Ajker Patrika

মনসুর কি হারিয়ে যাবেন

ওয়াহিদুজ্জামান, বেড়া (পাবনা) 
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯: ৪১
মনসুর কি হারিয়ে যাবেন

আজ থেকে ঠিক বিরানব্বই বছর আগে ‘হারামণি’র প্রথম খণ্ড যখন প্রকাশিত হয়, মনসুর উদ্দিনের বয়স তখন সাতাশ বছর। এর আগেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়েছে। ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় লেখা ছাপা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ নিয়মিত হয়েছে। এসব সূত্রে ‘হারামণি’ প্রথম খণ্ডে রবীন্দ্রনাথ ভূমিকা লিখেছিলেন।

তারপর বছর বছর সেই খণ্ডগুলো বাড়তে বাড়তে তেরোখানায় গিয়ে ঠেকল। গানের সংখ্যা হলো পাঁচ হাজারের বেশি! ১৯৩১ থেকে ১৯৮৪ সাল, এই তেপ্পান্ন বছরের কালপর্বে মনসুর উদ্দিন বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের গান। সেগুলো প্রকাশ করেছিলেন ‘হারামণি’র তেরো খণ্ডে। এই আশ্চর্য সাধনা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আর কেউ করেছেন কি না, সেটা গবেষণার বিষয়। হারামণি সংকলন বাদেও একখানা উপন্যাসসহ তাঁর নিজের লেখা এগারোখানা বইয়ের কথা জানা যায়। এগুলোর মধ্যে আছে ‘হাসি অভিধান’। কিন্তু হারামণিকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি কোনো কিছু।

এর বড় কারণ, আমরা ‘লোকসংগীত’ বলে যে গানগুলোর কথা জানি, যে কবি ও গীতিকারদের কথা জানি, মনসুর উদ্দিন তাঁদের গান সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছিলেন। না হলে বহু আগেই হয়তো তাঁরা বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতেন। উদাহরণ দেওয়া যাক। হারামণির ষষ্ঠ খণ্ডে লালনের দুই শর বেশি গান রয়েছে।

সপ্তমটিতে ছিল সাত শর বেশি গান, যেগুলোর বেশ কিছু সিলেট এলাকা থেকে সংগৃহীত। এ ছাড়া হাসন রাজা, পাঞ্জু শাহ, শিতালং শাহ, আরকুম শাহ, মনোমোহন, রাধারমণ, দ্বিজ দাস, শেখ ভানু, কুরবান, আবদুল জব্বার, মদন গানবী, শাহ মোহাম্মদ ইয়াসিন প্রমুখের গান সংগ্রহ করেছিলেন মনসুর উদ্দিন। শুধু তা-ই নয়, ৮৪ পৃষ্ঠার একটি দীর্ঘ ভূমিকা যুক্ত করেছিলেন সপ্তম খণ্ডে। এই বিশাল সংগ্রহকর্ম এবং একই সঙ্গে কবি ও গীতিকারদের সংক্ষিপ্ত জীবনী লিখে যাওয়া এই দুরূহ কাজ করতে পেরেছিলেন মুহম্মদ মনসুর উদ্দিন।

একজীবনে মনসুর উদ্দিন এই বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ করে দেশের সাহিত্যসম্পদের একটি বড় অংশকে বিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। সেই মনসুর উদ্দিনই এখন বিস্মৃতির অতলে! তাঁর নিজ গ্রাম সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়নের মুরারিপুরেই নিজের পরিচয়ের খানিকটা খুইয়েছেন তিনি! নিজে কোনো কবিতার বই না লিখলেও এলাকার কিছু মানুষ তাঁকে কবি হিসেবেই চেনেন। যাঁরা তাঁকে চেনেন, তাঁরা এখন মনসুর উদ্দিনের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন।

ইতিমধ্যে মুরারিপুরে গড়ে উঠেছে ‘নব জাগরণ পাঠক মেলা’ নামের একটি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন। সংগঠনটি ২০১২ সাল থেকে উপজেলার সাগরকান্দিতে ফেব্রুয়ারি মাসে তিন দিনব্যাপী বইমেলা, আলোচনা সভাসহ কিছু কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। এর সভাপতি মো. রেজাউল করিম শেখ।

রাজশাহী বিভাগের দুবার স্বর্ণজয়ী প্রধান শিক্ষক পঙ্কজ কুমার পোদ্দারের নেতৃত্বে এলাকার উৎসাহী মানুষ ২০১৬ সালে তৈরি করেছিলেন ‘কবি মনসুর উদ্দিন বালিকা বিদ্যালয়’। কিন্তু জমিমালিকের আপত্তির কারণে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

তবে এত সব নেতিবাচকতার মধ্যেও ‘শিখা একাডেমি’ নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নব জাগরণ পাঠক মেলা কবির স্মৃতিরক্ষার কার্যক্রম সচল রেখেছে। স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবন মনসুর উদ্দিনের নামে নামকরণ করা হলেও একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণের দাবি জানিয়েছেন এলাকার মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত