Ajker Patrika

স্কুল বন্ধ, জুমের কাজে ব্যস্ত পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা

শৈহ্লাচিং মারমা, রুমা (বান্দরবান)
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ৩২
Thumbnail image

বান্দরবানের রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউপির পাহাড়ি সেঙ্গুমপাড়ার বাসিন্দা উসিংথোয়াই মারমা। এ বছর রুমা বাজার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। পাড়া থেকে স্কুল দূরে হওয়ায় রুমা বাজারের পাশে এক আত্মীয়ের বাসায় থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

বছরের শুরুতে নতুন বইও পেয়েছে উসিংথোয়াই। এই সময় বইখাতা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। সম্প্রতি সেঙ্গুমপাড়ায় গিয়ে মাছ ধরতে বাঁশের ঝুড়ি বানাতে ব্যস্ত দেখা গেছে তাকে।

উসিংথোয়াই বলে, ‘স্কুলে নিয়মিত ক্লাসও হয় না। আবার বন্ধ দিয়েছে। কবে ভালো করে ক্লাস হবে জানি না। স্কুল বন্ধ বলে বাড়িতে চলে যেতে বলেছে স্যারেরা। তাই চলে এসেছি।’ পড়ালেখা করে চিকিৎসক হতে চায় উসিংথোয়াই। স্কুল বন্ধ থাকায় মোটেই ভালো লাগছে না বলে সে জানায়।

করোনার প্রভাবে সারা দেশের মতো রুমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। বাড়িতেও পড়ালেখায় তাগিদ কম। এই সুযোগে পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা খেত-খামার, বাগান ও জুমে চাষাবাদের কাজে লেগে পড়েছে। কেউ কেউ পাড়ার মাঠে খেলাধুলায় ব্যস্ত। বান্দরবানের রুমা উপজেলার বেথেলপাড়া, চাইরাগ্রপাড়া, ছাইপোপাড়া ও সেঙ্গুমপাড়া ঘুরতে গিয়ে এ অবস্থা দেখা গেছে।

সেঙ্গুমপাড়ায় উসিংথোয়াইয়ের মতো ১০ থেকে ১২টি ছেলে পাড়ার বাইরে বিভিন্ন স্থানে পড়ালেখা করে। এই ছুটিতে সবাই পাড়ায় ফিরে এসেছে। এখন তাদের অধিকাংশই জুমে কাজ করে, কেউ কেউ গুলটি দিয়ে পাখি মারে বলে সে জানায়।

উসিংথোয়াই আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি পাখি মারব না, মাছ ধরব। এ জন্য খালে মাছ ধরা ফাঁদ পাততে বাঁশের থ্রোং (ঝুড়ি) বানাইছি।’ পাড়ার অন্য ছেলেদের মতো বাড়িতে এলে সে পড়ালেখা করে না বলে জানায়।

সেঙ্গুমপাড়ার বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য মংশিংথোয়াই মারমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, করোনা কারণে স্কুল বন্ধ। এখন সব ছেলেমেয়ে বাড়িতে আছে। গত তিন বছরের বড়ুয়া ছেলেমেয়ে অনেকের বিয়েও হয়ে গেছে। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকেরা এখন খুবই চিন্তিত বলে জানান তিনি।

রুমা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের চলতি শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী ৩৬০ জন। একই সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষার্থী আছে ৮২ জন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, ‘এখানে ইন্টারনেটের গতির অবস্থা খুবই দুর্বল। তা ছাড়া পাহাড়ি এলাকায় সব জায়গা ইন্টারনেট পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় গত দুই বছরে অনলাইন ক্লাসও কার্যকর করা যায়নি।’ তাই শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মান ও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত এই শিক্ষক।

জানা গেছে, রুমা উপজেলায় ৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি উচ্চবিদ্যালয় ও একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। এতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোট প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। এ ছাড়া আর্থিকভাবে তুলনামূলক সচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা ঢাকাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছে। তবে করোনার সংক্রমণের প্রতিরোধে ২১ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত