Ajker Patrika

সেতু নেই, সাঁকোতে টোল

কাউনিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ০৪
সেতু নেই, সাঁকোতে টোল

কাউনিয়ার মেনাজবাজার গোল্ডেন ঘাটে তিস্তার শাখায় একটি পাকা সেতুর জন্য অপেক্ষা আর শেষ হচ্ছে না ১০ গ্রামের মানুষের। জনপ্রতিনিধিরা শুধু আশ্বাস দেন, কিন্তু সেতু আর হয় না। এলাকাবাসী ১২ বছর ধরে নদী পাড়ি দিচ্ছেন বাঁশের সাঁকোতে করে।

এই পারাপারের জন্য দিতে হচ্ছে টোল। মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের জন্য দিতে হয় পাঁচ টাকা। আর ১৫ বছরের নিচের শিশুদের দুই এবং বড়দের তিন টাকা পরিশোধ করতে হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হারাগাছ পৌরসভার ওই ঘাটে নদীর ওপর রয়েছে প্রায় ১৫০ মিটার লম্বা বাঁশের সাঁকো। এটি হারাগাছ পৌরসভা, হারাগাছ ইউনিয়ন ও উপজেলাকে যুক্ত করেছে। আশপাশের চরচতুরা, টাংরিরবাজার, মায়ারচর ও চরচারমাথাসহ ১০ গ্রামের মানুষ এ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৮৮ সালের দিকে এখানে ছিল মূল তিস্তা নদী। ওই বছর বাঁধ নির্মাণের ফলে গতিপথ পরিবর্তন করে নদী ভাটির দিকে চলে যায়। এখানে থেকে যায় শাখা। এরপর উত্তর প্রান্তের মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে ভেলা ও নৌকায় করে নদী পারাপার হতো। শেষে অনেক দাবি জানানোর পরও সেতু না পেয়ে এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন।

বর্তমানে শিক্ষার্থীসহ এলাকার সব মানুষকে সাঁকো দিয়েই ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করতে হচ্ছে। চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নদী পারাপারে এটিই একমাত্র ভরসা।

ঠাকুরদাস গ্রামের আবুল কালাম জানান, নদীর দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে খানসামা হাট। সপ্তাহে দুই দিন বসা এ হাটে চরাঞ্চলের ১০ গ্রামের হাজারো মানুষ কেনাকাটা করেন। তখন সাঁকো পারাপারে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

চরচতুরা গ্রামের কৃষক আজহার আলী জানান, বছরের বেশির ভাগ সময় তিস্তার শাখায় পানি থই থই করে। সেতুর অভাবে কৃষিপণ্য সহজে বাজারজাত করতে না পারায় কৃষকেরা পাইকারদের কাছে কম দামে বিক্রি করে দেন।

একই এলাকার ছাবেদ আলী বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে যাতায়াত, চলাফেরা, হাটে পণ্য আনা-নেওয়ায় অনেক কষ্ট হয়। অসুস্থ রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।’

বর্ষাকালে নদীতে পানি বেশি হলে সাঁকোর ওপর দিয়ে ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে অনেক অভিভাবক ভয় পান বলে জানান গোল্ডেন ঘাট এলাকার ইমাম আল হোসাইন।

ঘাট এলাকার নুর জামাল সানাই জানান, দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানানোর পরও সেতু না পেয়ে এলাকাবাসী বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করে। এটি সংস্কারে অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু সংস্কারের জন্য কোনো সহায়তাও মেলে না। তাই সোম ও শুক্রবার সপ্তাহে দুই দিন টোল তোলা হয়। সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচলকারী শিক্ষার্থী ও কৃষকসহ সব লোকজনের কাছ থেকে এই টোল আদায় করা হয়।

নদীতে পাকা সেতু নির্মাণ করা হলে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান পাল্টে যাবে বলে মন্তব্য করেন হারাগাছ পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহবুবর রহমান। তিনি জানান, নদীর দক্ষিণ পাশে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কয়েকটি মাদ্রাসাসহ দুটি বাজার ও একটি হাট রয়েছে। এ জন্য নদীর উত্তর পাড়ের গ্রামের সব মানুষকে সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করতে হয়।

হারাগাছ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. মর্তুজা এলাহী জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে গোল্ডেন ঘাটে ১৪০ মিটার দৈর্ঘ্য পাকা সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

হারাগাছ পৌরসভার মেয়র এরশাদুল হক এরশাদ বলেন, ‘গোল্ডেন ঘাট এলাকায় পাকা সেতু নির্মাণের জন্য আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি। বরাদ্দ পেলে সেতু নির্মাণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত