Ajker Patrika

৯৫ ভাগ ইটভাটাই অবৈধ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২২, ১৫: ৩৫
Thumbnail image

ঝিনাইদহে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ইটভাটা। এসব ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে ভাটামালিকেরা তাঁদের ব্যবসা চালাচ্ছেন। বছরের পর বছর এমন চললেও এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে দেখা মেলে না প্রশাসনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ।

যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৬টি ইটভাটার ছাড়পত্র রয়েছে। আর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১১৮টি ইটভাটার মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে মাত্র ৮ টির।

জেলার বিভিন্ন ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে লোকালয়ে, কৃষি জমির পাশে স্থাপন করা হচ্ছে ভাটা। এসব ভাটার কারণে কৃষি জমির ফসল যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাষাবাদ। পাশাপাশি ভাটার পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষও ধোঁয়ার কারণে ভুগছেন শ্বাসকষ্টসহ নানান রোগে। অভিযোগ রয়েছে, ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে স্থানীয় কৃষকদের জমি জোরপূর্বক দখলের।

অন্যদিকে কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ থাকলেও জেলার ৭০ ভাগ ভাটাই পুড়ছে হাজার হাজার মণ কাঠ। অভিযোগ রয়েছে, কিছু কিছু ভাটায় রাতে গোপনে পোড়ানো হয় কাঠ। মেহগনি, খেজুর, কড়াইসহ প্রতিদিন ভাটায় পুড়ছে বিভিন্ন গাছের গড়ে ১০ হাজার মণ কাঠ। এভাবে কাঠ পোড়ানোর ফলে বনভূমি উজাড়ের কারণে অসময়ের বৃষ্টিপাত, অতি খরাসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় হচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

পাগলা কানাই এলাকার বাসিন্দা নবির ইসলাম বলেন, ‘ভাটার পাশে আমাদের বাড়ি। খুব ধুলা আসে। ঘরের জানালা খুলে রাখা যায় না। খুবই সমস্যা হয়।’

মহেশপুর উপজেলার নস্তি এলাকার কৃষক আলী আকবর বলেন, ‘আমার সম্বল ১৬ শতক জমি। এ জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় জোর করে ভাটা মালিক তা দখল করে নিয়েছেন। সেই জমিতে তাঁরা মাটিও ফেলে। আমরা তো তাঁদের কাছে খুবই অসহায়। আমার মতো অনেক কৃষকেরই জমি ভাটা মালিকেরা দখল করে নিচ্ছেন। তাদের ঠেকানোর কেউ নেই জেলায়।’

শৈলকুপার দুধসর এলাকার ইটভাটা মালিক ওলিউর রহমান সুজন বলেন, ‘এটা সত্য যে কাঠ বেশি পোড়ালে পরিবেশের ক্ষতি হয়। কিন্তু কয়লার ঊর্ধ্ব বাজারই হচ্ছে ভাটায় কাঠ পোড়ানোর মূল কারণ। কয়লা কিনে যে খরচ হয় তাতে ইট বিক্রি করে সে অনুসারে লভ্যাংশ আসে না। আর এক একটি ভাটায় কি পরিমাণ কাঠ পুড়বে তা নির্ভর করে ইট পোড়ানোর পরিমাণের ওপর।’

ঝিনাইদহ জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক শাহারুল বলেন, ‘আমি বাইরে আছি। ভাটার বিষয়ে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বললে বেশি ভালো হয়।’

ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেকেন্দার আলী বলেন, ‘ইটভাটা কিংবা বিভিন্ন কারণে অবাধে গাছ কাটার ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি, অসময়ে বৃষ্টি, বন্যা, খরাসহ অন্যান্য অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মূলত পরিবেশ বিপর্যয়েরই ফল। এ থেকে বাঁচতে হলে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করে বেশি বেশি গাছ লাগানো খুব জরুরি।’

যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার না থাকায় পরিবেশের ছাড়াপত্র না থাকা ভাটাগুলোতে নিয়মিত অভিযান করতে পারি না। অধিদপ্তর থেকে পাঠানো ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আমাদের অধীনে ঝিনাইদহ, নড়াইলসহ কয়েকটি জেলা রয়েছে। ফলে অধিদপ্তরের নির্ধারিত শিডিউলের ভিত্তিতে ভাটাগুলোতে অভিযান করতে হয়।’

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম জানান, লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টুঙ্গিপাড়া থানা-পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে রাতভর সেনাবাহিনীর পাহারা

গণ-অভ্যুত্থান ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম

ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন সিরামিক শিল্পের মালিকেরা

বগুড়ায় আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

ভারতকে নিয়ে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশীদের এত সন্দেহ কেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত