Ajker Patrika

বালু তোলায় বাড়ি-জমি নদীগর্ভে

নড়াইল প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ১৬: ২৫
বালু তোলায় বাড়ি-জমি নদীগর্ভে

নড়াইলের বাবলা-হাসলা ইউনিয়নের হাসলা এলাকায় নবগঙ্গা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে হাসলা ও পাটকেলবাড়ি গ্রামের বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও ইটভাটা ভাঙনের কবলে পড়েছে। এ বছর নয়টি পরিবারের ১৩টি পাকা ও আধপাকা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুটি ইটভাটা এবং তিন শতাধিক গাছপালা নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে একাধিক ইটভাটা ও বাড়িঘর।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার বাবলা-হাসলা ইউনিয়নের ৩০০ বছরের পুরোনো শুক্তগ্রাম বাজার, শুক্তগ্রাম কুমার ও চরপাড়া, হাসলা, চান্দেরচর, পাটকেলবাড়ি ও কাঞ্চনপুর গ্রাম তিন দশক ধরে প্রতিবছরই কমবেশি নবগঙ্গা নদীতে ভাঙছে। এ মৌসুমেও প্রায় ১৫ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেও গত ১ বৈশাখ থেকে আগামী ৩০ চৈত্র পর্যন্ত এক বছর ইউনিয়নের বাবলা-হাসলা মৌজার বালুর চরটি প্রশাসনের কাছ থেকে দুই কোটি ৮৮ লাখ টাকায় ইজারা নেওয়া হয়েছে। ইজারা নিয়েছেন কালিয়ার পুরুলিয়া ইউনিয়নের দিয়াডাঙ্গা গ্রামের ত্বকি সরদার।

বাবলা-হাসলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাসলা গ্রামের মোশাররেফ হোসেন বলেন, ­বালুর চরের ইজারাদার বাবলা-হাসলা মৌজায় ৯ একর জায়গার চর থেকে কাটার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে এসে ১৫০একরের বেশি জায়গায় রাত-দিন বালু উত্তোলন করছেন। আগে ৩০-৩৫টি ট্রলার ও ড্রেজার দিয়ে বালু কাটলেও বর্তমানে প্রায় ১৫টি ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন পিকুল এর প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয়নি। চলতি মাসের শেষের দিকে এলাকার মানুষ মানববন্ধন করেছে। থানার ওসি, ইউএনও এবং জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, হাসলা গ্রামের পান্নু খান, সাকায়েত মোল্লা, জাফরুল মোল্লা, জাবেদ খান, সুলতান ভাঙ্গাড়ি, মামুন ভাঙ্গাড়ি, বিল্লাল ফকির, ও জোমাত সিকদারের ১২টি ঘর চলে গেছে। এ ছাড়া শামসুর রহমান, ফুলি বেগম ও তানজিলার বাড়ি ভাঙনের মুখে। তারা নিজেরা বাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

বালু উত্তোলনের আধা মাইল দূরে অবস্থিত পাটকেলবাড়ি এলাকার ইটভাটা মালিক জসিম ফকির জানান, এ মৌসুমে তাঁর ও সাদ্দাম খানের ইটের ভাটাসহ ১০০ একর জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া লিটন শেখ, ইয়াসিন মোল্লা ও লিটন মোল্লার ভাটা ভাঙনের মুখে রয়েছে।

এ বিষয়ে চরের ইজারাদার মো. মোশারফ জানান, নির্দিষ্ট চরের বাইরে এবং রাতে বালু কাটা হচ্ছে না। কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি নদীতে চলে যাচ্ছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কিছু ফসলি জমি ও বাড়ি ভাঙছে এটা কিছুটা সত্য। তবে বালুর চর থাকলে সেখান থেকে বালু না কাটলে পানির স্বাভাবিক চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে নদীর যে কোনো তীর ভাঙার সম্ভাবনা থাকে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৌখিকভাবে অভিযোগের কিছু সত্যতা আছে বলে জানিয়েছেন। এখন লিখিত প্রতিবেদন পেলেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত