Ajker Patrika

পৌষে কাবু নিম্ন আয়ের মানুষ

আব্দুর রব, মৌলভীবাজার
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ০৩
পৌষে কাবু নিম্ন আয়ের মানুষ

পৌষের শুরুতে মৌলভীবাজারে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। ভোর থেকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে চারদিক। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডার তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। রাত যতই গভীর হয়, ঠান্ডা ততই বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় শীতে কষ্টে ভুগছে ছিন্নমূল মানুষ। রাতের বেলায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুদের। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বেশি।

শ্রীমঙ্গল অফিসের আবহাওয়া কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, গতকাল শুক্রবার শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন, সকাল ও রাতে তাপমাত্রা নিচের দিকে থাকবে এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রাও বাড়বে।

মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট এলাকায় দেখা মিলে একদল শ্রমজীবী মানুষের। তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। কনকনে শীতের মধ্যে ট্রাকে করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছেন। অনেকে রিকশায় চড়ে যাচ্ছেন গন্তব্যে। তাঁরা বলেন, ‘কনকনে শীতে ভোরে জীবিকার তাগিদে কাজে বের হয়েছি। গত কয়েক দিনের চেয়ে শীতের প্রকোপ বেড়েছে। কুয়াশার পাশাপাশি ঠান্ডা বাতাসও বয়ে যাচ্ছে। শীতের পোশাক না থাকায় পাতলা চাদরে শীত নিবারণ হচ্ছে না।’

ষাটোর্ধ্ব ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘শীতে আমাদের মতো গরিব মানুষের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। কাজের জন্য ভোরে বের হতে হয়, কিন্তু শীতের পোশাক পর্যাপ্ত না থাকায় গুটিসুটি মেরে থাকতে হয়। টাকার অভাবে শীতের পোশাক কিনতে পারি না। এমন অবস্থায় ঠান্ডাজনিত রোগবালাই বেড়ে যায়। অসুস্থ হয়ে কাজে যেতে না পারলে সেদিন বাসায় চুলা জ্বলে না।’

সাত সদস্যদের পরিবার একাই চালান শহরের চাঁদনীঘাট এলাকার বাসিন্দা জায়ফর আলী। নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাঁর। একদিন কাজে না গেলে সংসার খরচ জুটে না। কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে তিনি কাজে বের হয়েছেন। জায়ফর আলী বলেন, ‘উপায় না পেয়ে শীতের সকালে কাজে বেরিয়েছি। পর্যাপ্ত শীতের পোশাক না থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে দ্বিগুণ। এদিকে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও শীতের পোশাক নেই। পৌষ শুরু হয়ে গেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার থেকে কোনো সাহায্য পাইনি। সরকার সাহায্য দিলে ভোগান্তি কমে আসত।’

দিনমজুর রমিজা বেগম বলেন, ‘বিভিন্ন হোটেলে ও দোকানে জন্য কাজ করি। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে যখন যে কাজ পাই, সে কাজ করি। সারা দিন কাজ করে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পাই। এই টাকা দিয়ে সংসার চলে। এমন অবস্থায় পরিবারের জন্য শীতের পোশাক কেনা কষ্টসাধ্য। আমাদের কেউ সাহায্যও করে না।’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, ‘আমরা সব সময় সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করি। এবার পৌষের শুরুতে বেশ ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। আমরা বৃহৎ পরিকল্পনা করছি, অধিকসংখ্যক মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য। সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে শীতে শ্রমজীবী ও গরিব মানুষ কষ্টে আছে তাঁদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় সহায়তা করার।’

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা রহমান বলেন, ‘সরকারিভাবে বেশ কিছু কম্বল এসেছে। এগুলো জেলা থেকে আমাদের দেওয়া হয়েছে। আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। ইউনিয়ন থেকে তালিকাও করা হচ্ছে। ২৬ ডিসেম্বর এই অঞ্চলে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের পরপরই বিতরণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত