Ajker Patrika

রবিনহুড নন, তিনি দোলন

অরণ্য সৌরভ, নারায়ণগঞ্জ
Thumbnail image

ঘটনা অনেক। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলা যায়, তার হিসাবও বেশ কঠিন। দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত মা ও স্বামীকে ঘরে রেখে সন্তান নিয়ে ভিক্ষা করা নারীকে ছোট্ট ব্যবসা ধরিয়ে দিয়ে স্বাবলম্বী করার ঘটনা যেমন আছে, তেমনি আছে অসহায় নারীকে জমি বর্গা নিয়ে দিয়ে সবজি চাষের ব্যবস্থা করে দেওয়ার ঘটনাও। পরিজনহীন প্রবীণদের চিকিৎসার খরচ বহন করা থেকে শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষকে অটোরিকশা কিংবা হুইলচেয়ার কিনে দেওয়ার ঘটনাও আছে।

বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরলে এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী হবেন অনেকেই। এসব ঘটনার পেছনে যিনি আছেন, তিনি রবিনহুড নন, তাঁর নাম মেহেদি হাসান দোলন। বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য হিসেবে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনসে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এর পাশাপাশি সচেতন মানুষ হিসেবে পালন করছেন সামাজিক দায়িত্ব। এখন পর্যন্ত বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুরে বিভিন্নভাবে প্রায় ৫০০ জন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এ ছাড়া ৩৪ জন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে হুইলচেয়ার এবং কর্ম উপযোগী প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। বান্দরবান ও চট্টগ্রামের প্রায় ২৪টি পরিবারকে বসবাসের জন্য ঘর তৈরি করে দিয়েছেন দোলন।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের ব্যবসায়ী ফারুক ও গৃহিণী নিলুফার ইয়াছমিন দম্পতির একমাত্র ছেলে মেহেদী হাসান দোলন। লেখাপড়া শেষে মানুষের সেবা করা যায় এমন চাকরি করার স্বপ্ন নিয়ে ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন তিনি। দোলন বলেন, এ পৃথিবীতে শুধু খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য চাকরি নয়; এর পাশাপাশি মানুষ, দেশ ও পৃথিবীর জন্যও কিছু করার আছে।

মানবিক পরিবেশ
ধ্বংস ও দূষণ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য মেহেদি হাসান দোলন ‘মানবিক পরিবেশ’ নামে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নেন। গত প্রায় ছয় বছরে বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও লক্ষ্মীপুরে প্রায় ২৬ হাজার বৃক্ষরোপণে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। বেশি বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে বান্দরবানে। ‘পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিকসামগ্রী জমা দিন, পরিবেশ বন্ধু গাছ নিন’ স্লোগান দিয়ে তিনি ঔষধি, বনজ ও ফলদ গাছের চারা বিতরণ করেন।

মানবিক পাঠশালা
বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে শিশুদের শিক্ষার জন্য তৈরি করেছেন ‘মানবিক পাঠশালা’। ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে বান্দরবানে প্রথম মানবিক পাঠশালায় ৬৪ জন শিক্ষার্থী এবং চট্টগ্রামের ঝাউতলায় দ্বিতীয় মানবিক পাঠশালা-২-এ ৪৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে বর্তমানে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাসামগ্রীর পাশাপাশি ইউনিফর্ম, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার জন্য সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, ব্রাশ, টুথপেস্ট, নেইল কাটার, ডিটারজেন্ট পাউডার ও তোয়ালে দেওয়া হয়।

মানবিক কৃষি
পাহাড়ি জনপদে কৃষিকাজের জন্য টাকা দিয়ে জমি বর্গা নিতে হয়। এমন কয়েকজনকে টাকা দিয়ে বর্গা জমি চাষের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি। অর্ধশত মানুষকে চাষের জন্য সার, বীজ, কীটনাশক ও ওষুধ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

বেতনের টাকা থেকে প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা এসব কাজের জন্য রেখে দেন দোলন। তিনি জানান, ‘এসব কাজ করতে গিয়ে খালি পকেটে কীভাবে মাসের পর মাস কাটাতে হয়, সেটা আমার জানা হয়ে গেছে।’ অসহায় মানুষের জন্য কাজের শুরু হয়েছিল জন্মস্থান লক্ষ্মীপুর থেকে। বদলির চাকরির সূত্রে বান্দরবানের লেমুঝিড়ি, ভরাখালি, মুসলিমপাড়া, চড়ুইপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন দোলন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত