Ajker Patrika

কারা বর্বর?

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩: ৫৪
কারা বর্বর?

ইদানীং একটা ধারাবাহিক নাটক দেখছি। ‘সিরিজ’ বা ‘সিরিয়াল’ বলার চেয়ে ধারাবাহিক নাটক বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ভাববেন না, বাংলা নাটক। ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করলে হয়তো বুঝে ফেলতেন একটা ইংরেজি ধারাবাহিকের কথা বলছি। যাই হোক, নাটকটি অষ্টম শতাব্দীর প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত। স্ক্যান্ডেনেভিয়ান নিষ্ঠুর, বর্বর জলদস্যু ভাইকিংদের কাহিনি। তারা ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ করে লুটপাট চালাত। এসব ইতিহাস কম-বেশি সবার জানা। মূল কথা যেটা বলতে চাইছি তা হলো, সেই যুগে ওই বর্বর ভাইকিং জাতি নারীদের প্রতি যে সম্মান দেখাত, সেটা হয়তো এই আধুনিক যুগে এসেও অনেকে দেখায় না।

তারা নারী-পুরুষ সবাই মিলে যুদ্ধ করত। নারী যোদ্ধারা পেত যথাযথ মর্যাদা। যে নারী যে কাজেই পটু হোক না কেন একজন পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম সম্মান করা হতো না তাকে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও ছিল তাদের। সভ্য ইউরোপের লোকেরা বর্বর ভাইকিং নারীদের মর্যাদা দেখে খানিকটা অবাকই হতো। ‘নারীরা যুদ্ধ করছে? ছি ছি ছি, লজ্জা!’- এমনই মনোভাব ছিল ইউরোপীয়দের। পৃথিবীর আর সব দেশে যেখানে নারীদের শুধু সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র মনে করত, সেখানে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের বর্বর এই ভাইকিং জাতির মধ্যে নারীদের মর্যাদা ছিল উচ্চ আসনে। তাদের নৈতিকতা এমন ছিল যে, ডাকাতি করতে গিয়ে কেউ যদি কোনো নারীকে ধর্ষণ করে বা ধর্ষণের চেষ্টা চালায়, তবে তাকে শাস্তি পেতে হতো। ইতিহাসে স্পষ্ট করে এমন কিছু লেখা আছে কি না, জানা নেই। তবে নাটকটিতে এমন কিছুই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এই আমরা বাঙালিরা ‘সভ্য’ জাতির মানুষ, এখনো নারীদের সম্মানের জন্য লড়াই করছি প্রতিনিয়ত। কদিন আগে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে খুশি হয়ে গেলাম। অনেক দিন পর সময় করে ফোন দিয়েছে ভেবে। কিন্তু তার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। বেশি দিন হয়নি বিয়ে হয়েছে তার। তিন মাসের সন্তান আছে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে মাঝরাতে সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। দ্বন্দ্বটা হচ্ছে এই—আমার বন্ধুকে শ্বশুরবাড়ির চাপে চাকরি ছেড়ে ক্যারিয়ার গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে, পদে পদে সব কাজে অপমান সহ্য করতে হয়েছে, সন্তানকে সঠিক পরিচর্যার জন্য লড়াই করতে হয়েছে, এমনকি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। আমার আরেক বন্ধুও শ্বশুরবাড়ির মানুষকে খুশি করার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। অন্য আরেক বন্ধু শুধু সরকারি চাকরি না করতে পারায় অপমান সহ্য করছে দিনের পর দিন। হয় তাকে তার পছন্দের চাকরি ছেড়ে ‘সম্মানজনক’ কোনো চাকরি করতে হবে, নয়তো সংসারে মনোযোগী হতে হবে। এই হচ্ছে নারীদের প্রতি আমাদের সামাজিক ‘সম্মান’!

এই উদাহরণগুলো হয়তো আপনাকে ভাবাবে যে, বিয়ের পর নারীর স্বাধীনতা খর্ব হয়। না, ব্যাপারটা তেমন নয়। এমন অসংখ্য নারী আছে যাদের পরিবার এবং আশপাশের মানুষ যথেষ্ট সম্মান করে। কিন্তু এই তিন উদাহরণের তুলনায় সেই সংখ্যাটা নেহাত কম। আমাদের সমাজের গোটা মস্তিষ্কে ‘ইনস্টল’ হয়ে গেছে নারীর চেয়ে পুরুষ এগিয়ে, নারীর চেয়ে পুরুষ বলশালী। একজন নারীও সেটাই বিশ্বাস করে। যার কারণে হাজার নির্যাতিত হয়ে, অপমান সহ্য করে সে চুপ করে থাকে। নারীর ভেতর থেকে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের গোড়াটা উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বহু আগে।

ভাইকিংদের বর্বরতা ছিল লুটপাট আর খুনোখুনিতে। আমরা এমন বর্বর জাতির সমাজে বাস করি না। কিন্তু মুখোশ পরে মনের মধ্যে বর্বরতা পুষে রাখতে পারি অতি যত্নে। তারা নারীদের সম্মান করতে জানত, আমরা তা জানি না। আমরা জানি না, একজন নারী যে কাজই করুক না কেন সেটা সঠিকভাবে মূল্যায়িত হওয়া কতটা জরুরি।

লেখক: সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এক ফ্যাসিস্ট নেত্রীর পাল্লায় পড়ে পুলিশ খারাপ হয়েছিল: এসপি

বিএনপি নেতা নাছিরের দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ দুই সৎভাইয়ের বিরুদ্ধে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত