তামান্না তাসকীন
মানুষের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করতে এবং জ্ঞান অনুসন্ধিৎসু মনের জানালাকে উন্মুক্ত করতে যে জিনিসটির অবদান সবচেয়ে বেশি তা হলো, বই। বইকে সেই আমাদের জীবনের অনাবিষ্কৃত সম্পদভান্ডার বলা যায়, যা যত ব্যবহার করা যায়, ততই তার উৎকর্ষ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্রমহ্রাসমান অন্য সব উৎপাদনবিধির মতো তা একেবারে চরমে ওঠে, কিন্তু নিম্নগামী হয় না। বইয়ের এত ক্ষমতা থাকার পরও আজকাল হাতে লেখা চিঠির মতো বই পড়ার পাঠকের বড় আকাল লক্ষ করা যাচ্ছে।
আমার এক ছাত্রকে ক্লাস করার সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম, পাঠ্যবই ছাড়া অন্য বই পড়তে কেমন লাগে? উত্তরটা ছিল বেশ উদ্বেগজনক। শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে, পড়ার বইয়ের বাইরে অন্য বই পড়লে সময়ের অপচয় হয়। তা ছাড়া গল্প, উপন্যাস, কবিতা বা প্রবন্ধ পড়তে অনেক সময় লাগে। এর চেয়ে অনলাইনে কোনো খেলা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় দিলে অনেক কিছুতেই আপডেট থাকা যায়। বই পড়া বিষয়ে এমন মন্তব্য শোনার পর থেকে মনে হচ্ছিল, এ বিষয়ে এখন সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। অন্যথায় বইয়ের পাঠককে খুঁজতে হবে জাদুঘরে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বর্তমানে একজন ব্যক্তির হাতে যদি ১০ হাজার টাকা দেওয়া যায় তাহলে সে সেই টাকায় প্রথমেই একটি স্মার্টফোন কিনতে চাইবে এবং সেটি কেনার জন্য যে আগ্রহে সে র্যাম ও রমের তথ্য সংগ্রহ করবে, বই কেনার কথা বললে সেই ব্যক্তি কখনোই আগ্রহী হবে না, এটাই বর্তমান বাস্তবতা।’
একসময় কারও কাছ থেকে বই উপহার পাওয়াটা বড় আনন্দের ব্যাপার ছিল। উপহারের বইয়ের ভেতরে প্রাপকের নামে নিজের নাম দেখলে যত আনন্দ লাগত, একটি নতুন জামা কিনলেও সেই আনন্দ পাওয়া যেত না। আবার জন্মদিনে বই পেলে আগে দেখে নিতে ভালো লাগত বইটি আগে পড়া আছে কি না? তাহলে কারও সঙ্গে বদলিয়ে আরেকটি নতুন বই পড়ার সুযোগ হবে। অনেক দিন পর আবার ঘর গোছাতে গিয়ে সেই বইয়ের মাঝে প্রেরকের নাম দেখতে পেলেও নতুন আনন্দের অনুভূতি কাজ করত। আর যিনি কবি বা সাহিত্যিক তাঁর কাছে তাঁর বই হলো সন্তানের মতো। একেক বয়সের পাঠকের কাছে একেক ধরনের বই ভালো লাগে। বই মানুষকে নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি দিতে পারে। বন্ধু হতে পারে। বই কোনো বিষয়ে মনোযোগী হতে এবং অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে।
বর্তমানে অনেক শিশুর মাকে বলতে শুনি তাঁর শিশুটি অস্থির, কোনো কাজে মনোযোগ দিতে চায় না। অনেক খেলনা কিনে দিলেও খেলে না। অথচ কেউ কিন্তু একটিবারও বই পড়ার বা কেনার বিষয়ে কোনো কথা বলেন না। এখনকার বইয়ের মান নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। বইয়ের মান বাড়ানোর জন্যও তো পাঠকের ইতিবাচক উপস্থিতি দরকার। বই পড়ে কী লাভ? এমন প্রশ্ন যাঁরা করেন তাঁদের জন্য কোনো উত্তর দেওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না। কেননা বই না পড়ে তাঁরা যে প্রান্তে আছেন, সেখানে হতাশা, নেতিবাচকতা, অস্থিরতা, আর নেতিবাচক মূল্যবোধ চর্চা ছাড়া বর্তমান প্রজন্ম কী পাচ্ছে—ভেবে দেখা দরকার!
পরিশেষে এ কথা না বললেই নয়, বই পড়তে সময় লাগলেও এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী এবং সুদূরপ্রসারী। অন্যদিকে ডিভাইসের মধ্য দিয়ে যে তথ্যপ্রাপ্তির দোহাই বর্তমান প্রজন্ম দিয়ে থাকে, তাদের জন্য সত্যিই কষ্ট হয়। কেননা টিকটক, ভাইরাল নিউজের যে উন্মাদনায় জাতি এখন ছুটছে, তার সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব মানুষের সম্পর্কের মধ্যে প্রতীয়মান হচ্ছে। ছিঁড়ে যাচ্ছে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের সুতাগুলো। সৃষ্টি হচ্ছে মানসিক চাপ, যার পরিণতিতে ঘটছে মানসিক কষ্ট, আত্মহত্যা, বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি। বই পড়ার অভ্যাস যাঁর আছে, তিনি একজন মানবিক মানুষ হবেন, এটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সত্য—তা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলা যায়। কিন্তু সময় নষ্ট হবে বলে যাঁরা বই পড়তে চান না, তাঁদের জন্য সমবেদনা রইল। বইকে সঙ্গী করার জন্য ইচ্ছেশক্তি আর আগ্রহ দেখালে যেকোনো জাতির মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ পৃথিবীর সব উন্নত জাতির মানুষজন পড়ুয়া।
আর বই পড়ার কারণে সমাজে ইতিবাচক মূল্যবোধের আবহ সৃষ্টি হয়। তাই বলব, বই পড়ুন এবং বইকে ভালোবাসুন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সমাজকর্ম, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা
মানুষের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করতে এবং জ্ঞান অনুসন্ধিৎসু মনের জানালাকে উন্মুক্ত করতে যে জিনিসটির অবদান সবচেয়ে বেশি তা হলো, বই। বইকে সেই আমাদের জীবনের অনাবিষ্কৃত সম্পদভান্ডার বলা যায়, যা যত ব্যবহার করা যায়, ততই তার উৎকর্ষ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্রমহ্রাসমান অন্য সব উৎপাদনবিধির মতো তা একেবারে চরমে ওঠে, কিন্তু নিম্নগামী হয় না। বইয়ের এত ক্ষমতা থাকার পরও আজকাল হাতে লেখা চিঠির মতো বই পড়ার পাঠকের বড় আকাল লক্ষ করা যাচ্ছে।
আমার এক ছাত্রকে ক্লাস করার সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম, পাঠ্যবই ছাড়া অন্য বই পড়তে কেমন লাগে? উত্তরটা ছিল বেশ উদ্বেগজনক। শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে, পড়ার বইয়ের বাইরে অন্য বই পড়লে সময়ের অপচয় হয়। তা ছাড়া গল্প, উপন্যাস, কবিতা বা প্রবন্ধ পড়তে অনেক সময় লাগে। এর চেয়ে অনলাইনে কোনো খেলা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় দিলে অনেক কিছুতেই আপডেট থাকা যায়। বই পড়া বিষয়ে এমন মন্তব্য শোনার পর থেকে মনে হচ্ছিল, এ বিষয়ে এখন সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। অন্যথায় বইয়ের পাঠককে খুঁজতে হবে জাদুঘরে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বর্তমানে একজন ব্যক্তির হাতে যদি ১০ হাজার টাকা দেওয়া যায় তাহলে সে সেই টাকায় প্রথমেই একটি স্মার্টফোন কিনতে চাইবে এবং সেটি কেনার জন্য যে আগ্রহে সে র্যাম ও রমের তথ্য সংগ্রহ করবে, বই কেনার কথা বললে সেই ব্যক্তি কখনোই আগ্রহী হবে না, এটাই বর্তমান বাস্তবতা।’
একসময় কারও কাছ থেকে বই উপহার পাওয়াটা বড় আনন্দের ব্যাপার ছিল। উপহারের বইয়ের ভেতরে প্রাপকের নামে নিজের নাম দেখলে যত আনন্দ লাগত, একটি নতুন জামা কিনলেও সেই আনন্দ পাওয়া যেত না। আবার জন্মদিনে বই পেলে আগে দেখে নিতে ভালো লাগত বইটি আগে পড়া আছে কি না? তাহলে কারও সঙ্গে বদলিয়ে আরেকটি নতুন বই পড়ার সুযোগ হবে। অনেক দিন পর আবার ঘর গোছাতে গিয়ে সেই বইয়ের মাঝে প্রেরকের নাম দেখতে পেলেও নতুন আনন্দের অনুভূতি কাজ করত। আর যিনি কবি বা সাহিত্যিক তাঁর কাছে তাঁর বই হলো সন্তানের মতো। একেক বয়সের পাঠকের কাছে একেক ধরনের বই ভালো লাগে। বই মানুষকে নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি দিতে পারে। বন্ধু হতে পারে। বই কোনো বিষয়ে মনোযোগী হতে এবং অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করে।
বর্তমানে অনেক শিশুর মাকে বলতে শুনি তাঁর শিশুটি অস্থির, কোনো কাজে মনোযোগ দিতে চায় না। অনেক খেলনা কিনে দিলেও খেলে না। অথচ কেউ কিন্তু একটিবারও বই পড়ার বা কেনার বিষয়ে কোনো কথা বলেন না। এখনকার বইয়ের মান নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। বইয়ের মান বাড়ানোর জন্যও তো পাঠকের ইতিবাচক উপস্থিতি দরকার। বই পড়ে কী লাভ? এমন প্রশ্ন যাঁরা করেন তাঁদের জন্য কোনো উত্তর দেওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না। কেননা বই না পড়ে তাঁরা যে প্রান্তে আছেন, সেখানে হতাশা, নেতিবাচকতা, অস্থিরতা, আর নেতিবাচক মূল্যবোধ চর্চা ছাড়া বর্তমান প্রজন্ম কী পাচ্ছে—ভেবে দেখা দরকার!
পরিশেষে এ কথা না বললেই নয়, বই পড়তে সময় লাগলেও এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী এবং সুদূরপ্রসারী। অন্যদিকে ডিভাইসের মধ্য দিয়ে যে তথ্যপ্রাপ্তির দোহাই বর্তমান প্রজন্ম দিয়ে থাকে, তাদের জন্য সত্যিই কষ্ট হয়। কেননা টিকটক, ভাইরাল নিউজের যে উন্মাদনায় জাতি এখন ছুটছে, তার সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব মানুষের সম্পর্কের মধ্যে প্রতীয়মান হচ্ছে। ছিঁড়ে যাচ্ছে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের সুতাগুলো। সৃষ্টি হচ্ছে মানসিক চাপ, যার পরিণতিতে ঘটছে মানসিক কষ্ট, আত্মহত্যা, বিবাহবিচ্ছেদ ইত্যাদি। বই পড়ার অভ্যাস যাঁর আছে, তিনি একজন মানবিক মানুষ হবেন, এটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সত্য—তা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলা যায়। কিন্তু সময় নষ্ট হবে বলে যাঁরা বই পড়তে চান না, তাঁদের জন্য সমবেদনা রইল। বইকে সঙ্গী করার জন্য ইচ্ছেশক্তি আর আগ্রহ দেখালে যেকোনো জাতির মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ পৃথিবীর সব উন্নত জাতির মানুষজন পড়ুয়া।
আর বই পড়ার কারণে সমাজে ইতিবাচক মূল্যবোধের আবহ সৃষ্টি হয়। তাই বলব, বই পড়ুন এবং বইকে ভালোবাসুন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সমাজকর্ম, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৪ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৪ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৪ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫