Ajker Patrika

প্রাণঘাতী যত ঘূর্ণিঝড়

আপডেট : ১৩ মে ২০২৩, ১৫: ৩৯
প্রাণঘাতী যত ঘূর্ণিঝড়

ঘূর্ণিঝড় প্রলয়ংকরী দুর্যোগ। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই দুর্যোগ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিবারই জানমালের ক্ষতিসাধন করছে; কখনো তার ব্যপ্তি ব্যাপক, কখনো খুব কম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে ঘূর্ণিঝড় বন্ধ বা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু এর ছোবল থেকে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।  

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে নানা সময়ে, বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝড়ে প্রাণক্ষয় কমেছে। কিন্তু তার আগে ১৯৭০ সালে ভোলার উপকূলে আঘাত হানা পৃথিবীর সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়সহ কয়েক শতকে বহু ঘূর্ণিঝড়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানিসহ অপরিসীম ক্ষতি হয়েছে।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা যখন কক্সবাজার উপকূলের দিকে প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসছে, সেই সময়ে চলুন দেখে নিই কয়েক শতকে এই বঙ্গভূমিতে আঘাত হানা প্রলয়ংকরী ঝড়গুলোতে প্রাণহানির চিত্র। অতি আদিকালের সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও মুঘল যুগ থেকে ঝড়গুলোতে প্রাণহানির কিছু কিছু চিত্র পাওয়া যায়।

  • ১৫৫৮ সালে সম্রাট আকবরের রাজত্বের ঊষালগ্নে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপে এক ভয়ংকর ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস হয়। পাঁচ ঘণ্টার ঘূর্ণিঝড়ে দুই লাখের বেশি মানুষের সলিলসমাধি ঘটে।
  • ১৫৮৪ সালে ঘূর্ণিঝড়ে বাকেরগঞ্জে (বরিশাল অঞ্চল) প্রাণহানি ২ লাখে পৌঁছায়। তখন জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪ লাখ। মুঘল সুবাদার ছিলেন শাহবাজ খান (১৫৮৪-১৫৮৭)।
  • ১৭৬৭ সালে বরিশালের বাকেরগঞ্জে ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায় ৩০ হাজার মানুষ।
  • ১৮২২ সালের জুন মাসে ঘূর্ণিঝড়ে বরিশাল, হাতিয়া ও নোয়াখালীতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের প্রাণ যায়।
  • ১৮৩১ সালে বালেশ্বর-উড়িষ্যা উপকূল ঘেঁষে চলে যাওয়া তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে বরিশাল উপকূলের ২২ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
  • ১৮৭৬ সালের ২৯ অক্টোবর বরিশালের বাকেরগঞ্জে মেঘনা নদীর মোহনার কাছ দিয়ে তীব্র ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার। ঝড়ের প্রভাবে ১২ মিটারের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় উপকূলীয় এলাকা। চট্টগ্রাম, বরিশাল ও নোয়াখালীর উপকূলে তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়া ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
  • ১৮৯৭ সালের ২৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম অঞ্চলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড়, যাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কুতুবদিয়া দ্বীপ। ঝড়ে প্রাণ যায় পৌনে ২ লাখ মানুষের।
  • ১৯০৯ সালের ১৬ অক্টোবর খুলনা অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ে মৃত্যু হয় ৬৯৮ জনের।
  • ১৯৪৮ সালে ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায় চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলে ১ হাজার ২০০ অধিবাসী।
  • ১৯৫৮ সালে বরিশাল ও নোয়াখালীতে ঝড়ে মারা যায় ৮৭০ জন।
  • ১৯৬০ সালের অক্টোবরে ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার গতির বাতাস নিয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, ফরিদপুর, পটুয়াখালী ও পূর্ব মেঘনা মোহনায়। ঝড়ের প্রভাবে ৪.৫ থেকে ৬.১ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। মারা পড়ে উপকূলের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা।
  • ১৯৬১ সালের ৯ মে তীব্র ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে বাগেরহাট ও খুলনা অঞ্চলে। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬১ কিলোমিটার। প্রায় সাড়ে ১১ হাজার মানুষ মারা যায় সেই ঝড়ে।
  • ১৯৬২ সালে ২৬ অক্টোবর ফেনীতে তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে হাজারখানেক মানুষের মৃত্যু হয়।
  • ১৯৬৩ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার এবং সন্দ্বীপ, কুতুবদিয়া, হাতিয়া ও মহেশখালী উপকূলীয় অঞ্চল। সেই ঝড়ে প্রাণ হারায় ১১ হাজার ৫২০ জন।
  • ১৯৬৫ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ে বারিশাল ও বাকেরগঞ্জে প্রাণ যায় ১৯ হাজার ২৭৯ জনের। সে বছরের ডিসেম্বরে আরেক ঝড়ে কক্সবাজারে মৃত্যু হয় ৮৭৩ জনের।
  • ১৯৬৬ সালের অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে সন্দ্বীপ, বাকেরগঞ্জ, খুলনা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লায়; ৮৫০ জনের মৃত্যু হয় সেই ঝড়ে।
  • ১৯৭০ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ংকরী ‘গ্রেট ভোলা সাইক্লোন’। ওই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২২ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম, বরগুনা, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী, ভোলার চর বোরহানুদ্দিনের উত্তর পাশ ও চর তজুমুদ্দিন এবং নোয়াখালীর মাইজদি ও হরিণঘাটার দক্ষিণ পাশ সেই ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাণ হারায় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ। ৪ লাখের মতো বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • ১৯৮৫ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয় সন্দ্বীপ, হাতিয়া ও উড়িরচর এলাকা; সেই ঝড়ে প্রাণ হারায় উপকূলের ১১ হাজার ৬৯ জন বাসিন্দা।
  • ১৯৮৮ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায় যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর এবং বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬২ কিলোমিটার। সেই ঘূর্ণিঝড়ে ৫ হাজার ৭০৮ জনের মৃত্যু হয়।
  • ১৯৯১ সালের ৩০ এপ্রিল বয়ে যায় আরেক প্রলয়ংকরী ঝড়। ভারত মহাসাগরে উৎপত্তি ছিল সেই ঝড়ের, পরে তা ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার গতির ঘূর্ণিবায়ু নিয়ে আছড়ে পড়ে চট্টগ্রাম ও বরিশালের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। প্রায় দেড় লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে ওই ঝড়ে।
  • ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে বিধ্বস্ত হয় দেশের দক্ষিণ উপকূল। উত্তর ভারত মহাসাগরের আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে সৃষ্ট এ ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ থেকে ৩০৫ কিলোমিটার। এতে ৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়।
  • ২০০৯ সালের ২১ মে ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড় আইলা, যার অবস্থান ছিল কলকাতা থেকে ৯৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে। চার দিনের মাথায় ২৫ মে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাংশে আঘাত হানে এই ঝড়। সেই ঘূর্ণিঝড় ভারতের ১৪৯ জন ও বাংলাদেশের ১৯৩ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়।
  • ২০১৩ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’-এ প্রাণ হারায় ১৭ জন।
  • ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই ঘূর্ণিঝড় কোমেনে দেশের চার জেলায় অন্তত চারজন মারা যায়। ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগের ঝোড়ো হাওয়া নিয়ে সন্দ্বীপের কাছ দিয়ে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে সেই ঝড়।
  • ২০১৬ সালের ২১ মে পূর্ণিমায় ভরা জোয়ারে আঘাত হানে রোয়ানু। সেই ঝড়ে লাখখানেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চট্টগ্রামে মৃত্যু হয় ২৪ জনের।
  • ২০১৯ সালের ৩ মে ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানার পর বাংলাদেশে প্রবেশ করে, কেড়ে নেয় অন্তত ৯ জনের প্রাণ। তবে ফসলের ক্ষতি ছিল অনেক বেশি।
  • একই বছরের ৯ নভেম্বর অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানার পর প্রবেশ করে বাংলাদেশে। সেই ঝড়ে মৃত্যু হয় অন্তত আটজনের, ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনেরও৷
  • ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’। ২১ মে এটি অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় রূপে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে। পরে রাতে এই ঝড় প্রবেশ করে বাংলাদেশে; আট জেলায় মারা যায় অন্তত ১৫ জন।
  • ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর মাঝারি শক্তির ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আঘাত হানে উপকূলে। ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগের এই ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে গাছ ও দেয়ালচাপায় অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে ফসলেরও ক্ষতি হয়।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খনিজের সন্ধানে গভীর সমুদ্রে খনন, দুর্লভ জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তির শঙ্কা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গভীর সমুদ্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ থাকতে পারে এই সম্ভাবনা থেকে ক্রমেই সমুদ্রের গভীরে খনন বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত
গভীর সমুদ্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ থাকতে পারে এই সম্ভাবনা থেকে ক্রমেই সমুদ্রের গভীরে খনন বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত

খনিজের খোঁজে সমুদ্রের গভীর থেকে গভীরতর তলদেশে ছুটে বেড়াচ্ছে হাজারো আধুনিক যন্ত্রপাতি। এদিকে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, খনিজ উত্তোলনে ব্যবহৃত এসব যন্ত্রপাতি সমুদ্রতলের জীববৈচিত্র্যের বেশ বড় রকমের ক্ষতি সাধন করছে। এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সায়েন্স জার্নাল ন্যাচার ইকোলজি অ্যান্ড এভুলেশনে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।

প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দূরবর্তী অঞ্চলের সমুদ্রতলে ৪ হাজারের বেশি প্রাণী চিহ্নিত করেছেন গবেষকেরা, যার ৯০ শতাংশই নতুন প্রজাতি। কিন্তু গবেষকেরা দেখেছেন, যেসব এলাকায় এসব যন্ত্রপাতির কাজ চলছে, সেসব এলাকায় অন্যান্য এলাকার চেয়ে প্রাণীর সংখ্যা ৩৭ শতাংশ কমে গেছে।

‘গ্রিন ইলেকট্রনিকস’ তৈরিতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ বিপুল পরিমাণে গভীর সমুদ্রে থাকতে পারে এই সম্ভাবনা থেকে ক্রমেই সমুদ্রের গভীরে খনন বাড়ছে। তবে আন্তর্জাতিক জলসীমায় গভীর সমুদ্র খনন অত্যন্ত বিতর্কিত এবং পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে আরও তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত এটি অনুনমোদিত।

ডিপ-সি মাইনিং কোম্পানি ‘দ্য মেটালস কোম্পানি’র উদ্যোগে লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টার এবং গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা পরিচালনা করেন।

সমুদ্রতলের ওপর ৮০ কিলোমিটার জুড়ে চালানো পরীক্ষামূলক খননকাজের দুই বছর আগে এবং দুই মাস পরে জীববৈচিত্র্যের তুলনা করেন গবেষক দলটি।

গভীর সমুদ্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ থাকতে পারে এই সম্ভাবনা থেকে ক্রমেই সমুদ্রের গভীরে খনন বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত
গভীর সমুদ্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ থাকতে পারে এই সম্ভাবনা থেকে ক্রমেই সমুদ্রের গভীরে খনন বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত

তারা বিশেষভাবে ০.৩ মিলিমিটার থেকে ২ সেন্টিমিটার আকারের কীট, সি স্পাইডার, শামুক ও ক্ল্যামের মতো প্রাণীগুলোর দিকে নজর দেন।

গবেষণায় দেখা যায়, যানবাহনের তৈরি করা খননের দাগে প্রাণীর সংখ্যা ৩৭ শতাংশ কমে যায় এবং প্রজাতির বৈচিত্র্য ৩২ শতাংশ হ্রাস পায়।

ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম এবং ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের পিএইচডি গবেষক প্রধান গবেষক ইভা স্টুয়ার্ট বলেন, ‘একটা মেশিন প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার পলিমাটি সরিয়ে দেয়। এই স্তরেই বেশিরভাগ প্রাণী থাকে। তাই আপনি যদি সেই পলি সরিয়ে ফেলেন, অবশ্যই তার সঙ্গে ওই প্রাণীরাও সরিয়ে যাচ্ছে।’

ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টারের ড. গুয়াদালুপ ব্রিবিয়েসকা-কনত্রেরাস বলেন, ‘সরাসরি মেশিনের আঘাতে মারা না-ও যেতে পারে, কিন্তু খনন কার্যক্রমের দূষণ ধীরে ধীরে অপেক্ষাকৃত কম সহনশীল কিছু প্রজাতিকে মেরে ফেলতে পারে। কিছু প্রাণী হয়তো সরে যেতে পারে কিন্তু পরে তারা ওই স্থানে আবার ফিরে আসবে কি না সন্দেহ।’

সমুদ্রের গভীরে খনন বাড়তে থাকায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দুর্লভ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী। ছবি: ওসেন সার্ভে
সমুদ্রের গভীরে খনন বাড়তে থাকায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দুর্লভ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী। ছবি: ওসেন সার্ভে

তবে খনন এলাকার আশপাশের অংশগুলোতে প্রাণীর সংখ্যা কমেনি বলে জানান তিনি।

ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষক ড. অ্যাড্রিয়ান গ্লোভার বিবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমরা হয়তো আরও বেশি প্রভাব আশা করেছিলাম, কিন্তু তেমন কিছু দেখা যায়নি। বরং শুধু কোন প্রজাতি অন্যদের তুলনায় বেশি আধিপত্য বিস্তার করছে সেটিতে সামান্য পরিবর্তন দেখা গেছে।’

এদিকে এ গবেষণার তথ্য দেখে দ্য মেটালস কোম্পানির একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা এই তথ্য দেখে উৎসাহিত। বছরের পর বছর ধরে কর্মীরা সতর্ক করে আসছিলেন যে আমাদের কার্যক্রমের প্রভাব খনির এলাকা থেকে হাজার কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু তথ্য বলছে, জীববৈচিত্র্যের ওপর যে কোনো প্রভাব শুধুমাত্র সরাসরি খনন করা এলাকাতেই সীমাবদ্ধ।’

তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি খনি কোম্পানিগুলোর জন্য ভালো খবর নয়।

গভীর সমুদ্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ থাকতে পারে এই সম্ভাবনা থেকে ক্রমেই সমুদ্রের গভীরে খনন বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত
গভীর সমুদ্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ থাকতে পারে এই সম্ভাবনা থেকে ক্রমেই সমুদ্রের গভীরে খনন বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত

থিঙ্কট্যাঙ্ক চাথাম হাউসের এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. প্যাট্রিক শ্রোডার বলেন, ‘আমার মনে হয়, গবেষণাটি দেখায় যে বর্তমান খনন প্রযুক্তিগুলো এতটাই ক্ষতিকর যে বৃহৎ পরিসরে বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। এগুলো ছিল পরীক্ষামূলক খনন, আর তাতেই প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। যদি এটি বড় পরিসরে করা হয়, ক্ষতি আরও ভয়াবহ হবে।’

গভীর সমুদ্র খনন নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই তীব্র বিতর্ক চলছে। এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে এক কঠিন দোটানা।

সম্প্রতি প্রশান্ত মহাসাগরের ক্ল্যারিয়ন-ক্লিপারটন জোনে প্রায় ৬ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার জুড়ে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। বিস্তৃত এই এলাকায় রয়েছে নিকেল, কোবল্ট ও তামা সমৃদ্ধ প্রায় ২১ বিলিয়ন টন বহুধাতব নডিউল।

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তির জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলোর প্রয়োজন। সোলার প্যানেল, উইন্ড টারবাইন এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি সব ক্ষেত্রেই এগুলো অপরিহার্য উপাদান।

গভীর সমুদ্রে খনন বন্ধ করতে পরিবেশ রক্ষাকর্মীরা নানাভাবে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। ছবি: গ্রিন পিস।
গভীর সমুদ্রে খনন বন্ধ করতে পরিবেশ রক্ষাকর্মীরা নানাভাবে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। ছবি: গ্রিন পিস।

২০৪০ সালের মধ্যে এসব খনিজের চাহিদা অন্তত দ্বিগুণ হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইএ)।

অনেক বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদ এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, এই খনিজগুলো কোথাও না কোথাও থেকে সংগ্রহ করতেই হবে। গভীর সমুদ্র খনন প্রকৃতির ওপর অকল্পনীয় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

গবেষকেরা বলছেন, গভীর সমুদ্রের অজানা জীববৈচিত্র্য পুরোপুরি অন্বেষণ করার আগেই সেগুলো বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে। সাগরগুলো গ্রহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, অথচ ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে সেগুলো আগেই গুরুতর ঝুঁকিতে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক জলসীমায় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সিবেড অথরিটি (আইএসএ) এখনো বাণিজ্যিক খননের অনুমোদন না দিলেও অনুসন্ধানের জন্য ইতিমধ্যে ৩১টি লাইসেন্স দিয়েছে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ মোট ৩৭টি দেশ গভীর সমুদ্র খননে সাময়িক নিষেধাজ্ঞার পক্ষে রয়েছে। এই সপ্তাহে নরওয়ে আর্কটিকসহ নিজেদের জলসীমায় খনন পরিকল্পনা স্থগিত করেছে।

তবে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক খনন প্রকল্পগুলো দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত এপ্রিল মাসে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় অস্ত্র তৈরিতে প্রয়োজনীয় খনিজের সরবরাহ নিশ্চিত করতে।

যদি সিবেড অথরিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে খনন পরিবেশের জন্য অতিমাত্রায় ক্ষতিকর, তবে কোম্পানিগুলোকে কম ক্ষতিকর পদ্ধতি আবিষ্কারে কাজ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে শীর্ষে লাহোর, ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ১১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে রাজধানী শহর ঢাকা। বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় প্রায়ই দশের মধ্যে অবস্থান করছে বাংলাদেশের রাজধানী। এর মধ্যে আজ বুধবার তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে শহরটি।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ১৯৭। যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

আজ বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে পাকিস্তানের লাহোর। শহরটির বায়ুমান ২৪৮, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো ভারতের কলকাতা (২৪৭), ভিয়েতনামের হ্যানয় (২৩৬), পাকিস্তানের করাচি (২২৮) ও ভারতের দিল্লি (২১০)।

আজ ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি—ইস্টার্ন হাউজিং, দক্ষিণ পল্লবী, বেচারাম দেউরি, গোড়ান, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, কল্যাণপুর, পেয়ারাবাগ রেললাইন, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, শান্তা ফোরাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম বিল্ডিং।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলা এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার তাপমাত্রা আজ ১৬ ডিগ্রির ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা আজ সোমবার সকালে ছিল ১৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯১ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১২ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ৩০ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বেচারাম দেউরির বাতাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সংকটে ভুগছে রাজধানী শহর ঢাকা। বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় প্রায়ই দশের মধ্যে অবস্থান করছে শহরটি। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার তালিকায় আছে দ্বিতীয় স্থানে।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের আজ সকাল ৯টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ২৫০, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি—বেচারাম দেউরি, গোড়ান, কল্যাণপুর, পল্লবী দক্ষিণ, ইস্টার্ন হাউজিং, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, শান্তা ফোরাম, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, পেয়ারাবাগ রেল লাইন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম বিল্ডিং।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষে থাকা ভারতের কলকাতার বায়ুমান আজ ২৬২, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের বাতাসের নির্দেশক। শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো মিসরের কায়রো (২৩৯), ভারতের দিল্লি (২৩২) ও কুয়েতের কুয়েত সিটি (১৯৮)।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত