Ajker Patrika

দুই সিটিতে ভোটের লড়াই জমল না

আরিফুজ্জামান তুহিন, ঢাকা
দুই সিটিতে ভোটের লড়াই জমল না

জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট খুব বেশি পড়েনি, তা নিয়ে নানা কথা। এর দুই মাসের মাথায় কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও বিএনপি যে আসবে না, তা তারা আগেই পরিষ্কার করেছিল।

এ অবস্থায় ভোটের মাঠে প্রতিযোগিতার পরিবেশ ফেরাতে দলীয় প্রতীক দেয়নি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তারপরও জাতীয় নির্বাচনের ধারাবাহিকতা দেখা গেল কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে। সেই অর্থে লড়াই জমল না দুই সিটির কোনোটিতেই।

ময়মনসিংহে গতকাল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী ইকরামুল হক টিটুর সঙ্গে নিকটতম প্রার্থী সাদেকুল হক খানের ভোটের ব্যবধান ছিল প্রায় ১ লাখ। আর কুমিল্লায় মেয়র পদে উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৯ শতাংশের মতো। এর মধ্যেও বিজয়ী প্রার্থী তাহসিন বাহার সূচনার প্রাপ্ত ভোটের অর্ধেকের কিছুটা বেশি ভোট পড়েছে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক সাক্কুর প্রতীকে।

কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হাওয়ার বিষয়টি নজরে আনলে আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মানুষের একটি ধারণা সরকারি দলের প্রার্থীকে নির্বাচিত করলে এলাকার উন্নয়ন হবে। মানুষ দলের মূল প্রার্থী আর উন্নয়নকে বিবেচনায় নিচ্ছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৭ জানুয়ারি যা দেখেছিলাম, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে যা দেখেছি এবং আজকে (শনিবার) এ পর্যন্ত কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহে যা দেখেছি, তার সবকিছুই নির্বাচনের নামে প্রহসন। আমরা শুধু এ প্রত্যাশা করব, সরকার তাদের এই জবরদখল করা নির্বাচনের ধ্যানধারণা থেকে বের হয়ে আসবে এবং বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেবে।’

তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের মতে, সব ঠিকঠিকই আছে। ভোট শেষে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দৃষ্টিতে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কোনো অভিযোগ আমরা এখনো পাইনি যে, প্রভাব খাটানো হয়েছে, হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। কেন্দ্রের বাইরে গোলাগুলি হয়েছে, তবে কেন্দ্রের ভেতরে ভোট প্রভাবিত হয়নি।’ 

কুমিল্লায় কেন্দ্রের বাইরে গুলি
কুমিল্লায় মেয়র পদের উপনির্বাচন মনে হয়েছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। কেননা তাহসিন বাহার সূচনা ও মনিরুল হক সাক্কু দুজনেই শক্ত প্রার্থী। তাই ভোট নিয়ে নানা শঙ্কা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। কেননা ভোটের তিন দিন আগে থেকেই হামলা-ভাঙচুর, সংঘর্ষ শুরু হয়।

একাধিক প্রার্থীর শঙ্কা ছিল গতকালের ভোটের দিনও সুষ্ঠু পরিবেশ হবে না। তা-ই ঘটেছে। ভোট গ্রহণের দুই ঘণ্টার মধ্যেই একটি কেন্দ্রের বাইরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তাতেই সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দিনভর বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। দিনের শুরুতেই একাধিক প্রার্থীর অভিযোগ ছিল বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কেন্দ্রে আসতে দেওয়া হয়নি।

সেই সঙ্গে তাঁদের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগও করেন। সকালে ভোট দিতে এসে দুই প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের কাছে নানা অভিযোগও করেন।

তবে নির্বাচনে বল প্রয়োগের কথা স্বীকার করে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, প্রত্যেক প্রার্থীই কমবেশি শক্তি প্রয়োগ করেছে। ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যাঁরা এ কাজটি করেছেন তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সকাল ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মুন্সী এম আলী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে কেন্দ্রের পাশে মেয়র প্রার্থী নিজামের কর্মী জহিরুল আহমেদ ও তুহিনকে গুলি করেন মহানগর ছাত্রলীগের এক নেতা। আহত জহিরুল ও তুহিনকে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ঘোড়া প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নিজামউদ্দিন এ ঘটনার জন্য বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসীন বাহার সূচনার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তবে তাহসিন বাহার বলেন, তাঁর দিকে কেন অভিযোগ, তিনি জানেন না। এ সময় এই অভিযোগকে অপপ্রচার বলেও দাবি করেন সূচনা। 

ময়মনসিংহে মেয়র পদে ভোট হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো না
২০১৮ সালে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন ঘোষণার পর ২০১৯ অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকরামুল হক টিটু। নির্বাচন হয় শুধু কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে। এবার মেয়র হওয়ার জন্য ভোটে লড়তে হলো টিটুকে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আরও চারজন; কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেই অর্থে হলো না। নিকটতম প্রার্থী সাদিকুল হক খানকে ১ লাখ ভোটে হারিয়েছেন তিনি।

তবে মেয়র পদে ভোট হওয়ায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে তুলনামূলকভাবে বেড়েছে ভোটার উপস্থিতি। কিন্তু ইভিএমের ধীরগতির অভিযোগ এসেছে অনেক কেন্দ্র থেকে। অনেকেই ইভিএমে ভোট দিতে না পেরে ফিরে গেছেন। অনেক কেন্দ্রে সময় শেষ হওয়ার পরও নেওয়া হয়েছে ভোট।

সব মিলিয়ে ভোটের পরিবেশ নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে আর কোনো আগ্রহ নেই। মানুষ এখন বলছেন, এসব হাবিজাবির নির্বাচন। নির্বাচনব্যবস্থার প্রতিই সাধারণ মানুষের আর কোনো আস্থা নেই।

আর সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বললেন, ‘কুমিল্লায় দেখলাম অভিযোগ আছে, বিরোধী দলের লোকজনকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে। গোলাগুলিও হয়েছে শুনলাম। একদিকে বিরোধী দল নেই, আরেকদিকে নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাটাই প্রহসনে পরিণত হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত