Ajker Patrika

ক্ষমা চেয়ে কৃষি আইন প্রত্যাহার করলেন মোদি

তরুণ চক্রবর্তী, কলকাতা
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২১, ১০: ৩০
Thumbnail image

কয়েক মাসের মধ্যে উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাবসহ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন। তার আগে বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করে কৃষক সন্তুষ্ট করার পথ ধরলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল শুক্রবার শিখ ধর্মগুরু গুরু নানকের জন্মদিনে দেশবাসীকে চমকে দিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন মোদি। বলেন, তিনটি কৃষি আইনই বাতিল করা হবে। আইন তিনটি প্রণয়নের জন্য কৃষকদের কাছে ক্ষমাও চান তিনি। বলেন, কৃষকদের বোঝানোয় খামতি ছিল।

নরেন্দ্র মোদির এ ঘোষণার পরই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা বলতে শুরু করেছেন, হার নিশ্চিত বুঝেই এমন আত্মসমর্পণ প্রধানমন্ত্রীর। তবে বিজেপির নেতা ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর পাল্টা দাবি, রাষ্ট্রনায়কের মতোই কাজ করেছেন মোদি।

বিভিন্ন রাজ্যে ভারতের সাম্প্রতিক নির্বাচনী ফলাফলে স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল, মোদি-ম্যাজিক সেখানে তেমন কাজ করছে না। তাঁর আমলে প্রণীত তিনটি কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে ভোটবাক্সে। আগামী

বছরের শুরুতেই পাঁচ রাজ্যে ভোট। সেখানেও কৃষক আন্দোলনের বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে কৃষক অধ্যুষিত উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবে। এ অবস্থায় এ মাসের মধ্যে তিন বিতর্কিত কৃষি আইন রদের ঘোষণা দেন মোদি। একই সঙ্গে আন্দোলনরত কৃষকদের ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। তবে তাঁর অনুরোধে সাড়া দেননি কৃষক নেতারা। কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়াত বলেন, সংসদে আইনটি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। একেবারে স্বভাববিরুদ্ধ ভঙ্গিতে নরেন্দ্র মোদি তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর গতকাল দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তবর্তী সিঙ্ঘু-টিকরি ধরনামঞ্চে বিজয় উৎসব শুরু হয়ে যায়। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা উপেক্ষা করে এক বছরের বেশি সময় ধরে এখানে বিক্ষোভ চালাচ্ছিলেন কৃষকেরা।

এই তিন আইনের বিরোধিতা করে দেশজুড়ে শুরু হয় আন্দোলন। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা উপেক্ষা করে গত বছরের আগস্ট থেকে রাজধানী দিল্লির বাইরে কৃষকেরা ধরনায় বসেন। ভারতজুড়ে এই আন্দোলন ছড়ালেও এর নেতৃত্বে ছিলেন পাঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশের কৃষক নেতারা। এই অহিংস আন্দোলনে এ পর্যন্ত ছয় শর বেশি কৃষক প্রাণ হারিয়েছেন।

কৃষি আইন প্রত্যাহারের পর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, সত্যাগ্রহীদের কাছে দর্পচূর্ণ হলো অহংকারীর। কংগ্রেস নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের মতে, ভোটে হারার ভয়েই বিজেপি আইনটি প্রত্যাহার করছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এই জয় সংগ্রামী কৃষকদের। লড়াইয়ে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের জন্য গভীর সমবেদনা জানান তিনি।

নরেন্দ্র মোদি সরকারের গত ৭ বছরের জমানায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার, রাফাল যুদ্ধবিমান কেলেঙ্কারি, অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণসহ একাধিক বিতর্কিত বিষয় উঠে আসে। কিন্তু কোনো কিছুকে নরেন্দ্র মোদি গ্রাহ্যের মধ্যে আনেননি। এটাকে এত দিন অনেকে মোদির শক্তি বা মোদি-ম্যাজিক বলে বর্ণনা করেছেন। এখন যে এতে আর কাজ হচ্ছে না, সেটাও বিজেপি কার্যত মেনে নিল কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা দিয়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত