Ajker Patrika

লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা

মেহেরপুর সংবাদদাতা
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ২৭
লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা

ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন মেহেরপুরের কৃষকেরা। প্রতিটি ফসল আবাদে তাঁদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। এ অবস্থায় সামনের বোরো আবাদ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ তাঁদের কপালে। অনেক কৃষক ভাবছেন, তাঁরা এবার বিগত বছরের তুলনায় কম জমিতে বোরো আবাদ করবেন। এতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় বোরো আবাদে কৃষকদের খরচ বাড়বে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ বাজারে ধানের দাম বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছিল প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। এবার বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি।

মেহেরপুর সদর উপজেলার চাঁদবিল গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া জানান, গত বছরে ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। এবারও ইচ্ছা ছিল ৩ বিঘা জমিতে বোরো আবাদের। কিন্তু ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে বোরো আবাদে তাঁকে গুনতে হবে বাড়তি অর্থ। তেলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শুধু সেচ নয়, বেড়েছে কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্রতিটি জিনিসের দাম। তাই এ বছরে নিজের সংসার চালানোর জন্য ১ বিঘা জমিতে ধান আবাদের চিন্তা করছেন।

উজলপুর গ্রামের চাষি মনিরুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর তিনি বোরো আবাদ করে থাকেন। হঠাৎ করে ডিজেলের দাম বাড়ায় তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। সার, সেচ, চাষ এমনকি বেড়েছে শ্রমিকের মূল্যও। আগে কাজ শেষে একজন শ্রমিককে ৪০০ টাকা দিলেও এখন গুনতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে সেচপাম্প মালিকদের সেচ খরচ বাবদ দিতে হতো ৩ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এবার ৪ হাজার টাকা খরচ করেও জমিতে সেচ দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তিত তিনি। অথচ সেই অনুপাতে বাড়েনি ধান বা অন্যান্য ফসলের দাম।

সিংহাটি গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, আগে এক বিঘা জমি চাষে খরচ হতো ১৫০ টাক। এখন এক বিঘা জমি চাষ করে গুনতে হচ্ছে ২৫০ টাকা। জমি থেকে ট্রলিতে ধান বহন করতে আগে ৩৫০ টাকা দিলেও এখন দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। জমিতে এক সেচে পাম্প মালিকদের দিতে হতো ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা; এখন দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়লেও সেচ বাবদ বাড়ানো হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হারে। তিনি বলেন, মণপ্রতি ধান বিক্রি করেছি আগের দামেই ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে অথচ বাড়েনি কৃষি পণ্যের দাম। ফলে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ না করার চিন্তা করছি। তেলের দামকে কেন্দ্র করে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ কৃষক।

মেহেরপুর শহরের চক্রপাড়ার কৃষক হেকমত আলী জানান, তেলের দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। তাই ডিজেলে ভর্তুকি বা দাম কমানোর দাবি তাঁদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, তেলের দাম বাড়ায় বোরো আবাদে কৃষকের খরচ বাড়বে। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ বাজারে ধানের দাম বেশি। এ ছাড়াও ধানের যে বিচালি সেটিও বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন তাঁরা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার বেশি বোরো আবাদ হবে বলেও দাবি করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত