Ajker Patrika

মুখিকচু চাষে ক্ষতিতে কৃষক

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২১, ১৯: ২০
মুখিকচু চাষে ক্ষতিতে কৃষক

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা ও আশপাশে এক দশক ধরে কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে মুখিকচুর চাষাবাদ হচ্ছে। ভালো ফলন ও বাজারদর ভালো থাকায় মুখিকচু চাষে আগ্রহী হয়েছিলেন শত শত প্রান্তিক কৃষক। কিন্তু এ বছর অনাবৃষ্টির কারণে অল্পসংখ্যক কৃষক মুখিকচু চাষ করেও এখন পুঁজি হারানোর পথে। প্রতি কানি (৪০ শতাংশ) জমিতে কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

চাষিরা জানান, প্রতি কানি কচু লাগানো ও ফসল তোলায় ৮২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। এতে কানিপ্রতি গড় উৎপাদন ৮০ মণ। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ মুখিকচু গড়ে ৫০০ টাকা হারে বিক্রি করে তাঁরা পাচ্ছেন ৪০ হাজার টাকা। এতে প্রতি কানিতেই কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁদের।

উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমন গুপ্ত আজকের পত্রিকাকে জানান, গত এক দশকে উপজেলার হাজারের বেশি হেক্টর টিলাজমিতে মুখিকচুর চাষ হতো। কিন্তু এ বছর মার্চ-এপ্রিলে কচু রোপণের সময় পাহাড়ে অনাবৃষ্টি থাকায় কচু চাষে ভাটা পড়েছে। শেষ মুহূর্তে মানিকছড়ি ও পার্শ্ববর্তী গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি এলাকাসহ প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই মুখিকচু চাষ করেছেন দেড় শতাধিক কৃষক। ফলন ভালো হলেও বাজারদর কম থাকায় খেত থেকে কচু তুলতেই চাইছেন না কৃষকেরা। আবার অনেকে তুলেও শ্রমিক খরচ, গাড়িভাড়া দিয়ে উল্টো লোকসানের বোঝা মাথায় উঠছে।

গত রোববার উপজেলার হাতিমুড়া, তিনটহরী ও গচ্ছাবিল কচু বিক্রির স্থানীয় বাজারে গিয়ে দেখা যায়, জিপ (চাঁদের গাড়ি) ও মোটরসাইকেলে বস্তায় বস্তায় কচু নিয়ে এসে বাজারে স্তূপ করছেন কৃষকেরা। তাঁদের কারও মুখে হাসি নেই। হাফছড়ি এলাকার কৃষক আল-আমিন সিকদার বলেন, পুঁজির অর্ধেক জমিতেই শেষ।

গচ্ছাবিল বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৫টি চাঁদের গাড়ি ও ট্রাক কচু ভর্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কোনো পাইকার নেই। অথচ গত বছরও এ সময় পাইকারদের হাঁকডাকে বাজার সরগরম থাকত।

ওই এলাকার কৃষক মো. বেলাল মোড়ল বলেন, ‘এ বছর বৃষ্টি না থাকায় কচু উৎপাদন ও ফসল তোলায় খরচ বেশি হচ্ছে। কিন্তু বাজারের যে দুরবস্থা, তাতে চাষিরা পথের ভিখারি। ৮০ কানি মুখিকচু চাষ করে আমার প্রায় ৩৫ লাখ টাকার পুঁজি শেষ।’

গত মঙ্গলবার উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট তিনটহরী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারের অপেক্ষায় কচু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন চাষিরা। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে এই মুখিকচু আনা হয়েছে বলে তাঁরা জানান।

কৃষক মো. মীর হোসেন ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, দুই বন্ধু প্রায় ৩৫ কানি মুখিকচুর চাষ করেছিলেন। কিন্তু এখন বাজারে পাইকার নেই, সমতলের আড়তেও কচুর কদর নেই!

পাইকার মো. রমজান আলী বলেন, ‘এ বছর বাজারে মুখিকচুর কদর নেই। গাড়িভাড়া, টোল খরচ দিয়ে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বাজারে প্রতি কেজি মুখিকচু খুচরা বিক্রি ২০ থেকে ২২ টাকা। কচুবোঝাই ট্রাক আড়তে গেলে আড়তদারদের তেমন সাড়া পাওয়া যায় না। এই অবস্থা চলতে থাকলে কচু কৃষকের জন্য বিষফোঁড়া হবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসিনুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণে এ বছর এখানে মুখিকচুর কচু চাষ কম হয়েছে। এখন দেখছি বাজারদর কম। এভাবে পুঁজিহারা হতে থাকলে ভবিষ্যতে মুখিকচু চাষে পাহাড়ের কৃষকেরা নিরুৎসাহিত হবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত