সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
ইদানীং একটা ধারাবাহিক নাটক দেখছি। ‘সিরিজ’ বা ‘সিরিয়াল’ বলার চেয়ে ধারাবাহিক নাটক বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ভাববেন না, বাংলা নাটক। ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করলে হয়তো বুঝে ফেলতেন একটা ইংরেজি ধারাবাহিকের কথা বলছি। যাই হোক, নাটকটি অষ্টম শতাব্দীর প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত। স্ক্যান্ডেনেভিয়ান নিষ্ঠুর, বর্বর জলদস্যু ভাইকিংদের কাহিনি। তারা ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ করে লুটপাট চালাত। এসব ইতিহাস কম-বেশি সবার জানা। মূল কথা যেটা বলতে চাইছি তা হলো, সেই যুগে ওই বর্বর ভাইকিং জাতি নারীদের প্রতি যে সম্মান দেখাত, সেটা হয়তো এই আধুনিক যুগে এসেও অনেকে দেখায় না।
তারা নারী-পুরুষ সবাই মিলে যুদ্ধ করত। নারী যোদ্ধারা পেত যথাযথ মর্যাদা। যে নারী যে কাজেই পটু হোক না কেন একজন পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম সম্মান করা হতো না তাকে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও ছিল তাদের। সভ্য ইউরোপের লোকেরা বর্বর ভাইকিং নারীদের মর্যাদা দেখে খানিকটা অবাকই হতো। ‘নারীরা যুদ্ধ করছে? ছি ছি ছি, লজ্জা!’- এমনই মনোভাব ছিল ইউরোপীয়দের। পৃথিবীর আর সব দেশে যেখানে নারীদের শুধু সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র মনে করত, সেখানে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের বর্বর এই ভাইকিং জাতির মধ্যে নারীদের মর্যাদা ছিল উচ্চ আসনে। তাদের নৈতিকতা এমন ছিল যে, ডাকাতি করতে গিয়ে কেউ যদি কোনো নারীকে ধর্ষণ করে বা ধর্ষণের চেষ্টা চালায়, তবে তাকে শাস্তি পেতে হতো। ইতিহাসে স্পষ্ট করে এমন কিছু লেখা আছে কি না, জানা নেই। তবে নাটকটিতে এমন কিছুই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই আমরা বাঙালিরা ‘সভ্য’ জাতির মানুষ, এখনো নারীদের সম্মানের জন্য লড়াই করছি প্রতিনিয়ত। কদিন আগে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে খুশি হয়ে গেলাম। অনেক দিন পর সময় করে ফোন দিয়েছে ভেবে। কিন্তু তার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। বেশি দিন হয়নি বিয়ে হয়েছে তার। তিন মাসের সন্তান আছে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে মাঝরাতে সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। দ্বন্দ্বটা হচ্ছে এই—আমার বন্ধুকে শ্বশুরবাড়ির চাপে চাকরি ছেড়ে ক্যারিয়ার গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে, পদে পদে সব কাজে অপমান সহ্য করতে হয়েছে, সন্তানকে সঠিক পরিচর্যার জন্য লড়াই করতে হয়েছে, এমনকি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। আমার আরেক বন্ধুও শ্বশুরবাড়ির মানুষকে খুশি করার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। অন্য আরেক বন্ধু শুধু সরকারি চাকরি না করতে পারায় অপমান সহ্য করছে দিনের পর দিন। হয় তাকে তার পছন্দের চাকরি ছেড়ে ‘সম্মানজনক’ কোনো চাকরি করতে হবে, নয়তো সংসারে মনোযোগী হতে হবে। এই হচ্ছে নারীদের প্রতি আমাদের সামাজিক ‘সম্মান’!
এই উদাহরণগুলো হয়তো আপনাকে ভাবাবে যে, বিয়ের পর নারীর স্বাধীনতা খর্ব হয়। না, ব্যাপারটা তেমন নয়। এমন অসংখ্য নারী আছে যাদের পরিবার এবং আশপাশের মানুষ যথেষ্ট সম্মান করে। কিন্তু এই তিন উদাহরণের তুলনায় সেই সংখ্যাটা নেহাত কম। আমাদের সমাজের গোটা মস্তিষ্কে ‘ইনস্টল’ হয়ে গেছে নারীর চেয়ে পুরুষ এগিয়ে, নারীর চেয়ে পুরুষ বলশালী। একজন নারীও সেটাই বিশ্বাস করে। যার কারণে হাজার নির্যাতিত হয়ে, অপমান সহ্য করে সে চুপ করে থাকে। নারীর ভেতর থেকে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের গোড়াটা উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বহু আগে।
ভাইকিংদের বর্বরতা ছিল লুটপাট আর খুনোখুনিতে। আমরা এমন বর্বর জাতির সমাজে বাস করি না। কিন্তু মুখোশ পরে মনের মধ্যে বর্বরতা পুষে রাখতে পারি অতি যত্নে। তারা নারীদের সম্মান করতে জানত, আমরা তা জানি না। আমরা জানি না, একজন নারী যে কাজই করুক না কেন সেটা সঠিকভাবে মূল্যায়িত হওয়া কতটা জরুরি।
লেখক: সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ইদানীং একটা ধারাবাহিক নাটক দেখছি। ‘সিরিজ’ বা ‘সিরিয়াল’ বলার চেয়ে ধারাবাহিক নাটক বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ভাববেন না, বাংলা নাটক। ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করলে হয়তো বুঝে ফেলতেন একটা ইংরেজি ধারাবাহিকের কথা বলছি। যাই হোক, নাটকটি অষ্টম শতাব্দীর প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত। স্ক্যান্ডেনেভিয়ান নিষ্ঠুর, বর্বর জলদস্যু ভাইকিংদের কাহিনি। তারা ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ করে লুটপাট চালাত। এসব ইতিহাস কম-বেশি সবার জানা। মূল কথা যেটা বলতে চাইছি তা হলো, সেই যুগে ওই বর্বর ভাইকিং জাতি নারীদের প্রতি যে সম্মান দেখাত, সেটা হয়তো এই আধুনিক যুগে এসেও অনেকে দেখায় না।
তারা নারী-পুরুষ সবাই মিলে যুদ্ধ করত। নারী যোদ্ধারা পেত যথাযথ মর্যাদা। যে নারী যে কাজেই পটু হোক না কেন একজন পুরুষের চেয়ে কোনো অংশে কম সম্মান করা হতো না তাকে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও ছিল তাদের। সভ্য ইউরোপের লোকেরা বর্বর ভাইকিং নারীদের মর্যাদা দেখে খানিকটা অবাকই হতো। ‘নারীরা যুদ্ধ করছে? ছি ছি ছি, লজ্জা!’- এমনই মনোভাব ছিল ইউরোপীয়দের। পৃথিবীর আর সব দেশে যেখানে নারীদের শুধু সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র মনে করত, সেখানে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের বর্বর এই ভাইকিং জাতির মধ্যে নারীদের মর্যাদা ছিল উচ্চ আসনে। তাদের নৈতিকতা এমন ছিল যে, ডাকাতি করতে গিয়ে কেউ যদি কোনো নারীকে ধর্ষণ করে বা ধর্ষণের চেষ্টা চালায়, তবে তাকে শাস্তি পেতে হতো। ইতিহাসে স্পষ্ট করে এমন কিছু লেখা আছে কি না, জানা নেই। তবে নাটকটিতে এমন কিছুই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই আমরা বাঙালিরা ‘সভ্য’ জাতির মানুষ, এখনো নারীদের সম্মানের জন্য লড়াই করছি প্রতিনিয়ত। কদিন আগে এক বন্ধুর ফোন পেয়ে খুশি হয়ে গেলাম। অনেক দিন পর সময় করে ফোন দিয়েছে ভেবে। কিন্তু তার কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। বেশি দিন হয়নি বিয়ে হয়েছে তার। তিন মাসের সন্তান আছে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে মাঝরাতে সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। দ্বন্দ্বটা হচ্ছে এই—আমার বন্ধুকে শ্বশুরবাড়ির চাপে চাকরি ছেড়ে ক্যারিয়ার গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে, পদে পদে সব কাজে অপমান সহ্য করতে হয়েছে, সন্তানকে সঠিক পরিচর্যার জন্য লড়াই করতে হয়েছে, এমনকি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। আমার আরেক বন্ধুও শ্বশুরবাড়ির মানুষকে খুশি করার জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। অন্য আরেক বন্ধু শুধু সরকারি চাকরি না করতে পারায় অপমান সহ্য করছে দিনের পর দিন। হয় তাকে তার পছন্দের চাকরি ছেড়ে ‘সম্মানজনক’ কোনো চাকরি করতে হবে, নয়তো সংসারে মনোযোগী হতে হবে। এই হচ্ছে নারীদের প্রতি আমাদের সামাজিক ‘সম্মান’!
এই উদাহরণগুলো হয়তো আপনাকে ভাবাবে যে, বিয়ের পর নারীর স্বাধীনতা খর্ব হয়। না, ব্যাপারটা তেমন নয়। এমন অসংখ্য নারী আছে যাদের পরিবার এবং আশপাশের মানুষ যথেষ্ট সম্মান করে। কিন্তু এই তিন উদাহরণের তুলনায় সেই সংখ্যাটা নেহাত কম। আমাদের সমাজের গোটা মস্তিষ্কে ‘ইনস্টল’ হয়ে গেছে নারীর চেয়ে পুরুষ এগিয়ে, নারীর চেয়ে পুরুষ বলশালী। একজন নারীও সেটাই বিশ্বাস করে। যার কারণে হাজার নির্যাতিত হয়ে, অপমান সহ্য করে সে চুপ করে থাকে। নারীর ভেতর থেকে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের গোড়াটা উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বহু আগে।
ভাইকিংদের বর্বরতা ছিল লুটপাট আর খুনোখুনিতে। আমরা এমন বর্বর জাতির সমাজে বাস করি না। কিন্তু মুখোশ পরে মনের মধ্যে বর্বরতা পুষে রাখতে পারি অতি যত্নে। তারা নারীদের সম্মান করতে জানত, আমরা তা জানি না। আমরা জানি না, একজন নারী যে কাজই করুক না কেন সেটা সঠিকভাবে মূল্যায়িত হওয়া কতটা জরুরি।
লেখক: সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ দিন আগেআধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
০৮ মে ২০২৫