রশ্নবাণ নিক্ষেপে কার্পণ্য দেখাতে রাজি নন। বুঝিয়ে দিয়েছেন, লড়াইয়ের ময়দান তিনি ছাড়ছেন না। এখন দেখার, সেই লড়াইয়ে কে জেতে। সামনেই কর্ণাটক বিধানসভার ভোট। সেখানে লড়াই কিন্তু হাড্ডাহাড্ডি হবে। কর্ণাটকের ভোটযুদ্ধে জয়লাভ ২০২৪ সালের জন্য মনোবল বাড়াবে জয়ী দলের। তাই এখন লক্ষ্য কর্ণাটক। সেখান থেকেই মিলতে পারে আভাস।
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

সামনের বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। আর কংগ্রেসের রাজনীতি এখনো গান্ধী পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তাই জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীদের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীকে ঘিরেই ফের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা।
২৮ মার্চ ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

সামনের বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। আর কংগ্রেসের রাজনীতি এখনো গান্ধী পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তাই জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীদের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীকে ঘিরেই ফের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা।
২৮ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

সামনের বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। আর কংগ্রেসের রাজনীতি এখনো গান্ধী পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তাই জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীদের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীকে ঘিরেই ফের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা।
২৮ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

সামনের বছর ভারতের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। আর কংগ্রেসের রাজনীতি এখনো গান্ধী পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তাই জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীদের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীকে ঘিরেই ফের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখেন কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা।
২৮ মার্চ ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
১৯ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫