Ajker Patrika

ধানগাছে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২২, ১১: ৫৮
Thumbnail image

সাতক্ষীরা জেলায় বোরোখেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এ রোগের আক্রমণে বিস্তীর্ণ মাঠের ধানগাছের পাতা সাদা হয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। ধানের শিষ আসার আগেই ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এমনকি বোরোর উৎপাদন এক-চতুর্থাংশ কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন জেলার কৃষি কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রহ্মরাজপুর, ফিংড়ি, উত্তর দেবনগর, আখড়াখোলা, তুজুলপুর, মাধবকাটি, রামেরডাঙাসহ বিভিন্ন উপজেলার ধানখেতে গিয়ে দেখা গেছে, বোরোখেতে বিশেষ করে ব্রি-২৮ ধানের পাতা শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। ধানগাছ শুকিয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে। রোগ প্রতিরোধে অনেকেই ধানখেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন। এতেও সমাধান মিলছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন। ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে এ বছর প্রায় ৯০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন কম হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যোগরাজপুর গ্রামের সাবান আলী জানান, তিনি এবার চার বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। দুই সপ্তাহ আগে বিনেরপোতা, নগরঘাটা এলাকায় ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে বলে জানতে পারেন। তার তিন দিন না পেরোতেই নিজের খেতে ধানের পাতা সাদা হতে দেখেন। কোনো উপায় না দেখে আলাপ করেন কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী তিনি ইউরিয়ার সঙ্গে কীটনাশক ও উল্কা মিশিয়ে ধানখেতে ছড়িয়েছেন। এতে তাঁর বিঘাপ্রতি প্রায় ৪০০ টাকা খরচ হয়েছে। কীটনাশক দেওয়ার এক সপ্তাহ কেটে গেলেও ব্লাস্ট রোগ কমেনি বরং আরও বেশি ধান গাছ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

একই গ্রামের নূর মোহাম্মদ জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের বোরো চাষ করেছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই ধানে শিষ আসবে, অথচ এখনই ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধানগাছ সাদা হয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো লাভ পাচ্ছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ধান তো নয়ই, বিচালি পাওয়াও কঠিন হয়ে যাবে। তাতে দোকানে সারকীটনাশকের বকেয়া পরিশোধ করা যাবে না।

দেবনগর এলাকার তাপস দাস, ছাতিয়ানতলার আনন্দ দাস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানখেত সাদা হয়ে গেছে। কোনো ওষুধেই কাজ হচ্ছে না। এ ধান দিয়ে আমাদের ১২ মাস চলে, কিন্তু এবার এ রোগের কারণে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে বলে মনে হচ্ছে।’

তুজুলপুরের মোখলেছুর রহমান ও মাধবকাটির গোপাল দাস জানান, ‘আমাদের ধান খেতে অন্যান্য বছর ধান গাছের পাতায় ব্লাস্ট রোগ দেখা গেলেও তা মারাত্মক আকার ধারণ করার আগেই প্রতিকার পেয়েছি। কিন্তু এবার কোনো কিছুতেই প্রতিকার পাচ্ছি না।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা খালেদ সাইফুল্লাহ জানান, দিনে গরম ও রাতে ঠান্ডা পড়ার কারণেই বোরো ধানে বিশেষ করে ব্রি-২৮ জাতের ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ ঘটছে। এ রোগ শুধুমাত্র পাতায় হলে ১০-১৫ ভাগ উৎপাদন কমে যাবে। আর শিষে হলে ধানের উৎপাদন চার ভাগের একভাগে দাঁড়াবে।’ তিনি সপ্তাহের পর ধানগাছে নাটিভা অথবা ফিনিয়া ব্যবহারের পরামর্শ দেন। আবহাওয়া অনুকূলে আসলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত