Ajker Patrika

‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’

সম্পাদকীয়
‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’

আমরা জানি কোথাও কোনো দখল বা মাস্তানির ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে বলা হয়, ‘অপরাধী বা দখলদার যত বড়ই শক্তিশালী হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ একসময় এই বাক্যকে সমীহ জাগানো বাক্য বলে ভ্রম হতো। ভাবা হতো, অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অথবা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, কোনো না কোনোভাবে সরকারের সঙ্গে দহরম-মহরম আছে–এ রকম একটি বার্তা দিতে পারলে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে দিন কাটাতে পারে।

বুধবারের আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি দখল করে যাঁরা দোকান তৈরি করেছেন এবং ভাড়া দিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের আওয়ামী লীগের নেতা বলে দাবি করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগে তাঁদের কোনো পদ বা পদবি নেই। তার মানে, ছড়ায় বলা ‘যার ধন তার ধন নয়, নেপোয় মারে দই’ কথাটা এখানে ফলে গেছে।

দড়িকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য পদচারী-সেতু নির্মাণ করেছে নারায়ণগঞ্জ সওজ। বাসস্ট্যান্ডের মানুষ নির্বিঘ্নে রাস্তা পার হবে, এ তো ভালো কথা। এর জন্য একটি ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করা ভালো পরিকল্পনার অংশ। সমস্যা হলো, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার সময় ভুঁইফোড় তিন ব্যক্তি নিজেদের আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে সেই সেতুর পাশের পরিত্যক্ত জায়গায় ৮-১০টি দোকানঘর নির্মাণ করে ফেলেছেন। তারপর শুরু হয় তাঁদের ভাড়া-বাণিজ্য। প্রতিটি দোকান থেকে অগ্রিম ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন তাঁরা এবং প্রতি মাসে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া তুলছেন। এটা তো পরিষ্কার, সরকারি জায়গা লিজ নিয়ে তাঁরা কাজটি করেননি। লিজ না নিয়ে এই যে ভাড়ার ব্যবসা শুরু করলেন তাঁরা, তার দায় কে নেবে?

সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেছেন, ‘দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ সরকারি জায়গা দখল করে চাঁদাবাজি করলে এর দায়ভার আমরা নেব না।’ নেতার যোগ্য কথা বটে! তাঁর দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করছে কিছু মানুষ, তাতে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে অথচ তাঁদের পাকড়াও করে শায়েস্তা করার কোনো ভাবনা নেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতির! তিনি চাইলেই এই দখলবাজি-চাঁদাবাজি মুহূর্তের মধ্যে বন্ধ করে দিতে পারতেন। অথচ তিনি নিরাপদ থাকলেন দায় না নিয়ে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে আশ্বাস মিলেছে যে তাদের জায়গায় গড়ে ওঠা এই অবৈধ স্থাপনা দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে। কিন্তু এত দিন ধরে কেন সেখানে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার সুযোগ দেওয়া হলো, সেই প্রশ্নের উত্তর তো মিলছে না!

আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে যে তিনজন সুবিধাভোগী নিজেদের পকেট ভারী করছেন, তাঁদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি। কিন্তু খালি কথায় কি চিড়ে ভিজবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত