Ajker Patrika

নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ

সম্পাদকীয়
নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আলোচকেরা বলেছেন, রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও কালোটাকা ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্যের কারণে নির্বাচনে তাঁদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম। রাজনীতিতে যোগ্য অনেক নারী থাকলেও অর্থসম্পদ না থাকায় তাঁরা মনোনয়নদৌড়ে এবং নির্বাচনী মাঠে পিছিয়ে পড়ছেন। কালোটাকার দৌরাত্ম্য কমলে নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে।

শুক্রবার আজকের পত্রিকায় ‘কালোটাকার দৌরাত্ম্যে পিছিয়ে পড়ছে নারীরা’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নারীদের অর্থের অভাব রয়েছে, দলীয় বরাদ্দেও পুরুষ সহকর্মীদের থেকে তাঁরা পিছিয়ে। এ ক্ষেত্রে পাবলিক ফান্ডিং (জনতহবিল) ব্যবস্থা দলগুলোকে সাধারণ আসনে আরও বেশি নারীদের মনোনয়ন দিতে উৎসাহিত করবে।

বাংলাদেশে শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ যেভাবে বাড়ছে, রাজনীতিতে তাঁদের অংশগ্রহণ সেভাবে বাড়ছে না, যদিও বাংলাদেশে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেত্রী, এমনকি সংসদের স্পিকারের দায়িত্বে নারীকে দেখা গেছে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে নবম। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোয় কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণের কথা বলা হলেও এ পর্যন্ত কোনো দলই এ শর্ত পূরণে সক্ষম হয়নি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে খুব কম নারীই মনোনয়ন পান। তবে সংসদে নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে নারী সদস্যরা অন্যান্য সদস্যের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে যোগ্যতার বিচারে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন না। তাঁরা কার্যত দলীয় বা পারিবারিক রাজনৈতিক প্রভাবে নির্বাচিত হন। তাঁদের দায়বদ্ধতার বিষয়টিও সংবিধানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই।

বস্তুত নারীদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, আমাদের সমাজের রক্ষণশীল মনোভাব। একজন নারী পথে-ঘাটে মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহণ করবেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ব্যাপারটি অনেক পরিবার ঠিক মেনে নিতে পারে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে চাকরি বা ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করে এগিয়ে নেওয়ার পথকেই নারীরা বেশি প্রাধান্য দেন। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, পারিবারিক প্রভাব না থাকলে দলের প্রতি নিবেদিত থাকলেও নারীর পক্ষে একটা শক্ত অবস্থানে পৌঁছানো সহজ হয় না।

পারিবারিক-সামাজিক বাস্তবতা রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। সংগঠনের মধ্যে নারী হিসেবে আলাদা চোখে দেখা না হলেও পারিবারিক বাধা অনেক বড়। সামাজিক পরিস্থিতি আরও জটিল। নারীনেত্রী জেলে গেলে মা-বাবা হয়তো তাঁর কষ্টের কথা ভেবে দুঃখ পান।

কিন্তু সমাজ বিষয়টিকে অনেক নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে, যা পুরুষের বেলায় হয় না। এসব কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অনেক নারীই রাজনীতিতে আসতে সাহস পান না।

নারীকে এগিয়ে নিতে হলে সমাজ ও রাষ্ট্রকে নারীবান্ধব হতে হবে বলে অভিমত দিচ্ছেন রাজনৈতিক কর্মী ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, রাষ্ট্রকে নারীর প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় নারীকে স্থান করে দিতে হবে। যোগ্য কোনো নারীকে কোনো অজুহাতেই বঞ্চিত করা যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত