Ajker Patrika

যাঁদের জন্য প্রকল্প তাঁরাই বাদ

সাইফুল আরিফ জুয়েল, মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা)
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ৫৩
যাঁদের জন্য প্রকল্প তাঁরাই বাদ

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে অতিদরিদ্রদের কর্মসৃজন কর্মসূচিতে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই প্রকল্পের আওতায় দৈনিক হাজিরায় অতিদরিদ্রদের মাটি কেটে গ্রামীণ রাস্তা ঘাট মেরামত করার কথা। এতে দরিদ্ররা কিছুটা আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং গ্রামীণ সড়কও মেরামত হবে।

কিন্তু প্রকল্পের যাঁরা দায়িত্বে তাঁরা দরিদ্রদের বাদ দিয়ে ‘মাটি কাটার দল’ ভাড়ায় নিয়ে করা হচ্ছে রাস্তা মেরামত। ফলে যাঁদের জন্য এ প্রকল্প তাঁরাই বাদ থাকছেন। বিফলে যাচ্ছে প্রকল্পের উদ্দেশ্য। বঞ্চিত হচ্ছেন সত্যিকারের উপকারভোগীরা। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, প্রকল্পে অনিয়ম হলে বিল বন্ধ করে দেওয়া হবে।

সরেজমিন উপজেলার সুয়াইর ইউনিয়নের জনদপুর পশ্চিমের নতুন মসজিদ হইতে জনদপুর রুবেল মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতে এমন অনিয়ম দেখা গেছে। এ সময় রাস্তা মেরামতের স্থানে কোনো সাইনবোর্ডও দেখা যায়নি। এ সময় পার্শ্ববর্তী পাবই গ্রামের ১০-১২ জনকে ওই রাস্তায় মাটি কাটতে দেখো যায়। তাঁদের মধ্যে ওসমান গনি, জহিরুল ইসলাম ও আসাদ মিয়া জানান, আমার এ রাস্তায় চুক্তি ভিত্তিক মাটি কাটছি। আমরা ১৫ জন মিলে একটি দল গঠন করে শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় মাটি কাটি। প্রতি হাজার ফিট মাটি ৪ হাজার টাকা দরে এখানে কাটছি। যদিও আমাদের দাবি পাঁচ হাজার টাকা ছিল। কিন্তু মেম্বার চার হাজারের বেশি দিতে চাচ্ছেন না। পুরো রাস্তা মেরামত প্রায় শেষের দিকে। আর ২-৩ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় (পিআইও) সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে সাত ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টিতে গ্রামীণ অবকাঠামো মেরামতের জন্য মোট ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এসব প্রকল্পের বরাদ্দ এক কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এরমধ্যে ইউনিয়নের জনদপুর পশ্চিমের নতুন মসজিদ হইতে জনদপুর রুবেল মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতে বরাদ্দ ৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইকুল মিয়া। এতে ৪৩ জন অতিদরিদ্র লোক ৪০ দিন কাজ করবেন। তাঁরা প্রতিদিন জনপ্রতি ৪০০ টাকা করে পাবেন। কাজের স্বচ্ছতার জন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিজ নিজ মোবাইল নম্বরে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

কিন্তু ভুয়া উপকারভোগীর তালিকা বানিয়ে নিজের লোকদের নামে মোবাইল সিম তুলে অন্য এলাকার লোকজন দিয়ে মাটি কেটে অতিদরিদ্রদের টাকা হাতিয়ে নিতে চাইছেন প্রকল্প সভাপতি।

এলাকাবাসী জানায়, এই রাস্তা মেরামতে অনিয়ম হয়েছে। মানুষের চলাচলের কথা চিন্তা করে এখানে মাটি কাটানো হয়নি। যেনতেনভাবে মাটি ফেলে কাজ শেষ করে মেরামত করা হয়েছে। তারপর এই রাস্তায় কত টাকার মাটি কাটার কথা, এসব জানার উপায় নেই। কারণ কাজের পাশে কোনো সাইনবোর্ড নেই।

জনদপুর গ্রামের কাজী আলম জানায়, সড়কে মাটি ফেলা হচ্ছে যেনতেন ভাবে। বৃষ্টি হলেই এই মাটি ধুয়ে যাবে। পাশে ঢালু করে মাটি ফেলার দরকার ছিল। মেরামতের বরাদ্দের পরিমাণ শুনে তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন। তার দাবি এই সড়কে খুব বেশি হলে এক লাখ টাকার মাটি কাটা হয়েছে।

এ বিষয়ে সুয়াইর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান সেলিম বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে অনিয়মের বিষয়টি আমি দেখব।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান বলেন, এই প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়ে শুনেছি। সঠিক নিয়মে কাজ না করলে বিল পাবে না। এর আগেও যারা এমনটা করেছে তাদের বিল দেওয়া হয়নি। গ্রামে কাজের জন্য অতিদরিদ্র লোক পাওয়া যায় না প্রকল্প সভাপতির এমন বক্তব্য মানতে নারাজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাব্বির আহম্মেদ আকুঞ্জি। তিনি বলেন, অনিয়মের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

কোটি টাকা ‘ভর্তুকি’র জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশ যা পেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত