আব্দুর রাজ্জাক
প্রতিনিয়ত আমরা যেসব ঘটনা দেখি, সেগুলোর সারাংশই আমাদের মনোজগতে গেঁথে থাকে। যদি আমাদের সমাজে ভালো কিছু ঘটনা ঘটে, যা সমাজের জন্য অতিপ্রয়োজনীয়, মানুষের কষ্ট লাঘব করে, ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করে, জ্ঞানের উদ্রেক করে, তবে সেই সব ভালো ঘটনাই মনোজগতে থেকে যাবে।
যদি আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা দেখি, চিরাচরিতভাবে এই অস্বাভাবিক ঘটনাকে যদি স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিই, তাহলে নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক জগৎ গঠিত হবে।
স্বাভাবিকভাবে যেসব কাজ হওয়ার কথা, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সেই কাজ না হয়ে যদি নেতিবাচক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়, সেখানেই সবার মনে প্রশ্ন জাগে, এ রকম কেন হলো। আর এ রকম যদি বেশি দিন চলতে থাকে, তাহলে ওই নেতিবাচক কাজগুলোই আমরা স্বাভাবিক জীবনের ঘটনা বলে ধরে নিই। তারপর প্রচলিত নিয়মে এ রকম নেতিবাচক কাজ চলতেই থাকে যুগের পর যুগ ধরে। এভাবে গঠিত হয় একটি নেতিবাচক সমাজ। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যখন এসব নেতিবাচক কাজ দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন সমাজের জন্য বিপদ ডেকে আনে।
এখানে বলতে হয়, সরকার যদি কোনো অন্যায় করে, কোনো জনবান্ধব নীতি গ্রহণ না করে, জনবান্ধব আইন প্রণয়ন না করে, তাহলে এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার। প্রতিবাদের বিভিন্ন ভাষা আছে। এখন আমরা প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করি, সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারি, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে তুলি, তাহলেই সাধারণ মানুষ সমাজ, রাষ্ট্র সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করবে। মানুষ অবশ্যই প্রতিবাদ করবে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে, কিন্তু সেটা হতে হবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার দিকে লক্ষ রেখে। কারও গুষ্টিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যদি প্রতিবাদের ভাষায় এমন করা হয়, যেখানে পুরো রাষ্ট্র জিম্মি হয়ে যায় বা গোটা সমাজ স্থবির হয়ে যায়, তখনই সমাজ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়।
আমাদের শিশুরা বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় যদি এসব অস্বাভাবিক ঘটনা, জ্বালাও-পোড়াও-খুন ইত্যাদির ছবি প্রতিনিয়ত দেখে, তাহলে তারা এগুলোকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত হয়। আমাদের কোনো কিছু আদায়ের জন্য এখন প্রধান অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তা অবরোধ, মহাসড়ক অবরোধ, রেলপথ অবরোধ। এসব সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথ দিয়ে প্রতিনিয়ত লক্ষ-কোটি মানুষ চলাচল করে। কোনো গোষ্ঠী যদি এসব জায়গায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে, তাহলে সারা শহর এমনকি সারা দেশ অচল হয়ে যায়। ভুক্তভোগীরাই এটা অনুভব করতে পারে, এটা যে কত কষ্টের! জরুরি কাজের তাড়নায় বাইরে বের হয়েও যদি এসব ঝামেলায় পড়তে হয়, তাহলে তার মনে বৈকল্য ঘটে। যুগের পর যুগ এই মনোবৈকল্য ঘটলে, সেই জাতির থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। এর প্রভাব সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে।
একই রকম প্রক্রিয়ায় সরকারি কোনো অফিসের কাজ যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় না হয়, তখন অসৎ পথ অবলম্বন করতে হয়। মানুষ হয়তো সাময়িক নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য অসৎ পথ অবলম্বন করে। ওই পথ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাকে ঘুষ অথবা উপঢৌকন দিতে হয়। এমনটা করে তার কার্য হাসিলের জন্য। কিন্তু মনে মনে সে বিরক্ত হয়; নিজের ওপরে নিজে বিরক্ত হয়, সমাজের ওপরে বিরক্ত হয়, রাষ্ট্রের সংস্কৃতির ওপর বিরক্ত হয়, তার মনোজগতে স্থায়ী একটি ক্ষতের সৃষ্টি হয়। মানুষের ষষ্ঠ-ইন্দ্রিয় বলে দেয় কোনটি স্বাভাবিক কাজ, কোনটি অস্বাভাবিক কাজ। মানুষ নিজে নিজেই বুঝতে পারে এ কাজটি তার নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে, সমাজের কাছ থেকে পাওয়া উচিত। এসব উচিত কাজ যখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় না পায়, তখনই তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
বর্তমান সময়ে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত যেকোনো অফিসে যান না কেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব অস্বাভাবিকতা দেখতে পাবেন। যেকোনো সুস্থ মানুষ যখন বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে বাসায় ফেরেন, তাঁর পরিবারের লোকজন, বাচ্চারা পর্যন্ত এসব শুনতে পায় বা টের পায়। পরিবারের ছোট সন্তান থেকে শুরু করে সবাই এসব বিরূপ প্রতিক্রিয়ার স্বরূপ বুঝতে পারে। এ রকম যুগের পর যুগ চলতে থাকলে পরিবারের সবাই, সমাজের সবাই ধরেই নেয় যে উল্লিখিত সংস্থা থেকে সেবা পেতে হলে তাকে ঘুষ দিতে হবে; অর্থাৎ এই ঘুষ দেওয়া বা নেওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দাঁড়ায়। এটা সমাজের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। আমরা এ রকম সমাজ চাই না, যেখানে অস্বাভাবিক ঘটনা স্বাভাবিকরূপে চলতে থাকে।
সেদিন ভূমিসংক্রান্ত কাজের জন্য বিভিন্ন অফিসে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছিলাম। কাজটি হয়নি। তখন আমার ছেলে বলল, ‘তুমি ওই সব অফিসে কিছু টাকা খাওয়ালে না কেন?’ আমার এই কিশোর ছেলেটিও বুঝে গেছে, এই সমাজ থেকে কোনো কাজ পেতে হলে টাকা দিতে হবে। ও এটাকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলে ধরে নিয়েছে। এখানে আমার ছেলে উদাহরণ মাত্র। সমাজের সর্বত্রই এ ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্যে বেড়ে উঠছে আমাদের তরুণ সমাজ। বর্তমান সময়ের এই তরুণ সমাজ যখন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে কোনো পদে আসীন হবে সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো পদে, তখন সে কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে বা কোনো কাজ করানোর ক্ষেত্রে যদি অসৎ পথ অবলম্বন করে, তাহলে তাকে দোষ দেওয়া যাবে কি?
আমরা যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সবকিছু সমাধান করতে পারি, সর্বস্তর থেকেই যদি ইতিবাচক সাড়া পাই, আমরা যদি যার যার অবস্থান থেকে প্রতিদিন ইতিবাচক কাজের মানসিকতা নিয়ে ঘর থে
কে বের হই, নিজে ইতিবাচক কাজ করি, অন্যকে ইতিবাচক কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করি, তাহলেই আমরা একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারব।আমাদের সমাজ থেকে দূর হোক সব অসংগতি—সেটা প্রতিবাদের ভাষায় হোক, কোনো কাজ হাসিলের জন্য হোক, কোনো দাবি আদায়ের জন্য হোক; তবে সব যেন হয় আইনকানুন মেনে, সাধারণ মানুষকে জিম্মি না করে। মানুষ যেন মানুষের জন্য কাজ করে, মানুষ যেন মানুষের কথা বিবেচনা করে, মানুষ যেন মানুষকে মানুষ হতে সাহায্য করে, সেভাবেই আমাদের পথ চলতে হবে।
সেদিন দেখলাম এফসিপিএস করা শিক্ষার্থীরাও ৬ ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে রেখে মানুষকে জিম্মি করেছেন। তাঁদের কারণে শাহবাগ থেকে শুরু করে চারপাশের কয়েক বর্গকিলোমিটারে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই প্রতিবাদ সাধারণ মানুষ আশা করেনি। অপরদিকে রেলের কর্মচারীরা রেল অবরোধ করে যে কাজটি করেছেন, সেটিও ঠিক হয়নি। তাঁদের বিকল্প পথ ছিল প্রতিবাদ জানানোর।
আমরা যে কেন সঠিক পন্থায় প্রতিবাদ না করে, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রতিবাদ করি, সেটার মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়ে গবেষণা করার সময় এসেছে। আমরা ধরেই নিয়েছি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রতিবাদ করলে দাবি আদায় হয় না, জনগণকে জিম্মি করতেই হবে—এটাই আমাদের মনোজগতে গেঁথে আছে।
লেখক: প্রকৌশলী
প্রতিনিয়ত আমরা যেসব ঘটনা দেখি, সেগুলোর সারাংশই আমাদের মনোজগতে গেঁথে থাকে। যদি আমাদের সমাজে ভালো কিছু ঘটনা ঘটে, যা সমাজের জন্য অতিপ্রয়োজনীয়, মানুষের কষ্ট লাঘব করে, ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূর করে, জ্ঞানের উদ্রেক করে, তবে সেই সব ভালো ঘটনাই মনোজগতে থেকে যাবে।
যদি আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা দেখি, চিরাচরিতভাবে এই অস্বাভাবিক ঘটনাকে যদি স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিই, তাহলে নেতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক জগৎ গঠিত হবে।
স্বাভাবিকভাবে যেসব কাজ হওয়ার কথা, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সেই কাজ না হয়ে যদি নেতিবাচক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়, সেখানেই সবার মনে প্রশ্ন জাগে, এ রকম কেন হলো। আর এ রকম যদি বেশি দিন চলতে থাকে, তাহলে ওই নেতিবাচক কাজগুলোই আমরা স্বাভাবিক জীবনের ঘটনা বলে ধরে নিই। তারপর প্রচলিত নিয়মে এ রকম নেতিবাচক কাজ চলতেই থাকে যুগের পর যুগ ধরে। এভাবে গঠিত হয় একটি নেতিবাচক সমাজ। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ যখন এসব নেতিবাচক কাজ দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন সমাজের জন্য বিপদ ডেকে আনে।
এখানে বলতে হয়, সরকার যদি কোনো অন্যায় করে, কোনো জনবান্ধব নীতি গ্রহণ না করে, জনবান্ধব আইন প্রণয়ন না করে, তাহলে এর প্রতিবাদ হওয়া দরকার। প্রতিবাদের বিভিন্ন ভাষা আছে। এখন আমরা প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করি, সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারি, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে তুলি, তাহলেই সাধারণ মানুষ সমাজ, রাষ্ট্র সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করবে। মানুষ অবশ্যই প্রতিবাদ করবে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে, কিন্তু সেটা হতে হবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার দিকে লক্ষ রেখে। কারও গুষ্টিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যদি প্রতিবাদের ভাষায় এমন করা হয়, যেখানে পুরো রাষ্ট্র জিম্মি হয়ে যায় বা গোটা সমাজ স্থবির হয়ে যায়, তখনই সমাজ সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়।
আমাদের শিশুরা বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় যদি এসব অস্বাভাবিক ঘটনা, জ্বালাও-পোড়াও-খুন ইত্যাদির ছবি প্রতিনিয়ত দেখে, তাহলে তারা এগুলোকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই দেখতে অভ্যস্ত হয়। আমাদের কোনো কিছু আদায়ের জন্য এখন প্রধান অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তা অবরোধ, মহাসড়ক অবরোধ, রেলপথ অবরোধ। এসব সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথ দিয়ে প্রতিনিয়ত লক্ষ-কোটি মানুষ চলাচল করে। কোনো গোষ্ঠী যদি এসব জায়গায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে, তাহলে সারা শহর এমনকি সারা দেশ অচল হয়ে যায়। ভুক্তভোগীরাই এটা অনুভব করতে পারে, এটা যে কত কষ্টের! জরুরি কাজের তাড়নায় বাইরে বের হয়েও যদি এসব ঝামেলায় পড়তে হয়, তাহলে তার মনে বৈকল্য ঘটে। যুগের পর যুগ এই মনোবৈকল্য ঘটলে, সেই জাতির থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। এর প্রভাব সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে।
একই রকম প্রক্রিয়ায় সরকারি কোনো অফিসের কাজ যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় না হয়, তখন অসৎ পথ অবলম্বন করতে হয়। মানুষ হয়তো সাময়িক নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য অসৎ পথ অবলম্বন করে। ওই পথ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাকে ঘুষ অথবা উপঢৌকন দিতে হয়। এমনটা করে তার কার্য হাসিলের জন্য। কিন্তু মনে মনে সে বিরক্ত হয়; নিজের ওপরে নিজে বিরক্ত হয়, সমাজের ওপরে বিরক্ত হয়, রাষ্ট্রের সংস্কৃতির ওপর বিরক্ত হয়, তার মনোজগতে স্থায়ী একটি ক্ষতের সৃষ্টি হয়। মানুষের ষষ্ঠ-ইন্দ্রিয় বলে দেয় কোনটি স্বাভাবিক কাজ, কোনটি অস্বাভাবিক কাজ। মানুষ নিজে নিজেই বুঝতে পারে এ কাজটি তার নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে, সমাজের কাছ থেকে পাওয়া উচিত। এসব উচিত কাজ যখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় না পায়, তখনই তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
বর্তমান সময়ে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত যেকোনো অফিসে যান না কেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব অস্বাভাবিকতা দেখতে পাবেন। যেকোনো সুস্থ মানুষ যখন বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে বাসায় ফেরেন, তাঁর পরিবারের লোকজন, বাচ্চারা পর্যন্ত এসব শুনতে পায় বা টের পায়। পরিবারের ছোট সন্তান থেকে শুরু করে সবাই এসব বিরূপ প্রতিক্রিয়ার স্বরূপ বুঝতে পারে। এ রকম যুগের পর যুগ চলতে থাকলে পরিবারের সবাই, সমাজের সবাই ধরেই নেয় যে উল্লিখিত সংস্থা থেকে সেবা পেতে হলে তাকে ঘুষ দিতে হবে; অর্থাৎ এই ঘুষ দেওয়া বা নেওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দাঁড়ায়। এটা সমাজের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। আমরা এ রকম সমাজ চাই না, যেখানে অস্বাভাবিক ঘটনা স্বাভাবিকরূপে চলতে থাকে।
সেদিন ভূমিসংক্রান্ত কাজের জন্য বিভিন্ন অফিসে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছিলাম। কাজটি হয়নি। তখন আমার ছেলে বলল, ‘তুমি ওই সব অফিসে কিছু টাকা খাওয়ালে না কেন?’ আমার এই কিশোর ছেলেটিও বুঝে গেছে, এই সমাজ থেকে কোনো কাজ পেতে হলে টাকা দিতে হবে। ও এটাকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলে ধরে নিয়েছে। এখানে আমার ছেলে উদাহরণ মাত্র। সমাজের সর্বত্রই এ ধরনের প্রক্রিয়ার মধ্যে বেড়ে উঠছে আমাদের তরুণ সমাজ। বর্তমান সময়ের এই তরুণ সমাজ যখন উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে কোনো পদে আসীন হবে সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো পদে, তখন সে কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে বা কোনো কাজ করানোর ক্ষেত্রে যদি অসৎ পথ অবলম্বন করে, তাহলে তাকে দোষ দেওয়া যাবে কি?
আমরা যদি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সবকিছু সমাধান করতে পারি, সর্বস্তর থেকেই যদি ইতিবাচক সাড়া পাই, আমরা যদি যার যার অবস্থান থেকে প্রতিদিন ইতিবাচক কাজের মানসিকতা নিয়ে ঘর থে
কে বের হই, নিজে ইতিবাচক কাজ করি, অন্যকে ইতিবাচক কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করি, তাহলেই আমরা একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারব।আমাদের সমাজ থেকে দূর হোক সব অসংগতি—সেটা প্রতিবাদের ভাষায় হোক, কোনো কাজ হাসিলের জন্য হোক, কোনো দাবি আদায়ের জন্য হোক; তবে সব যেন হয় আইনকানুন মেনে, সাধারণ মানুষকে জিম্মি না করে। মানুষ যেন মানুষের জন্য কাজ করে, মানুষ যেন মানুষের কথা বিবেচনা করে, মানুষ যেন মানুষকে মানুষ হতে সাহায্য করে, সেভাবেই আমাদের পথ চলতে হবে।
সেদিন দেখলাম এফসিপিএস করা শিক্ষার্থীরাও ৬ ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে রেখে মানুষকে জিম্মি করেছেন। তাঁদের কারণে শাহবাগ থেকে শুরু করে চারপাশের কয়েক বর্গকিলোমিটারে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, মানুষের ভোগান্তির শেষ ছিল না। এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই প্রতিবাদ সাধারণ মানুষ আশা করেনি। অপরদিকে রেলের কর্মচারীরা রেল অবরোধ করে যে কাজটি করেছেন, সেটিও ঠিক হয়নি। তাঁদের বিকল্প পথ ছিল প্রতিবাদ জানানোর।
আমরা যে কেন সঠিক পন্থায় প্রতিবাদ না করে, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রতিবাদ করি, সেটার মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়ে গবেষণা করার সময় এসেছে। আমরা ধরেই নিয়েছি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রতিবাদ করলে দাবি আদায় হয় না, জনগণকে জিম্মি করতেই হবে—এটাই আমাদের মনোজগতে গেঁথে আছে।
লেখক: প্রকৌশলী
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪