Ajker Patrika

দুই দলের বিভাজনে পিছিয়ে ফিলিস্তিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩: ৪৬
দুই দলের বিভাজনে পিছিয়ে ফিলিস্তিন

স্বাধীনতা ফিলিস্তিনের সব নাগরিকই চায়। দেশটির নেতারাও চান। তবে মতপার্থক্য রয়েছে। এই মতপার্থক্যের কারণে তৈরি হয়েছে বিভাজন। যেটা চোখে পড়ে ফিলিস্তিনের দুটি প্রধান রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে। এর একটি হামাস, অন্যটি ফাতাহ। দুটি শক্তির মতপার্থক্যের কারণেই গত বছরের ৭ অক্টোবর যখন গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়, তখন নীরব ছিল ফাতাহ।

আল জাজিরা বলছে, হামাস ও ফাতাহর মধ্যে আদর্শিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। মোটাদাগে বললে হামাস ইসলামপন্থী। আর ফাতাহ ধর্মনিরপেক্ষ। হামাস ইসরায়েলকে সামরিকভাবে মোকাবিলা করতে চায়। ফাতাহ চায় আলোচনা, সমঝোতা। আরেকটি পার্থক্য হলো, হামাস ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ।

উল্টো অবস্থানে ফাতাহ। মতপার্থক্যের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাতও হয়েছে। ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনে নির্বাচনে হারলেও পরাজয় স্বীকার করেনি হামাস। ফলে ২০০৭ সালে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই হয়। একটা সময় গাজা ছাড়তে বাধ্য হয় ফাতাহ। এর পর থেকে মূলত গাজা হামাসের নিয়ন্ত্রণে। আর পশ্চিম তীর ফাতাহ নিয়ন্ত্রণ করছে।

ফাতাহর জন্ম আল নাকবাকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখল করে ইহুদিদের জন্য নতুন রাষ্ট্র ইসরায়েলের যাত্রা শুরুর মধ্য দিয়ে নাকবা বা মহাবিপর্যয় নেমে এসেছিল। এই রাষ্ট্র গঠনের পরদিনই ইহুদি সশস্ত্র গোষ্ঠী ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করতে হত্যা-ধর্ষণ-লুট শুরু করে। সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনি জর্ডান, লেবানন ও সিরিয়ায় আশ্রয় নেয়। নাকবার পরই পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে ফাতাহ গঠিত হয়। এই সংগঠনের মূলে ছিলেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী অন্যতম নেতা ইয়াসির আরাফাত। সঙ্গে ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে ফাতাহ লড়াই শুরু করেছিল ১৯৬৫ সালে। বৈরুতে ছিল স্বাধীনতাকামীদের ঘাঁটি। তবে সত্তর ও আশির দশকে সশস্ত্র আন্দোলনের পর ফাতাহ ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার পথ বেছে নেয়। এ প্রসঙ্গে পশ্চিম তীরের রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাসাত আকতাশ বলেন, বৈরুত ছাড়ার পর ফাতাহ একটা সময় ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার জন্য পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।

এসব ঘটনাচক্রের মধ্যেই ১৯৬৪ সালে জন্ম হয় প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও)। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলো নিয়ে এটি গঠিত হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকে ফাতাহর নেতৃত্বাধীন পিএলও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া ‘২৪২-রেজল্যুশনে’ এবং ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুসারে রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণায় সমর্থন দেয়। সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণাও দেয় তারা।

আশি ও নব্বইয়ের দশকে ফাতাহর নমনীয়তার সুযোগে রাজনৈতিক বিভাজন দেখা দেয়। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ১৯৮৭ সালে শেখ আহমেদ ইয়াসিন এবং তাঁর সহযোগী আবদুল আজিজ আল রানতিসি হামাস প্রতিষ্ঠা করেন। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের শাখা হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও হামাসের লক্ষ্য ছিল, সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা। ২০০৬ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয় হামাস। এ ভোটে বিশাল জয় পায় তারা। হামাসের এ উত্থান ইসরায়েলের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। তবে রাজনৈতিক বিভাজনের কারণেই কোনো সংকটেই ফাতাহকে পাশে পায়নি হামাস। এদিকে ফিলিস্তিনি তরুণদের মধ্যে, বিশেষ করে গাজার তরুণদের মধ্যে হামাস জনপ্রিয়। আর ফাতাহ জনপ্রিয় পশ্চিম তীরে।

কূটনৈতিক সমাধান চাওয়ায় ফাতাহ নেতা মাহমুদ আব্বাস পশ্চিমাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলেছেন। আর সশস্ত্র সমাধানের পথে হাঁটায় হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া কিংবা গাজায় হামাসপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার পশ্চিমাদের চোখের কাঁটা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত