হিলাল ফয়েজী
বাল্যকালে পাঠ্যপুস্তকে পড়েছিলাম ‘ডি ভ্যালেরার ইচ্ছাশক্তি’ শিরোনামের একটি রচনা। ডি ভ্যালেরা ইংল্যান্ডের হাত থেকে আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতাসংগ্রামের মহান নেতা। কারাবন্দী অবস্থায় কী করে কারাগারের তালার নকশা সাবানের মধ্যে ফুটিয়ে তুলে সেই সাবান বাইরে পাঠিয়ে চাবি তৈরির ব্যবস্থা করে, সেই চাবি জেলের ভেতরে এনে তালা খুলে স্বমুক্তির আয়োজন করেছিল—এই কাহিনি মনের ভেতরে যে ছাপ ফেলেছে ষাট-পঁয়ষট্টি বছর আগে, আজও তা উদ্দীপিত রাখে।
না, আমাদের পাঠ্যপুস্তকে ‘তাজুলের ইচ্ছাশক্তি’ শিরোনামে কোনো রচনার আশা করি না। এ দেশে তাজুল ইসলাম কিংবা নূর হোসেনরা ‘শহীদ’ হয়েও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পান না। পৃথিবীতে আর কোথাও খালি গায়ে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ বুকে-পিঠে লিখে বুলেট বিদীর্ণ হওয়ার কাহিনি শুনিনি। একজন খেতমজুর সংগঠক কিশোরগঞ্জ থেকে সাইকেল চালিয়ে নূর হোসেনের শাহাদাতের দিনে মিছিলে যোগ দিয়ে চিরতরে হারিয়ে গেলেন—সেই শহীদ টিটোর খোঁজ আমরা রাখি না।
একজন ‘তাজুল’কেও আমরা হয়তো ভুলে গেছি। দেশে বিপুল শ্রমিক-মেহনতি মানুষ আছেন, দুর্ভাগ্য সুস্থ-সাহসী-সদুদ্দেশ্যে সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন বিরল। ২০২৩ সালের ১ মার্চ শহীদ তাজুল দিবসে একাই গিয়েছিলাম তাজুলের অন্তিম ঠিকানা উত্তর মতলবগঞ্জের বদরপুর, বেলতলী, শিকদারবাড়ীতে। ‘এক তাজুলের রক্ত থেকে লক্ষ তাজুল জন্ম নেবে’—এই স্লোগান তাজুলের বিবর্ণ সমাধিতে মাথা কুটে মরছে। তাজুলকে আমরা বুঝি ভুলে গেছি ৪০ বছরেই। না, ক্ষমা চাওয়ার মতো নৈতিক সাহস পোষণ করি না। এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। বুঝিবা একই সঙ্গে তাজুলও বিলীন হয়ে গেছেন। প্রশ্ন নিজের কাছে, আমরা কি তাজুলকে বিলীন হতে দেব?
প্রতিকূল পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবারে জন্ম নেওয়া তাজুল ইসলাম অসাধারণ মেধাবী ছিলেন ছোটবেলা থেকেই। দারিদ্র্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাজুল একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবেই তখনকার দেশের এক নম্বর কলেজ ‘ঢাকা কলেজে’ ভর্তি হয়েছিলেন মানবিক বিভাগে। তাজুলকে ছাত্র ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় সামান্য ভূমিকা আমারও ছিল। তখন বুঝিনি ‘বিপ্লবের লাল ফুল’ হয়ে তাজুল বাংলা মাতাবে বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে।
সেই তাজুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়েছেন। নিপীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক ভাগ্য বদলানোর অমোঘ কামনা তাঁকে নিয়ে গেল আদমজী পাটকলে, ঢাকার অদূরে, সিদ্ধিরগঞ্জে। উচ্চশিক্ষিত তাজুল ‘ক্যারিয়ার’ গড়ার অতি স্বাভাবিক গতিধারায় শামিল হননি। তিনি শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ করার কঠিন কাজটুকু স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলেন। উচ্চশিক্ষার ‘অহং’ চূর্ণ করে তিনি এমন একটি উদাহরণ গড়লেন, যার নজির গোটা পৃথিবীতে আর আছে কি না, জানা নেই আমার। তাজুল ঠিক ‘শ্রমিকের মতো শ্রমিক’ হয়ে নিজে চট বানানোর যন্ত্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়লেন একজন বদলি পাটশ্রমিক হিসেবে। তিনি শ্রমিকের বস্তিতে একজন বস্তিবাসী হয়ে শ্রমিক সংগঠন গড়তে শুরু করলেন। এমন উদাহরণ শ্রমিকেরা দেখেননি। সবার কাছে ‘শ্রদ্ধার পাত্র’ হতে সময় লাগেনি তাঁর।
আদমজী পাটকল তখন রাষ্ট্রায়ত্ত হলেও এই বিশাল কারখানায় ‘কায়েমি স্বার্থ’ প্রবল হয়ে উঠেছিল। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের সময় আদমজী-তেজগাঁও-টঙ্গীতে হাজার হাজার শ্রমিক যোগ দিয়ে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম বেগবান করার ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। বলতে গেলে সেই শ্রমিক নেতৃত্বই উত্তরকালে স্বৈরসামরিক সরকারের পদলেহন করে চলছিল ১৯৮৪ সালে। তাজুল ছিলেন তাদের পথের কাঁটা। তদুপরি শ্রমিকদের ভাগ করে রেখে মিলমালিক যে শাসন চালিয়ে আসছিল, সেই বিষাক্ত অস্ত্র দিয়েও তাজুলকে আঘাত করে করে ‘শ্রমিকবিচ্ছিন্ন’ করে রাখার চেষ্টা হয়েছে। বিষাক্ত অস্ত্রটির নাম ‘আঞ্চলিকতা’। অর্থাৎ, ঢাকা-নোয়াখালী-কুমিল্লা অঞ্চলের ভিত্তিতেই মূলত শ্রমিকদের ভাগ করে রেখে সামষ্টিক শ্রমিক আন্দোলন বিভক্ত করে রাখা হতো।
এদিকে গ্রামের এক সম্পন্ন পরিবারের মেয়ে নাসিমার সঙ্গে জীবনঘর গড়লেন তাজুল পারস্পরিক হৃদয় অনুভবে। নাসিমার জনক তাজুলের আর্থিক পরিস্থিতি উন্নত করার নানা রকম আয়োজন করতে চাইলেন। তাজুল সেই প্রয়াসে যুক্ত হতে অস্বীকার করলেন। নাসিমা বললেন, ‘আমাদের দুটি সন্তান, আমি তো মা হিসেবে ওদের দুধের জোগান দিতে চাইব।’ তাজুল বললেন, ‘তুমি আমার যোগ্য হয়ে ওঠো। দারিদ্র্যের কঠিন পরীক্ষায় আমাদের পাস করতেই হবে।’ নাসিমা তা-ও মেনে নিলেন জীবনসঙ্গীর চেতনার দৃঢ়তার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে। তাজুলের ইচ্ছাশক্তি ছিল সচেতন, ব্যতিক্রমী। সন্তানের ক্ষুধা এবং অপুষ্টিতেও তাজুল ছিলেন অটল।
এমনি তাজুলকে আদমজী কর্তৃপক্ষ ও কায়েমি শ্রমিক নেতৃত্ব সহ্য করতে পারেনি। তারা ১৯৮৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি হরতালের সময় আদমজী পাটকলে পিকেটিংয়ের সময় তাজুলের মাথায় এমনভাবে আঘাত হানে, যাতে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হয়। হিংস্র শক্তির হাতে তাজুলের এই মর্মান্তিক জীবনাবসানে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরও তেজি হয়ে ওঠে। সারা দেশে এমন উচ্চশিক্ষিত মেধাবী শ্রমিকনেতার জীবন উদাহরণে এক অসাধারণ বিস্ময় ও শ্রদ্ধার উন্মেষ ঘটায়।
স্বৈরচার জেনারেল এরশাদের ওপর সবটুকু দোষ আমরা দিলেই তাজুলের মৃত্যুর সব অপরাধীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে না। তাজুলের জীবনসঙ্গিনী যত দিন বেঁচে ছিলেন, এই কষ্ট, এই ক্ষোভ তাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। আদমজীতে সেই রাতে ঢাকা ও নোয়াখালীর নেতৃত্ব একজোট হয়ে তাজুলকে আঘাত হেনেছিল। সেখানে তাজুলের সংগঠনের নেতৃত্বেরও সংযোগ ছিল বলে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
শহীদ তাজুলের কমিউনিস্ট পার্টি, শহীদ তাজুলের ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র তাজুল হত্যার সব দোষ স্বৈরাচারের ওপর ন্যস্ত করেই ক্ষান্ত ছিল, একটি তদন্ত কমিটিও করেনি। বরং সন্দেহের বিষয়টিকে তারা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। স্বৈরাচার ও ষড়যন্ত্রীদের মুখোশ উন্মোচনের সবটুকু সম্পন্ন হয়নি। ইতিহাসে অনেক কাল পরেও হত্যার তদন্ত হয়। তাজুলের নেতৃত্বের কেউ কেউ বেঁচে আছেন, একটি তদন্ত কি এখনো হতে পারে না?
অনেকে বলেন, তাজুল বেঁচে থাকলে শাসকগোষ্ঠী আদমজী পাটকল বিলীন করে দিতে সক্ষম হতো না। সে কথায় না গিয়েও বলি, তাজুল হত্যার অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচিত হোক না হোক, বিপ্লবী বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুলের ইচ্ছাশক্তিকে আমরা সমুজ্জ্বল রাখবই। আদমজী জুট মিল এলাকাতেই হোক কিংবা তাজুলের সমাধিপ্রান্তর উত্তর মতলবের বেলতলীতেই হোক, তাজুলের আত্মদানের একটি সম্মানসৌধ আমাদের গড়তেই হবে। তাজুলের যেসব সঙ্গী বেঁচে আছেন, এটি তাদের মহতী কর্তব্য। তাজুলের ইচ্ছাশক্তি উদ্বুদ্ধ করুক নিপীড়িত মানবসমাজকে।
লেখক: প্রধান সমন্বয়কারী, আমরা একাত্তর
বাল্যকালে পাঠ্যপুস্তকে পড়েছিলাম ‘ডি ভ্যালেরার ইচ্ছাশক্তি’ শিরোনামের একটি রচনা। ডি ভ্যালেরা ইংল্যান্ডের হাত থেকে আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতাসংগ্রামের মহান নেতা। কারাবন্দী অবস্থায় কী করে কারাগারের তালার নকশা সাবানের মধ্যে ফুটিয়ে তুলে সেই সাবান বাইরে পাঠিয়ে চাবি তৈরির ব্যবস্থা করে, সেই চাবি জেলের ভেতরে এনে তালা খুলে স্বমুক্তির আয়োজন করেছিল—এই কাহিনি মনের ভেতরে যে ছাপ ফেলেছে ষাট-পঁয়ষট্টি বছর আগে, আজও তা উদ্দীপিত রাখে।
না, আমাদের পাঠ্যপুস্তকে ‘তাজুলের ইচ্ছাশক্তি’ শিরোনামে কোনো রচনার আশা করি না। এ দেশে তাজুল ইসলাম কিংবা নূর হোসেনরা ‘শহীদ’ হয়েও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পান না। পৃথিবীতে আর কোথাও খালি গায়ে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ বুকে-পিঠে লিখে বুলেট বিদীর্ণ হওয়ার কাহিনি শুনিনি। একজন খেতমজুর সংগঠক কিশোরগঞ্জ থেকে সাইকেল চালিয়ে নূর হোসেনের শাহাদাতের দিনে মিছিলে যোগ দিয়ে চিরতরে হারিয়ে গেলেন—সেই শহীদ টিটোর খোঁজ আমরা রাখি না।
একজন ‘তাজুল’কেও আমরা হয়তো ভুলে গেছি। দেশে বিপুল শ্রমিক-মেহনতি মানুষ আছেন, দুর্ভাগ্য সুস্থ-সাহসী-সদুদ্দেশ্যে সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন বিরল। ২০২৩ সালের ১ মার্চ শহীদ তাজুল দিবসে একাই গিয়েছিলাম তাজুলের অন্তিম ঠিকানা উত্তর মতলবগঞ্জের বদরপুর, বেলতলী, শিকদারবাড়ীতে। ‘এক তাজুলের রক্ত থেকে লক্ষ তাজুল জন্ম নেবে’—এই স্লোগান তাজুলের বিবর্ণ সমাধিতে মাথা কুটে মরছে। তাজুলকে আমরা বুঝি ভুলে গেছি ৪০ বছরেই। না, ক্ষমা চাওয়ার মতো নৈতিক সাহস পোষণ করি না। এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। বুঝিবা একই সঙ্গে তাজুলও বিলীন হয়ে গেছেন। প্রশ্ন নিজের কাছে, আমরা কি তাজুলকে বিলীন হতে দেব?
প্রতিকূল পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবারে জন্ম নেওয়া তাজুল ইসলাম অসাধারণ মেধাবী ছিলেন ছোটবেলা থেকেই। দারিদ্র্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাজুল একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবেই তখনকার দেশের এক নম্বর কলেজ ‘ঢাকা কলেজে’ ভর্তি হয়েছিলেন মানবিক বিভাগে। তাজুলকে ছাত্র ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় সামান্য ভূমিকা আমারও ছিল। তখন বুঝিনি ‘বিপ্লবের লাল ফুল’ হয়ে তাজুল বাংলা মাতাবে বিংশ শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে।
সেই তাজুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়েছেন। নিপীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক ভাগ্য বদলানোর অমোঘ কামনা তাঁকে নিয়ে গেল আদমজী পাটকলে, ঢাকার অদূরে, সিদ্ধিরগঞ্জে। উচ্চশিক্ষিত তাজুল ‘ক্যারিয়ার’ গড়ার অতি স্বাভাবিক গতিধারায় শামিল হননি। তিনি শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ করার কঠিন কাজটুকু স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলেন। উচ্চশিক্ষার ‘অহং’ চূর্ণ করে তিনি এমন একটি উদাহরণ গড়লেন, যার নজির গোটা পৃথিবীতে আর আছে কি না, জানা নেই আমার। তাজুল ঠিক ‘শ্রমিকের মতো শ্রমিক’ হয়ে নিজে চট বানানোর যন্ত্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়লেন একজন বদলি পাটশ্রমিক হিসেবে। তিনি শ্রমিকের বস্তিতে একজন বস্তিবাসী হয়ে শ্রমিক সংগঠন গড়তে শুরু করলেন। এমন উদাহরণ শ্রমিকেরা দেখেননি। সবার কাছে ‘শ্রদ্ধার পাত্র’ হতে সময় লাগেনি তাঁর।
আদমজী পাটকল তখন রাষ্ট্রায়ত্ত হলেও এই বিশাল কারখানায় ‘কায়েমি স্বার্থ’ প্রবল হয়ে উঠেছিল। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনের সময় আদমজী-তেজগাঁও-টঙ্গীতে হাজার হাজার শ্রমিক যোগ দিয়ে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম বেগবান করার ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন। বলতে গেলে সেই শ্রমিক নেতৃত্বই উত্তরকালে স্বৈরসামরিক সরকারের পদলেহন করে চলছিল ১৯৮৪ সালে। তাজুল ছিলেন তাদের পথের কাঁটা। তদুপরি শ্রমিকদের ভাগ করে রেখে মিলমালিক যে শাসন চালিয়ে আসছিল, সেই বিষাক্ত অস্ত্র দিয়েও তাজুলকে আঘাত করে করে ‘শ্রমিকবিচ্ছিন্ন’ করে রাখার চেষ্টা হয়েছে। বিষাক্ত অস্ত্রটির নাম ‘আঞ্চলিকতা’। অর্থাৎ, ঢাকা-নোয়াখালী-কুমিল্লা অঞ্চলের ভিত্তিতেই মূলত শ্রমিকদের ভাগ করে রেখে সামষ্টিক শ্রমিক আন্দোলন বিভক্ত করে রাখা হতো।
এদিকে গ্রামের এক সম্পন্ন পরিবারের মেয়ে নাসিমার সঙ্গে জীবনঘর গড়লেন তাজুল পারস্পরিক হৃদয় অনুভবে। নাসিমার জনক তাজুলের আর্থিক পরিস্থিতি উন্নত করার নানা রকম আয়োজন করতে চাইলেন। তাজুল সেই প্রয়াসে যুক্ত হতে অস্বীকার করলেন। নাসিমা বললেন, ‘আমাদের দুটি সন্তান, আমি তো মা হিসেবে ওদের দুধের জোগান দিতে চাইব।’ তাজুল বললেন, ‘তুমি আমার যোগ্য হয়ে ওঠো। দারিদ্র্যের কঠিন পরীক্ষায় আমাদের পাস করতেই হবে।’ নাসিমা তা-ও মেনে নিলেন জীবনসঙ্গীর চেতনার দৃঢ়তার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে। তাজুলের ইচ্ছাশক্তি ছিল সচেতন, ব্যতিক্রমী। সন্তানের ক্ষুধা এবং অপুষ্টিতেও তাজুল ছিলেন অটল।
এমনি তাজুলকে আদমজী কর্তৃপক্ষ ও কায়েমি শ্রমিক নেতৃত্ব সহ্য করতে পারেনি। তারা ১৯৮৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি হরতালের সময় আদমজী পাটকলে পিকেটিংয়ের সময় তাজুলের মাথায় এমনভাবে আঘাত হানে, যাতে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হয়। হিংস্র শক্তির হাতে তাজুলের এই মর্মান্তিক জীবনাবসানে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরও তেজি হয়ে ওঠে। সারা দেশে এমন উচ্চশিক্ষিত মেধাবী শ্রমিকনেতার জীবন উদাহরণে এক অসাধারণ বিস্ময় ও শ্রদ্ধার উন্মেষ ঘটায়।
স্বৈরচার জেনারেল এরশাদের ওপর সবটুকু দোষ আমরা দিলেই তাজুলের মৃত্যুর সব অপরাধীকে চিহ্নিত করা সম্ভব হবে না। তাজুলের জীবনসঙ্গিনী যত দিন বেঁচে ছিলেন, এই কষ্ট, এই ক্ষোভ তাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। আদমজীতে সেই রাতে ঢাকা ও নোয়াখালীর নেতৃত্ব একজোট হয়ে তাজুলকে আঘাত হেনেছিল। সেখানে তাজুলের সংগঠনের নেতৃত্বেরও সংযোগ ছিল বলে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
শহীদ তাজুলের কমিউনিস্ট পার্টি, শহীদ তাজুলের ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র তাজুল হত্যার সব দোষ স্বৈরাচারের ওপর ন্যস্ত করেই ক্ষান্ত ছিল, একটি তদন্ত কমিটিও করেনি। বরং সন্দেহের বিষয়টিকে তারা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে। স্বৈরাচার ও ষড়যন্ত্রীদের মুখোশ উন্মোচনের সবটুকু সম্পন্ন হয়নি। ইতিহাসে অনেক কাল পরেও হত্যার তদন্ত হয়। তাজুলের নেতৃত্বের কেউ কেউ বেঁচে আছেন, একটি তদন্ত কি এখনো হতে পারে না?
অনেকে বলেন, তাজুল বেঁচে থাকলে শাসকগোষ্ঠী আদমজী পাটকল বিলীন করে দিতে সক্ষম হতো না। সে কথায় না গিয়েও বলি, তাজুল হত্যার অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচিত হোক না হোক, বিপ্লবী বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুলের ইচ্ছাশক্তিকে আমরা সমুজ্জ্বল রাখবই। আদমজী জুট মিল এলাকাতেই হোক কিংবা তাজুলের সমাধিপ্রান্তর উত্তর মতলবের বেলতলীতেই হোক, তাজুলের আত্মদানের একটি সম্মানসৌধ আমাদের গড়তেই হবে। তাজুলের যেসব সঙ্গী বেঁচে আছেন, এটি তাদের মহতী কর্তব্য। তাজুলের ইচ্ছাশক্তি উদ্বুদ্ধ করুক নিপীড়িত মানবসমাজকে।
লেখক: প্রধান সমন্বয়কারী, আমরা একাত্তর
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪