Ajker Patrika

বন্য হাতির আক্রমণ, ধান নিয়ে দুশ্চিন্তা কৃষকের

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি
বন্য হাতির আক্রমণ, ধান  নিয়ে দুশ্চিন্তা কৃষকের

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী দাওধারা গ্রামের কিষানি জস্টিন সাংমা (৪৮)। ঋণ করে পাহাড়ের ঢালে এক একর জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন। ধানও প্রায় পেকে এসেছে। ১০-১২ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলার পরিকল্পনাও তাঁর। কিন্তু বন্য হাতির ভয়ে ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। বন্য হাতি এখন পর্যন্ত দুবার তাণ্ডব চালিয়েছে তাঁর ধানখেতে। এই দুশ্চিন্তা জস্টিনের একার নয়, তাঁর মতো সীমান্তবর্তী ১৩টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক কৃষকের। ফসল রক্ষায় হাতি তাড়াতে পালা করে পাহারা বসিয়েছেন গ্রামবাসী।

ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে হাতির সন্ধানে মাঠে ঘুরছি। কখন এসে পড়ে, তার তো কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। কারণ, পাহাড় জঙ্গলে তো হাতিই থাকবে। ফসল রক্ষায় হাতি তাড়াতে এলাকাবাসীর পাশাপাশি এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম কাজ করছে। এ পর্যন্ত যাঁরা হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে আবেদন পাঠানো হয়েছে।’

বন ও কৃষি বিভাগ, জনপ্রতিনিধি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন মাস ধরে উপজেলার সীমান্তবর্তী রামচন্দ্রকুড়া, নয়াবিল ও পোড়াগাঁও ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় ৪০-৪৫টি ছোট-বড় বন্য হাতির দল খাদ্যের সন্ধানে চষে বেড়াচ্ছে। তিনটি ইউনিয়নের পানিহাটা, তাড়ানি, মায়াঘাসি, কালাকুমা, নাকুগাঁও, দাওধারা-কাটাবাড়ি, ডালুকোনা, আন্ধারুপাড়া, খলচন্দা, বুরুঙ্গা-কালাপানি, বাতকুচি ও সমশ্চুড়া পাহাড়ি ঢালে পাঁচ শতাধিক প্রান্তিক কৃষক ৮০০ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেন। অধিকাংশ জমিতে ধান প্রায় পেকে এসেছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। গ্রামবাসী খেতের পাশে টং ঘর তৈরি করে মশাল জ্বালিয়ে, পটকা ফুটিয়ে ও হইহুল্লোড় করে হাতির দলকে জমি থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন।

নাকুগাঁও গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আবদুর রহিম বলেন, ‘ধার-দেনা কইরা পাহাড়ের ঢালে ১ একর ৮ শতাংশ জমিতে আমন ধান লাগাই ছিলাম। ফলনও ভালো হইছিল। ধানও পাইকা গেছে। কিন্তু হাতির ভয়ে তো অহন বাড়ির সবাইরে লইয়া খেতের পাশেই দিন রাইত বইয়া থাহি। এহন পর্যন্ত তিনবার আমার খেতে আত্তির দল আক্রমণ চালাইছে।’ 
মায়াঘাসি গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অহন ধান পাকা শুরু করছে, সেই সঙ্গে হাতির তাণ্ডবও বাইরা গেছে। গত বছরও হাতির লাইগা ধান ঘরে তোলবার পাই নাই। অহন যদি হিবার ধান খাইয়া ফালায়, তাইলে সীমান্তের কৃষকগরে না খাইয়া থাহুন লাগবো।’

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর কবীর বলেন, ‘হাতি পাহাড়ে থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। তবে এ পর্যন্ত যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের বিকল্প হিসেবে কৃষি প্রণোদনার বিভিন্ন সহায়তা করা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত