Ajker Patrika

শুঁটকিতে আসছে বিপুল রাজস্ব

সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২১, ১৮: ২১
শুঁটকিতে আসছে বিপুল রাজস্ব

১ নভেম্বর থেকে বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার জেলে জড়ো হয়েছেন সেখানে। সমুদ্র মোহনা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ শেষে তা রোদে শুকিয়ে শুঁটকি প্রক্রিয়া করবেন তাঁরা। এই মাছ চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও বাজারজাত করা হবে।

শুঁটকিতে প্রতিবছর আসছে বিপুল রাজস্ব। এবার এ শুঁটকি মাছ তৈরিতে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বন বিভাগ। গত মৌসুমে শুঁটকি আহরিত হয়েছিল ৪৫ হাজার মেট্রিক টন এবং তা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল তিন কোটি ২২ লাখ টাকা। যদিও সে বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন কোটি ২০ লাখ টাকা। দুই লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হওয়ায় এ বছরও তাই সম্ভাব্য আদায় ধরে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা আদায় ঠিক করেছে বন বিভাগ।

সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগ সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূল সংলগ্ন দুবলার চরে প্রতিবছর নভেম্বরের প্রথম থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চলে শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ মৌসুম। মোংলা থেকে নদী পথে দুবলা জেলে পল্লির দূরত্ব প্রায় ৯০ নটিক্যাল মাইল। বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে সুন্দরবনের দুবলা চরের জেলে পল্লিতে ইতিমধ্যেই সমবেত হয়েছেন মোংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ উপকূলের হাজার হাজার জেলে। প্রতি বছর শুঁটকি মৌসুমে সাগর পাড়ের মেহের আলীর চর, আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেল বাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, ছাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদেখালী চরে প্রায় ১৫ হাজার জেলে জড়ো হয়। সম্মিলিত ভাবে এ চরগুলোকে দুবলার চর বলা হয়।

সূত্র আরও জানায়, দুবলা জেলে পল্লির জেলেরা নিজেদের থাকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখা ও শুঁটকি তৈরির জন্য অস্থায়ী ঘর তৈরি করে। জেলেরা সমুদ্র মোহনায় বেহুন্দী জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার ও বাছাই করে জাতওয়ারী মাছসমূহ শুঁটকি করে থাকে। এবার মোংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ সুন্দরবন উপকূলের কয়েক হাজার জেলেদের ৯৮৫টি ঘর এবং ৬৬টি ডিপো তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে পূর্ব সুন্দরবনের হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা সত্যজিৎ সাহা বলেন, এসব ঘর বা ডিপোতে ওঠা প্রতি কুইন্টাল রুপচাঁদা ও লইট্যা মাছের শুঁটকি থেকে ১৫০০ টাকা এবং অন্য সাধারণ মাছের শুঁটকি মাছ থেকে প্রতি কুইন্টাল ৫০০ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হবে। এ ছাড়া জেলেদের ঘর ও ডিপো থেকেও নির্ধারিত টাকা রাজস্ব আদায় করা হবে বলেও জানান তিনি।

শুঁটকি তৈরির জেলে রামপালের শহিদ মল্লিক, বোরহান উদ্দিন মোংলার বেল্লাল হোসেন বলেন, সমুদ্রের লোনা পানি থেকে লইট্যা, ছুরি, খলিসা, ভেদা, চিংড়ি, ইছা ও রুপচাঁদা মাছ আহরণ করেন তারা। এরপর টানা তিন থেকে চার দিন সেই কাঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে প্রায় একশ প্রজাতির শুঁটকি তৈরি করেন তাঁরা। এই শুঁটকি মাছ তৈরি করতে আগামী পাঁচ মাস সেখানে অবস্থানের অনুমতি মিলেছে। এই পাঁচ মাসে তাঁদের প্রয়োজনীয় রসদসহ যাবতীয় সবকিছু তাঁরা সঙ্গে নিয়ে দুবলার চরে এসেছেন। এবারও আশা করছেন, এ মৌসুমে আহরিত মাছের উপার্জন দিয়ে তাঁরা সারা বছর জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বন বিভাগের নির্ধারিত আইন অনুযায়ী শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ মৌসুমে জেলেদের পাশ-পারমিট দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জেলেরা যাতে সুন্দরবনের বনজ সম্পদ ধ্বংস করে থাকার ঘর নির্মাণ না করে সে জন্যে তাঁদের ঘর তৈরি করার সরঞ্জাম সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘জেলেদের মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের ওপর ভিত্তি করেই বন বিভাগের রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। করোনার মধ্যেও গত অর্থ বছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থ বছরে আমাদের রাজস্ব আয় হয়েছিল প্রায় ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। এ বছরও আমরা একই রাজস্ব আদায় আশা করছি। সে কারণে এবারও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

কারাগারে কয়েদিদের সঙ্গে আ.লীগ নেতাদের হাতাহাতির অভিযোগ

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

এনআইডির তথ্য ফাঁস করে ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জিয়াউলের বিরুদ্ধে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত