Ajker Patrika

৩২ হাজার শতাংশ জমির মালিক রাজারবাগের পীর

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২২, ১৬: ৩৫
Thumbnail image

রাজারবাগের পীর দিল্লুর রহমানের নামে বিপুল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত শেষে আদালতে আংশিক প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পীর দিল্লুর রহমান ও তাঁর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৩২ হাজার ২০৫.৯১ শতাংশ জমি রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

দুদকের দাখিল করা ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, পার্বত্য বান্দরবানের লামায় ১২টি লিজমূলে রাবারবাগানের নামে রয়েছে ৩০ হাজার শতাংশ জমি। মসজিদ-মাদ্রাসার নামে দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৮১৯.৯১ শতাংশ, যার বেশির ভাগই দান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পৈতৃক ও ক্রয় সূত্রে দেখানো হয়েছে ৩৮৬ শতাংশ জমির মালিকানা।

এর বাইরে মতিঝিলে যৌথ সম্পত্তি দেখানো হয়েছে ৬৬.২৮ শতাংশ। যাতে ছয়তলা করে তিনটি বিশাল ভবন রয়েছে। যেখানে রয়েছে রাজারবাগ পীরের মূল আস্তানা। রয়েছে মাসিক আল বাইয়্যেনাত ও দৈনিক আল ইহসান পত্রিকার কার্যালয়। রয়েছে হাসপাতালও। এ ছাড়া রয়েছে পুরোনো ৫৬টি গাড়ি। যা দিয়ে তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হয়। পীর দিল্লুর রহমানের আয়কর নথি এবং ব্যাংক-বিমাসহ বিভিন্ন সংস্থায় থাকা তথ্য থেকে সম্পদের এই বিবরণী প্রস্তুত করা হয়েছে বলে দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী রাজারবাগ দরবার শরীফ কর্তৃক ৩০ জুন, ২০২১ পর্যন্ত আয়কর বিভাগে দাখিলকৃত অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানের মৌজায় ৯০টি দানপত্র দলিলমূলে মোট ১১৭৯.১৬ শতাংশ এবং ছয়টি দলিলমূলে ৬৩৯.৯৫ শতাংশ জমি ক্রয় সূত্রে মালিকানা অর্জিত হয়, যা ২০২১-২০২২ করবর্ষের দরবারের আয়কর রিটার্নে অডিট রিপোর্টসহ প্রদর্শিত বলে দেখা যায়।

হাইকোর্টে দুদকের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যে কারণে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও তিন মাস সময় চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মো. সাজ্জাদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আদালত বলেছেন, এটি শারীরিক উপস্থিতিতে শুনবেন। এর মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। সব তথ্য পাওয়ার পর দুদক অবশ্যই নিজেদের মতো করে তদন্ত করবে।’ গত বছররে ৫ ডিসেম্বর রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর দিল্লুর রহমানের বিষয়ে প্রতিবেদন দেয় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, পীর ও তার সঙ্গী-অনুসারীদের কার্যকলাপ ও উদ্দেশ্য দেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ; তাঁরা ধর্মভীরু লোকদের বিপথগামী করতে এবং ইসলামের নামে হত্যা ও জিহাদের দিকে প্ররোচিত করতে ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামের নামে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা করছেন; তাঁদের কার্যক্রম দেশের প্রচলিত আইন, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এদিকে রাজারবাগ পীরের বিষয়ে দুই দফায় প্রতিবেদন দিয়েছে সিআইডি। গত ৪ জানুয়ারি দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের নানা জায়গায় থাকা পীরের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার যে অভিযোগ উঠেছে, তারও প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে।

রাজারবাগ দরবারের পীর ও দরবারের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়েরের অভিযোগ এনে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন একাধিক ভুক্তভোগী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত